অবরোধের ৩০ দিনে নিহত ৬০, ৭০০ মামলা আসামি দেড় লাখ, গ্রেপ্তার ১৭ হাজার

Slider জাতীয়

gazipur fire-raqibe

ঢাকা: টানা অবরোধ ও দফায় দফায় হরতালের মধ্যদিয়ে মাস পেরিয়েছে ২০ দলের আন্দোলন। ৫ই জানুয়ারি শুরু হওয়া এ আন্দোলনে প্রতিদিনই ঘটছে সহিংস ঘটনা। রাজপথে পুড়ে কয়লা হচ্ছে মানুষ। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর গুলিতে নিহত হচ্ছে একের পর এক বিরোধী নেতাকর্মী। ইতিমধ্যে সারা দেশে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নিহত হয়েছে বিরোধী নেতাকর্মীসহ ৬০ জন। যাদের বেশির ভাগই সাধারণ মানুষ। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে অন্তত সহস্রাধিক যানবাহন। রাজপথের পাশাপাশি রেলপথ-নৌপথেও ঘটছে নাশকতা। এসব ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়াসহ বিরোধী জোটের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই দায়ের হচ্ছে একের পর এক মামলা। খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে দায়ের হয়েছে নতুন ৫টি মামলা। ইতিমধ্যে সারা দেশে দায়ের হয়েছে অন্তত ৭০০ মামলা। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে দেড় লক্ষাধিক। গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিরোধী জোটের অন্তত ১৭ হাজার নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। তবে ২০ দলের দাবি গ্রেপ্তারের সংখ্যা ২৫ হাজারের মতো।

হতাহতের সংখ্যা: ৫ই জানুয়ারি থেকে চলমান অবরোধ-হরতালকে কেন্দ্র করে সারা দেশে নিহত হয়েছে ৬০ জন। এর মধ্যে দলীয় কর্মী ১৭ জন ও সাধারণ মানুষ ৪৩ জন। ককটেল ও পেট্রল বোমায় নিহত হয়েছে ৩৪ জন, সংঘর্ষ ও হামলায় ১০ জন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ১৪ জন ও অন্যান্য ২ জন। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ, পেট্রলবোমা হামলা ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় আহত হয়েছেন বিরোধী দলের নেতাকর্মীসহ অন্তত কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতারের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন অন্তত কয়েক শ’ মানুষ।
মামলা ও গ্রেপ্তার: চলতি বছরের ১ থেকে ১৬ই জানুয়ারি পর্যন্ত হামলা-ভাঙচুর, নৈরাজ্য-অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়াসহ নানা অভিযোগে সারা দেশে দায়ের হয়েছে অন্তত ৩০০ মামলা। এসব মামলায় আসামি করা হয় ৬০ হাজারের বেশি নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে অন্তত ৭০০০ নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। যদিও সরকারি হিসাবে আন্দোলনের প্রথম ১৫ দিনে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৭০১৫। তবে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের তরফে গ্রেপ্তারের এ সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি বলে দাবি করা হয়। এদিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ১৭ই জানুয়ারি থেকে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত দলীয় জোটের ৯৫৮৫ জন নেতাকর্মী-সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। এর মধ্যে- ১৭ই জানুয়ারি ৩৯৫ জন, ১৮ই জানুয়ারি ৫৮০ জন, ১৯শে জানুয়ারি ৪২০ জন, ২০শে জানুয়ারি ৪০০ জন, ২১শে জানুয়ারি ৭০০ জন, ২২ শে জানুয়ারি ৭০০ জন, ২৩শে জানুয়ারি ৫৮০ জন, ২৪শে জানুয়ারি ৫৫০ জন, ২৫শে জানুয়ারি ৫৪৫ জন, ২৬শে জানুয়ারি ৫৫০ জন, ২৭শে জানুয়ারি ৫২০ জন, ২৯শে জানুয়ারি ৬০০ জন, ৩০শে জানুয়ারি ৪৮০ জন, ৩১শে জানুয়ারি ৫৮০ জন, ১লা ফেব্রুয়ারি ৬০০ জন, ২রা ফেব্রুয়ারি ৫০৫ জন, ৩রা ফেব্রুয়ারি ৪৯০ জন ও ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ৩৮০ জনকে গ্রেপ্তার করে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। তবে বিএনপি-জামায়াতের কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, ১৭ই জানুয়ারির পর থেকে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি। বিএনপিপন্থি কয়েকজন আইনজীবী জানান, দেশের প্রায় প্রতিটি উপজেলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের প্রতিদিনই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তার অনেক তথ্যই গণমাধ্যমে পৌঁছে না। আবার অনেক তথ্য প্রকাশিত হয় না। এদিকে একই সময়ে রাজধানী ঢাকা, যশোর, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ঝালকাঠি, জামালপুর, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বগুড়া, রংপুর, গাইবান্ধাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দায়ের করা হচ্ছে অন্তত ৪০০ বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে। চলমান আন্দোলনে মামলা ও গ্রেপ্তারের সিডর বয়ে গেছে দেশের কয়েকটি জেলায়। বিশেষ করে যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারে নির্বিচারে গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। কোন কোন দিন এসব এক একটি জেলা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭০-১২০ জন পর্যন্ত। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ দলের স্থায়ী কমিটির, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব ও বিভিন্ন জেলা বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের চিত্র: ৫ই জানুয়ারি ১০০টি, ৬ই জানুয়ারি ১০টি, ৭ই জানুয়ারি ২৭টি, ৮ই জানুয়ারি ৪৮টি, ৯ই জানুয়ারি ৪৩টি, ১০ই জানুয়ারি ১৩৪টি, ১১ই জানুয়ারি ৪৯টি, ১২ই জানুয়ারি ৩১টি, ১৩ই জানুয়ারি ১০৭টি, ১৪ই জানুয়ারি  ৫০টি, ১৫ই জানুয়ারি ৪০টি, ১৬ই জানুয়ারি ৩৮টি,  ১৭ই জানুয়ারি ৪০টি, ১৮ই জানুয়ারি ১৩টি, ১৯শে জানুয়ারি ৫০, ২০শে জানুয়ারি ২০টি, ২১শে জানুয়ারি ৪০টি, ২২শে জানুয়ারি ৫৩টি, ২৩শে জানুয়ারি ২৫টি, ২৪শে জানুয়ারি ৬টি, ২৫শে জানুয়ারি ৭টি, ২৬শে জানুয়ারি ২১টি, ২৭শে জানুয়ারি ৩০টি, ২৮শে জানুয়ারি ২৫টি, ২৯শে জানুয়ারি ২৮টি, ৩০শে জানুয়ারি ২০টি, ৩১শে জানুয়ারি ৪০, ১লা ফেব্রুয়ারি ৩৫টি, ২রা ফেব্রুয়ারি ৩১টি, ৩রা জানুয়ারি ২৬টি, ৪ঠা জানুয়ারি ১২টি  যানবাহন ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়া গত একমাসে রাজধানীতে ২২৭টি যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।  এদিকে কুলাউড়া, জয়পুরহাট, বগুড়া, চট্টগ্রামের মীরসরাই, কুমিল্লায় রেললাইন তুলে ফেলার ঘটনা ঘটে। ১২ই জানুয়ারি নরসিংদীতে রেললাইনের ব্রিজে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। গাজীপুরে শ্রীপুরে একটি ট্রেনে পেট্রল বোমা হামলায় ৫ যাত্রী অগ্নিদগ্ধ হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চট্টগ্রামগামী সুবর্ণ এক্সেপ্রেসে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এছাড়া সদরঘাট ও বরিশালে  লঞ্চে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ওদিকে কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের জোলাগাতি গ্রামের দক্ষিণ-পূর্ব জোলাগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কার্যালয়ে পাল্টাপাল্টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া দেশের কয়েক জেলায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

অতীতের আন্দোলনে হতাহতের চিত্র: ১৯৯৬ সালে ফেব্রুয়ারি-জুন মাসে ৬ষ্ঠ ও সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিহত হয়েছিল ৮২ জন। এর মধ্যে দলীয় নেতাকর্মী ৩৬ ও সাধারণ মানুষ ৩২ জন এবং অজ্ঞাত ১৪ জন।  ৮২ জনের মধ্যে পুলিশের গুলিতে ২২ জন, সংঘর্ষ-হামলায় ২৬ জন, বোমা হামলায় ১৯ জন ও অন্যান্য ১৫ জন।  ২০০১ সালে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিহত হয়েছে ৯৬ জন। এর মধ্যে দলীয় কর্মী ৭৯ জন ও সাধারণ মানুষ ১৭ জন। হামলায় ৫৫ জন, বোমায় ১৮ জন, গুলিতে ১৪ জন ও অন্যান্য ৯ জন। ২০০৬ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিহত হয়েছে ৩২ জন। এর মধ্যে দলীয় কর্মী ২৮ জন, সাধারণ মানুষ ৪ জন। হামলায় নিহত হয়েছে ২৭ জন, গুলিতে ৩ জন ও অন্যান্য ২ জন। সর্বশেষ ১০ম জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ৫ই জানুয়ারি পর্যন্ত ৫৯ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ জন দলীয় কর্মী ও ৪০ জন সাধারণ মানুষ। হামলায় নিহত হয় ২৫ জন, পেট্রল বোমায় ২২ ও অন্যান্য ১২ জন।

অবরোধ-হরতালে বোমা-আগুন আড়াই শতাধিক গ্রেপ্তার
গণগ্রেপ্তার, চোরাগোপ্তা হামলা, অগ্নিসংযোগ, বিক্ষিপ্ত মিছিল, ভাঙচুর, সড়ক অবরোধ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে বিরোধী জোটের লাগাতার অবরোধের ৩০তম দিন শেষ হয়েছে। টানা অবরোধের সঙ্গে হরতালে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত সকল মহাসড়কের অবস্থা বেশ ভয়াবহ। আঞ্চলিক মহাসড়কেও চলাচল বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। অপরদিকে দীর্ঘস্থায়ী অবরোধের নেতিবাচক প্রভাব রাজধানীকেও কাবু করে ফেলছে। একান্ত বাধ্য না হলে ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না সাধারণ মানুষ। ওদিকে সারা দেশে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে। গতকাল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সারা দেশে আড়াই শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে বলে ২০দলীয় জোটের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। এছাড়া, গতকাল রাজধানীর পৃথকস্থানে একটি যাত্রীবাহী বাসে ও ওলামা লীগের কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আগুনের ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। তবে পেট্রলবোমাসহ দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। দুপুর ১টায় মিরপুরের দিয়াবাড়ি সড়কে ক্লাসিক পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় জনতা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এদিকে, সকাল সাড়ে ৬টায় ডেমরা রানীমহলে আওয়ামী ওলামা লীগের থানা কার্যালয়ে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয়রা আগুন নিভিয়ে ফেলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় মালিবাগে পেট্রলবোমাসহ দুইজন যুবককে আটক করেছে পল্টন থানা পুলিশ।

সীতাকু- (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকু-ে একই সময়ে পৃথক স্থানে ৩টি গাড়িতে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রলবোমায় চালকসহ ৩জন অগ্নি দগ্ধ হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে মহাসড়কের শেখপাড়া, বাঁশবাড়ীয়া, ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির সামনে এ ঘটনাগুলো ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকামুখী দুধ ও চিনিবাহী একটি পিকআপ শেখপাড়া অতিক্রমকালে দুর্বৃত্তরা পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করলে আগুন ধরে যায়। এতে চালক আনোয়ার হোসেন, হেলপার জিল্লুর রহমান ও সেল্‌সম্যান ঝন্টু পাল মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়। একই সময় মহাসড়কের বাঁশবাড়ীয়া একটি কাভার্ডভ্যানে ও ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির সামনে একটি ট্রাকে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করলে আগুন ধরে যায়। এসব ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের ১২০ জনকে আসামি করে দুটি মামলা হয়েছে।

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে জানান, মণিরামপুরে মাছবাহী পিকআপ ভ্যানে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের ঘটনায় পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেন, জেলা বিএনপির সহসভাপতি মোহাম্মদ মুসাসহ বিএনপি-জামায়াতের ৪৩ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে মণিরামপুর থানার এসআই সিরাজ বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এদিকে মঙ্গলবার রাতভর জেলার ৮টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় থেকে বিএনপি-জামায়াতের দুই নেতাকর্মীসহ ৩৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

সিলেট অফিস জানায়, হরতাল পালনকালে সিলেট নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে শিবিরের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এ সময় শিবির কর্মীরা চারটি যানবাহন ভাঙচুর করে। হরতালে মিছিল বের করার প্রাক্কালে পুলিশ বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিবকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া নগরীতে স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল বেশ কয়েকটি মিছিল বের করে। হরতাল ও অবরোধের সমর্থনে বুধবার বেলা ১টার দিকে মদিনা মাকের্টস্থ লতিফ মঞ্জিলের সামনে থেকে একটি মিছিল করে শিবির। মিছিলের খবর পেয়ে জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সেখানে গিয়ে ধাওয়া করে। পুলিশের ধাওয়ার পর শিবির নেতাকর্মীরা পাল্টা ধাওয়া করে। একপর্যায়ে তারা পালিয়ে যায়। এসময় শিবির নেতাকর্মীরা ২টি সিএনজি অটোরিকশা ও ২টি ইজিবাইক গাড়ি ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ ওই এলাকায় থেকে দুই শিবির কর্মীকে আটক করেছে। জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেন জানান, মিছিলের প্রস্তুতিকালে শিবির নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। এ সময় দুইজনকে আটক করা হয়েছে। এদিকে, সিলেট মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি সদস্য এডভোকেট হাবিবুর রহমান হাবিবকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টায় সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। আটকের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির আরেক সদস্য মিফতাহ সিদ্দিকী।

নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, জামায়াত-শিবিরের ৬ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে সদর উপজেলার কুন্দুপুকুর ইউনিয়নের বাড়ঘড়িয়া ও বকশিপাড়া এলাকা থেকে পুলিশ তাদের আটক করে।

রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, বালিয়াকান্দি উপজেলার জামায়াতের সেক্রেটারি খন্দকার মনির আজম মুন্নুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শাহজাহান মিয়া টগর এর বাড়ির পাশের পুকুর পাড় থেকে তাকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, পেট্রলবোমা হামলাসহ বিভিন্ন নাশকতার অভিযোগে বিএনপি-জামায়াতের ৪৬ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার ভোররাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, বিএনপির ৬ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার ভোর থেকে সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, শ্রীপুরে ট্রেনে পেট্রলবোমা হামলার ঘটনায় ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার ওই ট্রেনের পরিচালক (গার্ড) বি.কে কর্মকার বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১৫/১৬ জনকে অভিযুক্ত করে এ মামলা করেন। এ ঘটনাসহ বিভিন্ন নাশকতার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত দু’দনে পুলিশ ২১ জনকে আটক করেছে।
স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর থেকে জানান, জামায়াত-বিএনপি’র ৯ নেতা-কর্মীসহ ২০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, পাকুন্দিয়া-কিশোরগঞ্জ সড়কে কাভার্ড ভ্যানে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় পুলিশ জেলা জিসাসের সভাপতি ও পাকুন্দিয়ায় রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক বোরহান উদ্দিন সরকারসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে রেজিস্ট্রি অফিস প্রাঙ্গণ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
স্টাফ রিপোর্টার, রূপগঞ্জ থেকে জানান, রূপগঞ্জে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। উপজেলার শিংলাব এলাকার বাইপাস সড়ক থেকে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাদের আটক করা হয়।

জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, জয়পুরহাট-বগুড়া বাইপাশ সড়কের দাদরা গ্রামের একটি বেইলি ব্রিজের পাটাতন খুলে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার রাতের কোন এক সময় এই পাটাতন খুলে ফেলা হয়। গতকাল সকালে পথচারীরা পাটাতন খোলা দেখে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং পাটাতন জোড়া দেয়ার কাজ করে। সকাল থেকে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।

স্টাফ রিপোর্টার, হবিগঞ্জ থেকে জানান, হবিগঞ্জের ৯ থানা থেকে পুলিশ বিশেষ বিভিন্ন মামলার ৩০ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত তাদের আটক করা হয়।

নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, বুধবার ভোরে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার পোস্ট অফিসের মোড়ে পার্কিং করা একটি মাইক্রোবাসে আগুন দিয়েছে হরতালকারীরা। এতে ওই মাইক্রোবাস সম্পূর্ণরূপে পুড়ে যায়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ।

ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, ছাতকে ছাত্রলীগ ও বিএনপির মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে এসআই অমৃত কুমার দাস বাদী হয়ে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের ৯ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪০জনকে আসামি করে এ মামলা করা হয়।

নাটোর প্রতিনিধি জানান, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন খানকে সোমবার রাতে পুলিশ নাটোর উপশহরের বাসা থেকে আটক করেছে। তার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের উপর হামলার একাধিক মামলা রয়েছে। এদিকে দেলোয়ারকে আটকের প্রতিবাদে আজ জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জেলা জামায়াত। অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন খানের স্ত্রী ডেইজী খান জানান, বেশ কয়েক দিন থেকে তিনি বাড়ির বাহিরে ছিলেন। সোমবার রাত সাড়ে আটটায় বাসায় ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই নাটোর থানার ওসি মিজানুর রহমান মিজানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়।
বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি জানান, বড়াইগ্রাম উপজেলা লালপুরের ওয়ালিয়া গ্রাম থেকে শিবির নেতা আসিফকে বুধবার ভোরে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, যৌথ বাহিনী বিএনপি ও জামায়াতের ৮ নেতাকর্মীসহ ৫২ জনকে আটক করছে। মঙ্গলবার রাতভর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

কাউখালী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি জানান, কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের জোলাগাতি গ্রামের দক্ষিণ-পূর্ব জোলাগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার রাতের কোন একসময় বিদ্যালয়টি পুড়িয়ে দেয়। সকালে বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষার্থীরা ভবনে আগুন লাগার বিষয়টি দেখতে পেয়ে তাদের বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মাহমুদা খতুনকে জানায়। আগুনে বিদ্যালয়ের অধিকাংশ বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিল লাইব্রেরিতে রাখা বই-খাতা পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে। এ ছাড়া ভবনের টিনের চালার নিচে দেয়া বাঁশের চাটাইও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম, পিরোজপুর সদর সার্কেলের এএসপি মো. আবদুল কাদের বেগ, শিয়ালকাঠি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিকদার মো. দেলোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে জানান, খুলনা থেকে ঢাকাগামী সোহাগ পরিবহনের একটি বাসে ৩টি ককটেল বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন ৪ জন। গত মঙ্গলবার রাত সোয়া ১০টায় মহানগরীর দৌলতপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এদিকে অবরোধ ও হরতালের সমর্থনে মিছিল করেছে শিবির খুলনা মহানগরী শাখা। ওদিকে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় মহানগরীর ৮ থানায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলে শিবিরকর্মী সন্দেহে একজনকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় এ ঘটনা ঘটে। আটক শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি শহীদ হবিবুর রহমান হলের ১২৭ নম্বর কক্ষে থাকতেন বলে জানা গেছে।
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, ঈশ্বরদী শহরের স্টেশন রোডস্থ আরজু মার্কেট এলাকায় মঙ্গলবার রাতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় পেট্রলবোমা নিক্ষেপ, গুলিবর্ষণ ও ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতৃত্বে ইউনিলিভার বাংলাদেশের মার্কেটিং গাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, টাকাসহ মালামাল লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও অটোরিকশার চালক শাহিনুর রহমান শাহিন জানান, রাত পৌনে আটটার দিকে অটোরিকশা নিয়ে শহরের আরজু মার্কেট এলাকায় পৌঁছলে মুখ বাঁধা কিছু দুর্বৃত্ত প্রথমে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এরপর তার গাড়ি লক্ষ্য করে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। পেট্রলবোমায় তার গাড়িটি ভস্মীভূত হয়ে যায়। ঘটনার প্রতিবাদে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। ঈশ্বরদী থানার ওসি বিমান কুমার দাশ জানান, পেট্রলবোমা নিক্ষেপ ও গুলি ছোড়ার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী থেকে জানান, নোয়াখালীতে বিএনপি-শিবিরের ৯ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া থেকে জানান,
বগুড়ার শাজাহানপুর বাসস্ট্যান্ডে ঢাকাগামী একটি আলুবোঝাই ট্রাকে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বগুড়ার মহাস্থান থেকে আলুবোঝাই করে একটি ট্রাক ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। এ সময় শাজাহানপুর বাসস্ট্যান্ডে দুর্বৃত্তরা ট্রাকটিতে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে ট্রাক পুড়ে যায়। এদিকে হরতাল অবরোধের-সমর্থনে শহরের চেলোপাড়ায় বিএনপি এবং উপ-শহর এলাকার অলির বাজারে জামায়াত মিছিল করেছে। ভাঙচুর ও নাশকতার অভিযোগে শেরপুর জামায়াতের সেক্রেটারি রেজাউল করিম বাবলু ও ভবানীপুর ইউনিয়ন জামায়াতের আমীরকে আটক করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *