ঢাকা-১৮ উপনির্বাচন; দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে ভোটগ্রহণ সমাপ্ত

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক (সুমন), উত্তরা প্রতিনিধি:
ঢাকা-১৮ আসনে শেষ হলো উপনির্বাচন ২০২০। চলতি বছরের ৯ জুলাই আসনটির সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন মারা যাওয়ায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করে জাতীয় সংসদ। এরই প্রেক্ষিতে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় আসনটিতে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। আজ (১২ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার) সকাল ৮টা থেকে তুরাগ, উত্তরা, উত্তরখান, দক্ষিণখানসহ আসনের অন্যান্য এলাকার ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয় এবং বিকাল ৪টায় ভোটগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। ভোটের দিন বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো ছিল পুরো ঢাকা-১৮ আসন।
ভোটের মাঠে সারাদিন কেন্দ্রগুলো ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী সমর্থিত হাবিব হাসানের কর্মী ও সমর্থকদের পদচারণায় ঠাসা। জায়গায় জায়গায় ছাউনী স্থাপন করে দলটির মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ সকাল থেকেই স্ব-স্ব অবস্থান নেয়।
বেলা সাড়ে এগারটায় দক্ষিণখানের আনোয়ারা মডেল ডিগ্রী কলেজ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাবিব হাসান। এর মাত্র পনের মিনিট আগে কেন্দ্রটি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন বিএনপির প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন। এসময় বিভিন্ন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপির পোলিং এজেন্টদের বের করে দিচ্ছে বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি। এর আগে সকাল ১০টা পনের মিনিটে দক্ষিণখানের মোল্লারটেকস্থ উদয়ন স্কুলের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন জাহাঙ্গীর হোসেন। সেখানে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা সাধারণ ভোটারদের ভোট প্রয়োগে ঝামেলা সৃষ্টি করছে, এমন বিষয় জানতে পেরে কেন্দ্রটি পরিদর্শনে গেলে জাহাঙ্গীর সমর্থক ও হাবিব হাসান সমর্থকদের মাঝে টানটান উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এসময় স্থানটি জুড়ে বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। পরে, বিএনপির প্রার্থী কেন্দ্রটিতে প্রবেশ করে দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসারকে বিষয়টি অবগত করে বেরিয়ে যায়। কেন্দ্রটির আশপাশ ঘিরে উভয় দলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর অবস্থান বিরাজ করায় শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তার টহলে আসা বিজিবি সদস্যদের উপস্থিতি ও তাদের কঠোর অবস্থানের ফলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

অপরদিকে, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হাবিব হাসান উক্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, ‘বিএনপির প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন বহিরাগত লোকজন নিয়ে সন্ত্রাসী আচরণ করে বেড়াচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার প্রতিপক্ষ জাহাঙ্গীরের লোকজন মালেকাবানু স্কুল কেন্দ্রটিতে ককটেল ফাটিয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মীদের গ্রেফতারও করেছে।’

উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকার ভোটকেন্দ্রগুলোতে বিভিন্ন দলীয় প্রার্থী সমর্থিত নেতাকর্মীদের অবস্থান বেশ সরগরম থাকলেও ভোটারদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। ভোটকেন্দ্র ও এলাকাজুড়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বেশ তৎপর থাকতে দেখা গেলেও বিএনপির কর্মী সমর্থকদের তেমন একটা দেখা যায়নি। তবে, উত্তরখানের কাঁচকুড়ায় গিয়ে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত ১০ থেকে ১৫জন পোলিং এজেন্টদের কার্ড হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এসময় তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদেরকে কাঁচকুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ভীয়ভীতি দেখিয়ে জোড়পূর্বক বের করে দিয়েছে বলে জানান তারা। অপরদিকে, অন্যান্য সব কেন্দ্রের তুলনায় এই কেন্দ্রটিতেই সবচেয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাররা ভোট প্রয়োগ করছেন বলে জানান আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর নেতাকর্মীরা।
এবারের ভোটের মাঠে ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে নানারকম চেষ্টা করেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। ভোটারদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ফ্রি রিক্সা সেবা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে আনাসহ নানা রকম তৎপরতা ছিল বেশ চোখে পড়ার মতো। ঢাকা-১৮ আসনের অন্যতম দুই এলাকা উত্তরা ও তুরাগে এমন চিত্র দেখা যায়। এতে করে সাধারণ ভোটারদের ভোট দিতে অনেকটা উৎসাহ জোগিয়েছে বলে জানান এই দুই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতারা।

ভোটের দিন ঢাকা-১৮ আসন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড বা এলাকা পর্যায়ে বিচ্ছিন্ন দু-একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের তেমন কোন সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। তবে, ভোটকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন মহাসড়কে একাধিক বাস পোড়ানোর মত ঘটনা ঘটেছে। সকালে উত্তরা ৮নং সেক্টরে অবস্থিত মালেকাবানু উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ ও দুপুর ৩টার পর তুরাগের ডিয়াবাড়ি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। ফলে, ঐসব ভোটকেন্দ্রের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে দেখা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *