মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমান কোথায় যুদ্ধ করেছে? একটা জায়গা বিএনপির নেতারা দেখাক

Slider জাতীয় রাজনীতি


ঢাকা: রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে সাধারণ আলোচনায় সরকারি দলের সদস্যরা বলেছেন, জিয়াউর রহমান কোথাও যুদ্ধ করেননি। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় খুনি মোশতাকের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত ছিলেন। তারা দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি পুলিশ-আমলা-প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ধরার দাবি জানিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মে. ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে এই আলোচনা হয়। আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, ফরিদুল হক খান, মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন, মোসলেম উদ্দিন ও এ কে এম ফজলুল হক এবং জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু।

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান তাঁর বক্তব্যে সম্প্রতি মিজানুর রহমান আজহারী ও তারেক মনোয়ার নামক দু’জন ব্যক্তির যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর পক্ষ নিয়ে ওয়াজ মাহফিলে দেওয়া হুমকির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

তিনি বলেন, প্রকাশ্য আদালতে রাজাকার সাঈদীর বিচার হয়েছে, বিচারে তার শাস্তি হয়েছে। এখন কিছু লোক হুমকি দিয়ে বলছে, ঘরে ঘরে সাঈদী বেরিয়ে আসবে। একজন বলছে- এটা এখন তীর ধনুকের যুগ না, এখন একে ফোর-টি সেভেনের যুগ। এটি প্রছন্ন নয়, প্রকাশ্য হুমকি। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলায় বিএনপির সংসদ সদস্যদের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, জেনারেল জিয়া কখনোই স্বাধীনতার ঘোষক নয়, একজন পাঠক মাত্র। মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমান কোথায় যুদ্ধ করেছে? একটা জায়গা বিএনপির নেতারা দেখাক। সে কোথাও যুদ্ধ করেনি, শুধু ষড়যন্ত্র করেছে খুনি মোশতাকের সঙ্গে। শেষের দিকে মুজিবনগর সরকারের কাছে ষড়যন্ত্র ধরা পড়ার পর মোশতাককে মন্ত্রীত্ব থেকে বাদ দেওয়া হয়। আর জিয়াউর রহমানকে নিস্ক্রিয় করে রাখা হয়। এটিই হচ্ছে বাংলাদেশের সত্যিকারের ইতিহাস।

সরকারি দলের অপর সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, বিএনপিতে দুটি ধারা। এক রাজনৈতিক, অপরটি হচ্ছে বাণিজ্যিক। বাণিজ্যিক ধারার নেতৃত্ব দেন বর্তমানে এতিমের টাকা আত্মসাত করে কারাগারে সাজাভোগ করা খালেদা জিয়া ও দুর্নীতি করে লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানরা। আর রাজনৈতিক ধারায় রয়েছে বিভিন্ন দল থেকে আসা দলছুট নেতারা। এদের দিয়ে দেশের কোনদিন উন্নতি হয়নি, হবেও না।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। দেখার কেউ নেই, সরকার কেন তা বন্ধ করতে পারছে না? ২৫টি ব্যাংকের পরিচালকরা ৬ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে, আর তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে পৌণে দুই লাখ টাকা। চার লাখ টাকা পাচার হয়েছে, কানাডায় গত কয়েক বছরে বসবাসের অনুমতি পেয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ অবৈধভাবে টাকা লুটপাট করে নিয়ে পালিয়ে গেছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারা সত্যিই দুঃখজনক।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী চুন্নু বলেন, ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু দুর্নীতিও হচ্ছে। সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছিলেন, কিন্তু কেন তা বন্ধ করা হলো জানি না। ক্যাসিনো কর্মকাণ্ড কী শুধু রাজনীতিবিদরা করেছে? এখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ জড়িত নেই? শুধু যুবলীগের সম্রাট জড়িত, অন্য কেউ জড়িত নেই? জড়িত যেই হোক সবাইকে ধরতে হবে। শুধু রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করা হয়। ঢাকার অভিজাত এলাকায় বড় বড় বাড়িগুলোর মধ্যে ক’জন রাজনীতিবিদের, আর কতগুলো আমলা-প্রশাসনের কর্মকর্তাদের- সেই হিসাব নেওয়া হোক। তা দেখলেই সব পরিস্কার হয়ে যাবে। শুধু আমরা রাজনীতিবিদরা জেলে যাব, প্রশাসনের জড়িতরা জেলে যাবে না- এটা হতে পারে না।

দেশে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিরোধী দলের এই সদস্য বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে এতো লোক মারা যাচ্ছে, ধর্ষকরা কেন মারা যায় না? আমরা বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের কনসেপ্টকে সাপোর্ট করি না। কিন্তু ধর্ষণের বিষয়ে গুরুত্ব বোঝাতে আমি একথাটি বলেছি। এটা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। ধর্ষণের বিচারে যে আইন রয়েছে তা যথেষ্ট নয়। এ আইনের সংশোধন এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণের এই অবস্থা যদি বন্ধ করতে না পারি, তবে দেশে মহামারি আকার ধারণ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *