শ্রমের হাটে নারীর প্রভাব

Slider জাতীয় সারাদেশ


মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জ সদরের চরাঞ্চলের শিলই ইউনিয়নের দেওয়ানকান্দি ও পূর্ব রাখিকান্দি গ্রাম। সকাল ৬টা থেকে গ্রাম দুটির সড়ক ও সেতুর ওপর কয়েকশ’ নারী-পুরুষের জটলা চোখে পড়ল। দূর থেকে দেখে মনে হলো সেখানে কিছু একটা ঘটেছে। কিন্তু কৌতূহল মেটাতে কাছে গিয়ে জানা গেল, সেখানে কিছুই হয়নি। দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো শ্রম বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছেন। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে জীবিকার তাগিদে এ অঞ্চলে এসেছে তারা। প্রতিদিনের মতো গত রোববার সকালেও শ্রম বেচাকেনার হাট বসে দুটি গ্রামের সড়ক পথে। একই আবহ লক্ষ্য করা গেছে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বালিগাঁও বাজারেও। প্রতিদিন সামান্য সময়ের জন্য শ্রম বিক্রির এই হাট বসে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মার তীরে গ্রাম ও বালিগাঁও বাজারের মতো জেলার ৬৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ও হাটবাজারে রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নিলফামারী, কুড়িগ্রামসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রায় লক্ষাধিক পুরুষ ও নারী শ্রমিকের শ্রম বেচাকেনা হয়। দিনপ্রতি পারিশ্রমিকে চুক্তিবদ্ধ হয়েই আলু তোলার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এসব শ্রমিক। কৃষকরাও স্থানীয় শ্রমিক সংকটের কারণে উত্তরবঙ্গের এসব শ্রমিক পেয়ে আলু তোলার কাজে তাদের সম্পৃক্ত করছে। আর এই শ্রমিকরাই আলু তোলা শেষে জমি থেকে হিমাগারে ও বাড়ির আঙিনায় পৌঁছে দেওয়ার কাজ করবেন।

সরেজমিন দেখা গেল, ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল পৌনে ৬টা। বালিগাঁও বাজারে সড়কের দু’পাশে দেখা গেল অসংখ্য নারী-পুরুষের জটলা। একাধিক কৃষকের সঙ্গে পুরুষ শ্রমিকরা তাদের শ্রম বিক্রির পারিশ্রমিক নিয়ে দরকষাকষি করছেন। চুক্তি শেষে কৃষকের পেছনে সারিবদ্ধ হয়ে রোপণ করা আলু জমির দিকে চলে যাচ্ছে। শ্রমিকরা ১৫ থেকে ২০ জনের গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আলু তোলার কাজে যুক্তদের মধ্যে নারী শ্রমিকও রয়েছেন। শিমুলিয়া গ্রামের আক্তার হোসেন জানান, প্রতিদিন সকালেই শ্রম বিক্রির হাট বসে জেলার বিভিন্ন গ্রামের পথে-প্রান্তরে।

নীলফামারী জেলার আছিয়া আক্তার জানান, প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠে বালিগাঁও বাজার এলাকায় দলবদ্ধ হয়ে লাইনে থাকতে হয়। মালিকদের সঙ্গে দরদাম ঠিক হলেই কাজে লেগে যাই। মজুরি হিসেবে পারিশ্রমিক পাই ৩০০ টাকা। আছিয়া আক্তারের মতো জীবিকার তাগিদে মুন্সীগঞ্জে ছুটে এসেছেন আকলিমা, জহুরা, নয়নতারাসহ আরও অনেকেই। তবে তাদের অভিযোগ, স্থানীয় শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বেশি দিলেও তাদের দেওয়া হচ্ছে কম, অথচ তারা একই পরিশ্রম করছেন। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নারী শ্রমিক কাজলী দাস বলেন, পুরুষ শ্রমিকদের মতো তারা একই পরিশ্রম করছেন। কিন্তু তাদের মজুরি দেওয়া হয় ৩০০ টাকা আর পুরুষ শ্রমিকদের ৪০০ টাকা।

বালিগাঁও ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য রিপন হোসেন বেপারী তার জমিতে রোপণ করা আলুর গাছ পরিচর্যার জন্য উত্তরবঙ্গের শ্রমিক নিয়োগ করছেন। স্থানীয়ভাবে শ্রমিকের সংখ্যা কম হওয়ায় বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শ্রমিকদের আলু রোপণের সময় প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ১৫ থেকে ২০ জন দলভুক্ত হয়ে মুন্সীগঞ্জে আলু রোপণের কাজ করছে।

ধামারণ গ্রামের কৃষক সাহাবুদিন হাওলাদার ও গনি ঢালী জানান, আগামী মার্চ ও এপ্রিল মাসে আলু তোলার কাজে শ্রমিকদের নিয়ে জমিতে থাকতে হবে। তাই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত হাজার হাজার নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা জেলার বিভিন্ন গ্রামে অবস্থান করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আল মামুন সমকালকে জানান, জেলায় ৭৮ হাজার কৃষক পরিবার রয়েছে। এসব পরিবারের প্রায় ৪ লাখ ৬৮ হাজার সদস্য কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। এ বছর জেলায় ৩৯ হাজার ৩শ’ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। গত বছর ৩৮ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। আলু উৎপন্ন হয়েছিল ১৩ লাখ ৫১ হাজার ১২৯ টন। আর উৎপাদিত আলুর মধ্যে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টন বীজ আলু হিসেবে জেলার ৬৮টি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়। আর হিমাগারগুলোর ধারণ ক্ষমতা ৫ লাখ টন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *