চাপের মুখে ডনাল্ড ট্রাম্প

Slider জাতীয়


নিজের দল রিপাবলিকানেই সমালোচিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন উটাহ’র সিনেটর মিট রমনি ও মেরিল্যান্ডের গভর্নর ল্যারি হোগানের মতো সিনিয়র রিপাবলিকানরা। সত্য রিপোর্ট প্রকাশ করা সত্ত্বেও তিনি মিডিয়ার রিপোর্টকে বার বার ‘ফেক নিউজ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। কটাক্ষ করেছেন সাংবাদিকদের। কিছু সাংবাদিককে হোয়াইট হাউসের প্রেস রুম থেকে বের করে দিয়েছেন। ফলে নির্বাচনের পর প্রায় সব মিডিয়াই তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তিনি ভোট জালিয়াতির যে অভিযোগ করেছেন, মিডিয়ার প্রতিটি রিপোর্ট তাকে ‘ফলস্‌লি’ বা ত্রুটিপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, ট্রাম্প এরমধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নজিরবিহীনভাবে আঘাত করেছেন।

তিনি ‘রাশিয়া কানেকশনের’ বিচারে বাধা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ আছে। এ ছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে। এতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। সেখানে এই প্রস্তাব পাস হলেও সিনেটে গিয়ে আটকে যায়। কারণ, সিনেটের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতে। ফলে বেঁচে যান ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি যেসব কাজ করেছেন তার মধ্যে বেশির ভাগই ছিল বিতর্কিত। ফলে তাকে পরিবেশবাদী মাত্র ১৫ বছর বয়সী বালিকা গ্রেটা থানবার্গের চোখ রাঙানি খেতে হয়েছে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার কারণে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন দেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। একতরফাভাবে তিনি জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ লাগিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ইতিহাস সৃষ্টিকারী প্রথম আফ্রিকান-বংশোদ্ভূত প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে সম্পর্ককে তিক্ত করেছেন। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, তিনি ২০১৬ সালে নির্বাচিত হওয়ার আগে বা পরে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম অভিবাসীদের নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় মুসলিম বিশ্বে। বিশেষ করে তার এমন মন্তব্যে বৃটেনে সরকারি পর্যায়ে তোলপাড় হয়। ট্রাম্পকে বৃটেনে নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠে। অনলাইনে এমন দাবির পক্ষে কয়েক লাখ মানুষ স্বাক্ষর করেন। এরপর বিষয়টি বৃটিশ পার্লামেন্টে ওঠে। সেখানে ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবে টানা ৬ ঘণ্টা বিতর্ক হয়। তবে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়া শেষ হয় ওই বিতর্ক। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনকে তিনি কটাক্ষ করে সমালোচনা করেন ‘লিটল রকেটম্যান’ বলে। পরে তার সঙ্গেই তিনি পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ইস্যুতে বৈঠকে বসেন। কিন্তু সেই বৈঠকের ফল শেষ পর্যন্ত আবার তিক্ততার দিকে রূপ নেয়। করোনাভাইরাস মহামারিতে পুরো যুক্তরাষ্ট্র যখন বিপর্যস্ত, হাসপাতালে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেয়ার স্থান নেই, লাশ নিয়ে হাসপাতালের সামনে ফ্রিজিং ট্রাক অপেক্ষমাণ, তখনও তিনি এই মহামারিকে গুরুত্ব দেননি। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে তিনি একে ‘চায়না ভাইরাস’ হিসেবে চীনকে আঘাত করার চেষ্টা করেন। মাস্ক বাধ্যতামূলক করা নিয়ে উপহাস করেন। জো বাইডেন মাস্ক পরার কারণে তাকে নিয়ে তিরস্কার করেন। তাকে তিনি ‘স্লিপি বাইডেন’ বলে মশকরা করেন। মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া পিতা-মাতার কাছ থেকে সন্তানদের কেড়ে নিয়ে আলাদা রাখার কারণেও তিনি ব্যাপক সমালোচিত হন। বিশেষ করে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তার দহরম-মহরমের জন্য অনেক কথা হয় মিডিয়ায়। বলা হয়, তার প্রভাবের কারণেই ওয়াশিংটন পোস্টের কলামনিস্ট ও সৌদি আরবের ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার অভিযোগ থেকে রেহাই পান ক্রাউন প্রিন্স। সারা বিশ্বের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বললেও ট্রাম্পকে সাংবাদিক জামাল খাসোগি ইস্যুতে তেমন কোনো কথা বলতে দেখা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের ঘোর শত্রু রাশিয়া। সেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তিনি আমন্ত্রণ করে হোয়াইট হাউসে ঢুকিয়েছেন। এ ঘটনা এমন সময়ে ঘটেছে যখন, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়া কানেকশন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আলোচনা, সমালোচনা তুঙ্গে। ব্রাজিলের ব্যাপক সমালোচিত প্রেসিডেন্ট জায়ের বোলসনারোর সঙ্গে রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এসব কারণে দেশের ভেতরে এবং বাইরে ব্যাপক সমালোচিত ট্রাম্প। দেশের ভেতরে রিপাবলিকান দলের ভেতরের অনেকের চাপে রয়েছেন তিনি। এর প্রকাশ বোঝা যায়, যখন এবার তিনি নির্বাচন নিয়ে নির্বাচনের পরে একা লড়াই করছেন, তার পাশে দলের ভারি কোনো নেতা নেই, তখন। নির্বাচন পরবর্তীতে সুইংস্টেটগুলোতে যখন জো বাইডেনের সঙ্গে তার ক্ষুরধার প্রতিযোগিতা, তখন কোনো রিপাবলিকান কথা বলেননি। এ নিয়ে বিষোদগার করেছেন ট্রাম্পের দুই ছেলে। তারা রিপাবলিকান নেতাদের বলেছেন, আপনাদের কি মেরুদণ্ড নেই? এ থেকেই বোঝা যায়, দেশের ভেতর কি পরিমাণ চাপে, দলের ভেতর কি পরিমাণ চাপে ট্রাম্প। অন্যদিকে নির্বাচনের আগেই ট্রাম্পের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন জাঁদরেল রিপাবলিকান প্রয়াত সিনেটর জন ম্যাককেইনের স্ত্রী সিন্ডি ম্যাককেইন, সাবেক মেয়র রুডি গিলিয়ানির মেয়ে। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুদ্ধে নিহত যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের ‘লুজারস’ এবং ‘সাকারস’ বলে আখ্যায়িত করেন। এতে সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। সব মিলে দেশে ও বিদেশে প্রচণ্ড চাপে ছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *