জন্মদিনে অনন্য হুমায়ূন আহমেদ

Slider সাহিত্য ও সাংস্কৃতি

ড. মাহফুজ পারভেজ: তিনি আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যে এনেছেন অবিস্মরণীয় জাগরণ। জাদুকরী ছোঁয়ায় বিশ্বব্যাপী বাংলাভাষী পাঠকদের মোহিত করেছেন। সুপ্রাচীন বাংলা সাহিত্যের প্রলম্বিত ইতিহাসে অপ্রতিদ্বন্দ্বী-জনপ্রিয়তার রেকর্ড রয়েছে তার হাতের মুঠোয়। তিনি অনন্য হুমায়ূন আহমেদ। আজ তার জন্মদিন।

১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর হাওর-বাওর-গানের জনপদ নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ নানার বাড়িতে তার জন্ম। পৈত্রিক নিবাস নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা-পুলিশ কর্মকর্তা পিতা ফয়জুর রহমান আহমদের চাকরির সুবাদে হুমায়ূনের শৈশব-কৈশোর কেটেছে অপরূপ বাংলাদেশের নানা স্থানে। সিলেট, চট্টগ্রাম, বগুড়া, পিরোজপুরের কথা তার স্মৃতি ও রচনায় উজ্জ্বল।
বিচিত্র মানুষ, অভিনব ঘটনা, অপূর্ব প্রকৃতি ও পরিবেশের কথা তিনি তুলে ধরেছেন গল্পের ছলে। যুক্তিবাদী মিছির আলী, রহস্যময় হিমু, মায়াবতী নায়িকা রূপা, মীরা কিংবা সংক্ষুব্ধ চরিত্র বাকের ভাইয়ের মাধ্যমে তিনি স্পর্শ করেছেন লক্ষ-কোটি পাঠকের হৃদয়।

শত শত গল্প-উপন্যাসে পূর্ণ করেছেন তিনি বাংলা কথাসাহিত্যের ভাণ্ডার। নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, কোথাও কেউ নেই, অয়োময়, কবি, উতল হাওয়া, বাদশাহ নামদার প্রভৃতি রচনায় কালোত্তীর্ণ হয়ে আছেন গল্পের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ, যিনি একা বাংলা প্রকাশনা শিল্পকে অভাবণীয় উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। হাজার পাঠক লাইনে দাঁড়িয়ে কিনেছেন তার বই। বৃহত্তর বাংলা সাহিত্যে এমন অভূতপূর্ব পাঠকপ্রিয়তার নজির আর নেই।

টেলিভিশন নাটকে হুমায়ূন আহমেদ স্মরণকালের জনপ্রিয়তায় ঋদ্ধ। চুম্বকের মতো দর্শকদের তিনি আকর্ষণ করেছেন। তার নাটকের চরিত্রের জন্য সমাজে বিক্ষোভ হয়েছে। মিছিল করেছেন শত শত মানুষ। ইতিহাসে বিরল এমন ঘটনার জন্ম দিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ।

চলচ্চিত্রে হুমায়ূন এনেছিলেন জোয়ার। সিনেমা হলের আকালে তার ছবি টেনে এনেছে হাজার দর্শক। কাহিনী, গানে, নাটকীয়তায় তার সিনেমাগুলো অর্জন করেছে বহু পুরষ্কার। তাঁর নির্মিত দুই দুয়ারী, শ্রাবণ মেঘের দিন, ঘেঁটুপুত্র কমলা লাভ করেছে ধ্রুপদের মর্যাদা।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হুমায়ূন আহমেদ প্রাঞ্জলতায় উপস্থাপন করতে পেরেছেন। বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেও তুলে ধরেছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের রেখাচিত্র। কল্পবিজ্ঞান, ভ্রমণ, রম্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই সোনা ফলিয়েছেন তিনি।

হুমায়ূন আহমেদ তার দীর্ঘ চার দশকের সাহিত্যজীবনে বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার মধ্যে একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার উল্লেখযোগ্য। দেশের বাইরেও সম্মানিত হয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। জাপানের এনএইচকে টেলিভিশন তাকে নিয়ে ‘হু ইজ হু ইন এশিয়া’ শিরোনামে ১৫ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র প্রচার করে।

পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের রসায়নের অধ্যাপক। তবে লেখালেখির সার্বক্ষণিক ব্যস্ততায় শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে তিনি পূর্ণকালীন লেখকের জীবন বেছে নেন এবং জনপ্রিয়তার শীর্ষে আরোহণ করেন। কাজল ডাকনামের হুমায়ূন আহমেদ ২০১২ সালে ১৯ জুলাই এক বর্ষণমুখর দিনে সুদূর প্রবাসে বিরহী কাজলের ছোঁয়ায় সবাইকে আপ্লূত করে চিরবিদায়ের পথে চলে যান। বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারে রেখে যান তার সৃষ্টির সুবিশাল সম্পদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *