বাংলাদেশে করোনার ১৪০ ভ্যারিয়েন্ট

Slider জাতীয়


সীমান্ত এলাকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এসব জেলায় অতি সংক্রামক করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সীমান্ত জেলা চাঁপাই নবাবগঞ্জে ইতিমধ্যে সাতদিনের বিশেষ লকডাউন চলছে। পাশের আরো ৭ জেলায় বিশেষ লকডাউন ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। এই সাত জেলায় লকডাউন দিতে মন্ত্রণালয় সুপারিশ দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগে বিশেষজ্ঞ কমিটি এ সাত জেলায় লকডাউন দিতে অধিদপ্তরে সুপারিশ করে। সংক্রমণ বাড়ায় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের সাতজনের বাড়ি চাঁপাই নবাবগঞ্জে।

ওদিকে দেশে এ পর্যন্ত ভারতসহ ৪ দেশের ১৪০টি করোনার ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। ভাইরাসের ২৬৩টি সিকোয়েন্স করে এই তথ্য মিলেছে। এতে ২৭টি ভ্যারিয়েন্ট বৃটেনের, ৮৫টি সাউথ আফ্রিকান, ৫টি নাইজেরিয়ান এবং ২৩টি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয় বলে জানিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, দেশে আবারো করোনার শনাক্তের হার বাড়ছে। বিশেষ করে অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে দ্রুত। এজন্য সীমান্তবর্তী সাতটি জেলাকে লকডাউনের আওতায় আনার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গতকাল অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেছেন, অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। তিনি বলেন, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে যেখানে বর্ডার আছে, পাসপোর্ট নিয়ে যারা আসেন তাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে সরকারের তরফ থেকে। সীমান্তবর্তী স্থানগুলোতে অবৈধভাবেও অনেকে আসে। আমাদের চারদিকেই ভারত। অনেকভাবে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। কিছু কিছু স্থানে এমনও আছে শুধুমাত্র নৌকার মাধ্যমেও যোগাযোগ সম্ভব হয়। যেমন চাঁপাই নবাবগঞ্জ। যেসব জেলায় লোকজন অবৈধভাবে এসেছে, তাদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে।
ভার্চ্যুয়াল ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক রোবেদ আমিন আরো বলেন, ঈদের সময় অনেকে বাড়ি গিয়েছিলেন। তারা ঢাকায় ও অন্যান্য স্থানে ফেরত এসেছেন। তাদের মাধ্যমেও সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে। ইতিমধ্যে সীমান্তবর্তী সাতটি জেলাকে লকডাউনের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে। জেলাগুলো হলো- নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরা। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে।
ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর)-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, যত রোগী শনাক্ত হবে, সংক্রমণ হবে, নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাবে। সুতরাং ভ্যারিয়েন্ট যা-ই হোক না কেন, আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যার যখন সময় আসবে, তাকে টিকা নিতে হবে। এভাবে আমরা সংক্রমণ কমাতে পারবো। করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবো।
তিনি আরো বলেন, এটা আমের মৌসুম। আম পচনশীলও। অনেক পরিবার আমের বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল। তাই এই মৌসুমে আম কেনা-বেচা করতে হবে। সেক্ষেত্রে পরামর্শ থাকবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাগান থেকে আম কেনা-বেচা নিশ্চিত করতে হবে। বাজারজাত করার ক্ষেত্রে স্বল্প পরিসরে খোলা জায়গায় বিক্রি করতে হবে। অনলাইন শপিংয়ের মাধ্যমে আম কেনাবেচা নিশ্চিত করতে হবে।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আগেও ধরা পড়েছে, আতঙ্কের কিছু নেই: এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক মো. রোবেদ আমিন আরো জানান, মিউকরমাইকোসিস নতুন কোনো রোগ নয়। এটি বাংলাদেশে এবং আশেপাশের দেশে আগেও ছিল, এখনো আছে। আমাদের মিউকরমাইকোসিস নিয়ে অনেক বেশি ভয়ের কোনো কারণ নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র।
রোবেদ আমিন বলেন, মিউকরমাইকোসিস নিয়ে সমপ্রতি খুব আলোচনা হচ্ছে। কালো ছত্রাক বা বিভিন্ন রঙের কথা বলা হচ্ছে। এটি দেখতে আসলে কালো না, মূলত রঙহীন, অনেক ক্ষেত্রে ধূসর। আরো অনেক ফাঙ্গাস আছে যা ব্ল্যাক নামেই থাকতে পারে। মিউকরমাইকোসিস শরীরের বিভিন্ন স্থানে হতে পারে। এটি নতুন কোনো রোগ নয়। এটি বাংলাদেশে এবং আশেপাশের দেশে আগেও ছিল, এখনো আছে। আমাদের পরিবেশেই আছে। সবজি পচে গেলে, খাদ্য পচে গেলে ফাঙ্গাস হতে পারে। হাসপাতালের বেডে হতে পারে। অক্সিজেন সাপ্লাইস সিস্টেমে হতে পারে। যেসব ওষুধ আছে, সেগুলোর বোতলেও হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের মিউকরমাইকোসিস নিয়ে অনেক বেশি ভয়ের কোনো কারণ নেই। ভারতীয় অংশে আমরা দেখেছি এই ইস্যুতে সেখানকার পরিবেশ ও হাসপাতালে যে অবস্থা ছিল, তাদের রোগীদের সেবায় স্টেরয়েড ব্যবহার, অক্সিজেন সাপ্লাই দেয়ার ক্ষেত্রে যে তারতম্য সেসব বিভিন্ন কারণে ভারতে এই পরিমাণ ছড়িয়েছে। বাংলাদেশে কিছু কিছু রোগী আগেও ধরা পড়েছে, এখনো পড়ছে। আমরা মিউকরমাইকোসিসে মাত্র একটা রোগী হারিয়েছি। অন্যান্য যারা তারা চিকিৎসাধীন এবং তাদের অবস্থা তুলনামূলক ভালো।
মিউকরমাইকোসিসকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। যেসব রোগী ডায়াবেটিস, ক্যান্সার বিশেষত ব্ল্যাড ক্যান্সারে আক্রান্ত, যারা কেমো পাচ্ছেন, দীর্ঘ মেয়াদি স্টেরয়েড পাচ্ছেন এসব রোগীর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। আশেপাশে যতই মিউকরমাইকোসিস থাকুক, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকলে আক্রান্ত করতে পারবে না। শুধু মাস্ক পরলেই হবে না, সেটা যেন ঠিক মতো পরা হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যবহার শেষে যেন ঠিক জায়গায় ফেলে দেয়া হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে- বলেন রোবেদ আমিন।
বেড়েছে শনাক্তের হার, মৃত্যু আরো ৩৪ জনের: এদিকে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৪৪ জন। আগের দিন শনাক্তের হার ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ থাকলেও ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তা বেড়ে হয়েছে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হওয়া ১ হাজার ৪৪৪ জনকে নিয়ে দেশে সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত মোট শনাক্ত হলেন ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৮৩০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়ে আরো ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ৩৪ জনকে নিয়ে দেশে করোনায় এখন পর্যন্ত সরকারি হিসাবে মারা গেলেন ১২ হাজার ৪৮৩ জন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৩৯৭ জন। দেশে করোনা থেকে মোট সুস্থ হলেন ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৫ জন। দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৪৮ শতাংশ আর মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা সংগৃহীত হয়েছে ১৪ হাজার ৪১৮টি। নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ২৭৭টি। দেশে এখন পর্যন্ত করোনার মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫৯ লাখ ২৯ হাজার ৩৩৫টি। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা হয়েছে ৪৩ লাখ ২৯ হাজার ৫১৮টি, আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা হয়েছে ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৮১৭টি। দেশে বর্তমানে ৫০২টি পরীক্ষাগারে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এরমধ্যে আরটি-পিসিআরের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হচ্ছে ১২৯টি পরীক্ষাগারে, জিন এক্সপার্ট মেশিনের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হচ্ছে ৪৩টি পরীক্ষাগারে এবং র‌্যাপিড অ্যান্টিজেনের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হচ্ছে ৩৩০টি পরীক্ষাগারে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৩৪ জনের মধ্যে পুরুষ ২৩ জন আর নারী ১১ জন। করোনা আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত পুরুষ মারা গেলেন ৯ হাজার ৮৮ জন এবং নারী ৩ হাজার ৪৯৫ জন। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬০ বছরের উপরে ২১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৫ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৫ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৩ জন আর ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন আছেন। এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১২ জন, রাজশাহী বিভাগের ৩ জন, খুলনা বিভাগের ৬ জন, সিলেট ও রংপুর বিভাগের ২ জন করে আর বরিশাল বিভাগের আছেন ১ জন। এই ৩৪ জনের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ২১ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ১০ জন এবং বাসায় ৩ জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *