তিস্তার চর দখল নিতে তৎপর ভুমি দস্যুরা….

Slider বাংলার মুখোমুখি

হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাটঃ বর্ষাকালে বন্যার আর তিস্তার হিংস্রো স্রোতে বিলিন হয় ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। শুস্কমৌসুমে জেগে উঠা বালু চর দখলে নিতে চলে গ্রামবাসীর সাথে ভুমি দস্যুদের সংঘর্ষ। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সরকারী খতিয়ানভুক্ত ৪০ একর জমি নিজের নামে রেকর্ড করেন নেন আমিন উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলাও দায়ের হয় আদালতে।

জানা গেছে, ভারতের সিকিম উপত্যকা থেকে সৃষ্ঠ তিস্তা নদী ভারতের ভুমি বেয়ে নীলফামারীর খড়িবাড়ি হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তিস্তা নদী লালমনিরহাট জেলার দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে ৫টি উপজেলাকে প্রবাহিত করে ব্রহ্মপুত্রে মিশে গেছে। উজানে ভারত সরকার গজলডোবা বাঁধ নির্মান করে এক তরফা নদী শাসন করছে। ফলে বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশে ধেয়ে বন্যা আর তীব্র ভাঙনের কবলে পড়ে এবং শুস্ক মৌসুমে পানির অভাবে বাংলাদেশ অংশ মরুভুমিতে পরিনত হয়। বর্ষাকালে বন্যার প্রবল স্রোতে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার অসংখ্য ঘরবাড়ি ও মাইলের পর মাইল ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়। এসব জমি শুস্কমৌসুমে পুনরায় জেগে উঠে।

শুস্কমৌসুমে জেগে উঠা এসব জমি দখলে নিতে তৎপর হয়ে উঠে ভুমিদস্যুরা। চলে রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি মামলা। মামলা নিস্পত্তি না ঘটতেই পুনরায় বন্যায় সবকিছু তিস্তায় বিলিন হয়। এভাবে প্রতিনিয়ত জমি হারানোর ভয় তাড়া করে চরাঞ্চলের মানুষদের। নদীগর্ভে বিলিন হওয়া জমি রেজিস্ট্রি মুলে মালিকানা বিক্রি হয় না। তবে অনেকেই অভাবে পড়ে জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করেন। তবে তা নামমাত্র দামে। বিধি সম্মত না হলেও চরাঞ্চলের জমি বিক্রির এ নিয়ম মান্দাতা আমল থেকে চলে আসছে। এক্ষেত্রে ক্রয়-বিক্রয়েও প্রতারনার শিকার হন বলেও চরবাসীর অভিযোগ। এ চিত্র জেলার অর্ধশত চরাঞ্চলে।

সাম্প্রতিক সময়ে কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের শালহাটি নোহালি মৌজার মৃত সিদ্দিক আলীর ছেলে আমিন উদ্দিনের একক নামে ২১ নং খতিয়ানের ৩৯.৭০ একর জমি বি.আর.এসে রেকর্ডভুক্ত হয়। যা তাদের স্ট্যাম্পমুলে ক্রয়কৃত জমি বলে তাদের দাবি। অপর দিকে স্ট্যাম্পমুলে বিক্রেতাগন বর্তমানে উক্ত জমি রেকর্ডভুক্ত হওয়ায় তা মানতে নারাজ। তাদের দাবি তিস্তার চরাঞ্চলের এসব জমি সরকারী খাস খতিয়ানে রেকর্ড করার কথা। কিন্তু তৎকালিন সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাদের অবৈধ সুযোগ দিয়ে সরকারী খতিয়ানভুক্ত জমি নিজের নামে রেকর্ড করেন নেন আমিন উদ্দিন। উক্ত রেকর্ড সংশোধন ও তৎকালিন সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করে ভুমি সচিব বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে মিজানুর রহমান।

সাম্প্রতি এই প্রায় ৪০ একর জমি দখল নিয়ে আমিন উদ্দিন গংদের সাথে গ্রামবাসীর কয়েক দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাঁধে। এ নিয়ে উভয় পক্ষই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। ওই গ্রামের আব্দুস সালাম ও মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিবছর বর্ষাকালে নদী ভাঙনে সবকিছু বিলিন হয় এবং শুস্কমৌসুমে জেগে উঠে। সরকারী খাসখতিয়ান ভুক্ত জেগে উঠা এসব চরে স্থানীয় ভুমিহীনরাই চাষাবাদ করে সংসার পরিচালনা করেন। কিন্তু টাকার বিনিময়ে এসব খাস জমি নিজ নামে রেকর্ড করে দখল করেন আমিন উদ্দিন গংরা। প্রতিবাদ করায় জমির দখলদার ভুমিহীন পরিবার গুলোকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন আমিন উদ্দিন গংরা। সরকারী খাস জমি উদ্ধার করে ভুমিহীনদের মাঝে বিতরন করতে সরকারের ঊর্দ্ধতন মহলের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।

তবে এসব অভিযোগ নিয়ে রেকর্ডমুলে জমির মালিক আমিন উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি তার রেকর্ডকৃত জমির স্ট্যাম্পমুলে ক্রয়ের কাগজপত্র দেখিয়ে বলেন, চরাঞ্চলের জমি আগে খাস খতিয়ানভুক্ত থাকায় রেজিস্ট্রিমুলে বিক্রি করা সম্ভব ছিল না। এ কারনে স্ট্যাম্পমুলে চরাঞ্চলের জমি ক্রয় করেছি। ১৯৮০-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় এসব বালুচর কম দামে ক্রয় করেছি। এখন জমি জেগে উঠায় দাতার উত্তরাধিকাররা অস্বীকারের চেষ্টা করছে। আমার বৈধ কাগজপত্র দেখে সেটেলমেন্টের সার্ভেয়াররা রেকর্ড করেছেন। সরকার দেখে বুঝে আমার নামে রেকর্ড করেছেন।

লালমনিরহাট অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ রাশেদুল হক প্রধান বলেন, খাস খতিয়ান ভুক্ত জমি সরকারী সম্পত্তি। যা ক্রয়-বিক্রয়ের কোন নিয়ম নেই। যদি কেউ স্ট্যাম্পমুলে ক্রয় করে নিজ নামে রেকর্ডভুক্ত করে থাকেন। সেটাও বিধি সম্মত নয়। রেকর্ড কর্তন করতে সরকার মামলা করতে পারে। এমন কিছু হয়ে থাকলে তা খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *