করোনার পিক কবে?

Slider জাতীয়

দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর ১১০ দিন পার হলো। এই সময়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সোয়া লাখ ছাড়িয়েছে। মারা গেছেন ১৬২১ জন। প্রতিদিন প্রায় চার হাজার মানুষের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ছে। দিনে

মৃতের সংখ্যা ৩০ থেকে ৫০ এর মধ্যে উঠানামা করছে। সংক্রমণের প্রায় চার মাস পেরোতে গেলেও এখনও সর্বোচ্চ সংক্রমণ পরিস্থিতি বা পিক টাইম এসেছে কিনা তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থতি বিবেচনায় সেই সময় এখনও আসেনি। এটি আগামী মাসে আসতে পারে।
সময়টা তারও পরে হতে পারে। পিক সময়ে কি পরিমাণ সংক্রমণ ও মৃত্যু হতে পারে তারও কোন ধারণা নেই কারও কাছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই সার্বিক স্বাস্থ্য সেবা ও অর্থনীতিতে যে পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে সংক্রমণ আরো বাড়লে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠতে পারে। তাই এখনই সামনের পরিকল্পনা নেয়া উচিত। একই সঙ্গে সংক্রমণ রোধে যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে নানা তৎপরতা রয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠানটির গবেষকরা জানিয়েছেন করোনার পিক সামনের মাসে বা তারও পরে আসতে পারে। তারা বলছেন সেই সময়ে গ্রামে সংক্রমণ আরো বেশি বিস্তার করতে পারে। তাই এখনই সংক্রমণ রোধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। ওদিকে করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও সহায়তা দিতে আসা চীনা বিশেষজ্ঞ দল সফর শেষে জানিয়েছে তারাও মনে করেন করোনার পিক এখনও আসেনি। এটি হয়তো সামনে। তারা সামগ্রিক প্রস্তুতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বেশ কিছু পরামর্শও দিয়েছে সরকারের প্রতি।
৮ই মার্চ প্রাণঘাতী করোনা শনাক্ত হলেও প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ই মার্চ। এরপর থেকে আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যা ধীর গতিতে বাড়তে থাকে। এর এক মাস পর হঠাৎ করেই সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যায়। গত একমাসের বেশি সময় ধরে প্রায় প্রতিদিনই ৩ হাজারে অধিক মানুষের শরীরে করোনা শনাক্ত হচ্ছে। মৃত্যুর সংখ্যা ও ৩০-এর বেশি থাকছে। গত ১৬ই জুন একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়। এদিন মৃত্যু হয় ৫৩ জনের। ১৭ই জুন সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। শনাক্ত হয় চার হাজার ৮জন। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছে ঢাকা। এরপর চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ। তবে ৬৪ জেলায় ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার খবর আসছে প্রতিনিয়ত। সম্প্রতি এমন অনেক রোগী ধরা পড়ছে যাদের শরীরে করোনার কোন উপসর্গ নেই। এই উপসর্গহীন সংক্রমণ নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এদিকে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ১০০তম দিন আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ৯০ হাজার ৬১৯ জন। মৃতের সংখ্য ১২০৯ জনে। সংক্রমণের ১০৪তম দিনে শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখের অধিক। অথচ পার্শ্ববতী দেশ ভারতে আক্রান্ত লাখ ছাড়ায় ১০৯ দিনের মাথায়। করোনা শনাক্তের এক মাসের মাথায় অর্থাৎ ৯ই এপ্রিল একদিনে শতাধিক ব্যক্তি করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হন। এরও প্রায় এক মাসের মাথায় গত ১১ই মে একদিনে শনাক্তের সংখ্যা এক হাজার ছাড়ায়। গত ২রা জুন মোট শনাক্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়ায়। এরপর সংক্রমণের গতি আরো বাড়তে থাকে। ফলে পরবর্তী ১৬ দিনে আরো ৫০ হাজার রোগী শনাক্ত হয়। এখন পর্যন্ত মোট কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে তিন লাখ ৪৯ হাজার ৯৪৭ জনকে। কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়া পেয়েছেন দুই লাখ ৮৫ হাজার ৯৪৯ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬৩ হাজার ৯৯৮ জন। ২৫শে জুন পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৬২১জন। শনাক্ত হয়েছেন ১,২৬,৬০৬ জন। সুস্থ হয়েছেন ৫১,৪৯৫ জন। দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৪৪৩টি। এখন পযন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ২২ হাজার ৫০৬ জনকে। ছাড়া পেয়েছেন ৯ হাজার ৮০ জন।
দেশে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা জানান, করোনার সংক্রমণ রোধ সরকার কার্যত লকডাউন করে সারাদেশ। সে সময় করোনার বিস্তার কিছুটা কম ছিলো। ২৬শে মার্চের পর টানা ৬০ দিন সাধারণ ছুটির পর সীমিত আকারে পোশাক কারাখানা খুলে দেয়া হয়। এর পর শ্রমজীবী মানুষ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আসা যাওয়া করে। এতেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। ঈদের পর সাধারণ মানুষ ঢাকাগামী হওয়ায় হু হু করে বাড়তে থাকে করোনার বিস্তার। ফলে টানা ২ মাস কার্যত লকডাউন থাকলেও তার ফলাফল কাজে আসেনি। এখন নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ না করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না বলেও মনে করছেণ কেউ কেউ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকাতেই সংক্রমণ ব্যাপক হারে ছড়িয়েছে। আক্রান্তের অর্ধেকের বেশি ঢাকায়। এদিকে সংক্রমণের মাত্রাকে ৩ ভাগে ভাগ করে সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে রাজধানীর কিছু এলাকা রেড জোন ম্যাপিং করা হলেও তা এখনো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না।
ঢাকায় প্রথম পূর্ব রাজাবাজারকে রেড জোন ঘোষণা করা হয়। সেখানে গত ১০ই জুন থেকে ১৪ দিনের জন্য পরীক্ষামূলক লকডাউন কার্যকর শুরু হয়। পরবর্তীকালে আরও ৭ দিন বাড়ানো হয়েছে। লকডাউন শুরুর প্রথম দিন গত ১০রা জুন থেকে ২১শেজুন পযন্ত ১১ দিনে মোট ২০৫ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়। এ থেকে ৪০ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। শুরুতে এখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৯।
এদিকে দেশে সর্বোচ্চ গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৭ হাজার ৯৯৯ টি। করোনা শনাক্তের ১১০ দিনের মাথা এটাই সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা। এতে নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হন ৩ হাজার ৯৪৬ জন। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত হলো এক লাখ ২৬ হাজার ৬০৬ জন। এর আগে ১৭ই জুন ১৭ হাজার ৫২৭ টি পরীক্ষায় ৪ হাজার ৮ জন শনাক্ত হয়েছিল। এদিকে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরো ৩৯ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো এক হাজার ৬২১ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৮২৯ জন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হলেন ৫১ হাজার ৪৯৫ জন। গতকাল করোনা নিয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
তিনি আরো জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৫৮৬টি, আর পরীক্ষা করা হয়েছে ১৭ হাজার ৯৯৯টি। এখন পর্যন্ত মোট ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৪৪৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন তিন হাজার ৯৪৬ জন। ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৯২ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪০ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ২৮ শতাংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *