নারায়নগঞ্জের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় গাজীপুর নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জের

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় বাংলার মুখোমুখি


ঢাকা: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছেই। সেইসঙ্গে বাড়ছে অধিক হারে সংক্রমিত এলাকার পরিধিও। যুক্ত হচ্ছে সংক্রমণের নতুন রুট। গতকাল শনিবার পর্যন্ত দেশে আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩০৬ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার ১৪৪ জনে পৌঁছাল। মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৪ জনে। আগের দিন শুক্রবার ১৫ জনের মৃত্যু হয়। আর শনাক্ত হয় ২৬৬ জন।

রাজধানী ঢাকায় এখন পর্যন্ত সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। এর পরই রয়েছে নারায়ণগঞ্জ। নতুন করে আরও তিনটি জেলায় সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। গত কয়েকদিনে নতুন করে অধিক সংক্রমিত এলাকা হয়ে উঠেছে গাজীপুর। নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জেও সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

গতকাল শনিবার করোনাভাইরাস সম্পর্কিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, জেলাভিত্তিক বিশ্নেষণে নতুন রোগী আমরা যাদের দেখতে পেয়েছি, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছে ঢাকা শহরে। এর পরই নতুন একটি সংক্রমিত এলাকা দেখতে পাচ্ছি গাজীপুর। নতুন সংক্রমিত আরেক এলাকা হচ্ছে নরসিংদী। এর পরই রয়েছে কিশোরগঞ্জ।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, চীন থেকে শুরু করে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকালে দেখা যায়- প্রথম সংক্রমণ শুরুর পর ৪০ দিনে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে ইতালি ও স্পেনে। কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা বিবেচনায় ইতালির পরই বাংলাদেশের অবস্থান। সংক্রমণ পরিস্থিতি বলছে, সামনে আমাদের ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়তে হবে।

ডা. নজরুল ইসলাম আরও বলেন, দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার যে আশঙ্কা তার মূল কারণ হলো- সবকিছুইতে অব্যবস্থাপনা। চিকিৎসা নিয়ে অব্যবস্থাপনা, ত্রাণ নিয়ে অব্যবস্থাপনা। মানুষ লকডাউন মানছে না। রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়ায়। ছুটি ঘোষণার পরও গার্মেন্ট শ্রমিকদের জরুরিভাবে নিয়ে আসা। আবার তাদের ফিরিয়ে দেওয়া। আবার একটি বিষয় দেখলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজনের মৃত্যুর পর জানাজায় হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাধা পর্যন্ত দিলেন না। এ ঘটনা সংক্রমণের শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিল। বাজারেও শত শত মানুষ সমবেত হচ্ছেন। সব কিছুই যদি স্বাভাবিকভাবে চলে তাহলে লকডাউন করার প্রয়োজন কী?

গত শুক্রবারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনায় সর্বোচ্চ আক্রান্ত ঢাকা বিভাগে এক হাজার ৩৭০ জন। অর্থাৎ মোট আক্রান্তের ৭৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আবার মহানগর ও জেলা শহরের মধ্যে সর্বোচ্চ আক্রান্ত রাজধানী ঢাকায় ৭৪০ জন। যা মোট আক্রান্তের ৪০ দশমিক ২৬ শতাংশ। এর পরই রয়েছে নারায়ণগঞ্জে ২৮৯ জন। যা মোট আক্রান্তের ১৫ দশমিক ৭২ শতাংশ। এরপর গাজীপুরে ১১৭, নরসিংদীতে ৬৫ এবং কিশোরগঞ্জে ৩৩ জন আক্রান্ত হয়েছে।

আক্রান্ত ২০০০ ছাড়াল : গতকাল দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গত চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৩০৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত ও আরও ৯ জনের মারা যাওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, এই চব্বিশ ঘন্টায় ৮ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে মোট ৬৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৫৬৪ জন হাসপাতালে থেকে এবং বাকিরা বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের মধ্যে ১১ জন আইসিইউতে আছেন। অন্যরা হাসপাতালের সাধারণ শয্যায় ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাসায় অবস্থান করে চিকিৎসা নেওয়া ব্যক্তিরা আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগ রাখছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআরের কর্মকর্তারা তাদের পরামর্শ দিচ্ছেন।

আক্রান্তদের বয়সভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্নেষণ করে ডা. ফ্লোরা বলেন, সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছেন ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা। যা মোট আক্রান্তের ২৭ শতাংশ। এ ছাড়া ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা ২২ শতাংশ এবং ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সীরা ১৯ শতাংশ হারে আক্রান্ত হয়েছেন।

গত চব্বিশ ঘণ্টায় মৃত ৯ জনের তথ্য-উপাত্ত বিশ্নেষণ করে তিনি বলেন, মৃত চারজনের বয়স ৬০ বছরের বেশি। একজনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, দুজন ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এবং একজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে ৬ জন ঢাকার, দুজন নারায়ণগঞ্জের এবং একজন সাভারের বাসিন্দা। নতুন সংক্রমিতদের মধ্যে ৬২ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৮ শতাংশ নারী।

বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবটি করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। যশোর ও তার আশপাশের ঝিনাইদহ, নড়াইলসহ অন্যান্য জেলা থেকে যেসব নমুনা সংগৃহীত হবে, সেগুলো ওই ল্যাবে পরীক্ষা করা হবে।

তিনি জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত চব্বিশ ঘণ্টায় দুই হাজার ২৪৪টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নতুন যুক্ত হওয়া যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১৯টি ল্যাবরেটরিতে মোট দুই হাজার ১৯০টি নমুনার পরীক্ষা হয়। গত চব্বিশ ঘণ্টায় আরও ৬৬ জনকে আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আইসোলেশন থেকে মুক্ত হয়েছেন ৩২ জন। হোম কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে আরও তিন হাজার ৬৪১ জনকে এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে ১৭৪ জনকে। এই সময়ে কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়া পেয়েছেন চার হাজার ২৬ জন।

বুলেটিন উপস্থাপনকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) শাখার পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান খানও উপস্থিত ছিলেন।

আইইডিসিআরের তথ্যে গরমিল : রাত ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আক্রান্তদের বিষয়ে আইইডিসিআর শনিবারের বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করেনি। এর আগে শুক্রবার প্রকাশ করা প্রতিবেদনে মোট ১ হাজার ৫৯৩ জনের হিসাব দেওয়া হয়েছে। অথচ শুক্রবার পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮৩৮ জন। আবার জেলা হিসেবে রংপুরের নাম দু’বার উল্লেখ করে আক্রান্তের হিসাব দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর সমকালকে বলেন, তথ্যগত কিছু সমস্যা রয়েছে। যাচাই-বাছাই করে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *