কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ ৭০০ ঋণখেলাপি

Slider অর্থ ও বাণিজ্য জাতীয়


ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ নীতিমালায় খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদনে সাড়া দিচ্ছে না বেসরকারি খাতের অনেক ব্যাংক। দুই শতাংশ ডাউনপেমেন্ট এবং ৯ শতাংশ সুদের এই বিশেষ সুবিধায় সাড়া না পেয়ে ৭০০ গ্রাহক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছে। এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যাংকার্স সভায় আলোচনা হবে। ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আজকের বৈঠকে সুদহার পরিস্থিতি এবং আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে খেলাপি দেখানো থেকে বিরত থাকা গ্রাহকদের নতুন ঋণ নিয়েও আলোচনা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উৎপাদনশীল খাতসহ অন্যান্য খাতে স্বাভাবিক ঋণপ্রবাহ বজায় রাখতে ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা জারি করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় ৭০০ গ্রাহক সংশ্নিষ্ট ব্যাংকের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকেও আবেদন করেছেন। এসব গ্রাহক জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলো তাদের আবেদন বিবেচনায় নিচ্ছে না। এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ৩৬৮টি আবেদন পেয়েছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৬ হাজার ৬৩২টি। এসব আবেদনের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলো করেছে ৪ হাজার ৯২টি। মোট আবেদনের যা প্রায় ৬২ শতাংশ। আর বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলো নিষ্পত্তি করেছে ২ হাজার ৫৪০টি। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, খেলাপি ঋণ আদায়ের মাধ্যমে ব্যাংক খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তবে সুবিধা না দিলে এর উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে।

গত ২১ জুলাই অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় বলা হয়, যেসব ঋণগ্রহীতার ঋণ তথ্য ব্যুরোর (সিআইবি) প্রতিবেদনে ‘আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে’ কথাটি থাকবে তাদের পুনরায় ঋণ প্রদানে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব ব্যাংকের প্রতিবেদন সংগ্রহ করেছে। ব্যাংকগুলো জানিয়েছে, এ ধরনের গ্রাহকদের নতুন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। কয়েকটি ব্যাংক জানিয়েছে, এ ধরনের গ্রাহককে নতুন ঋণ দেওয়া হয় না। গত ব্যাংকার্স সভায় শীর্ষ ঋণগ্রহীতাদের কাছে ঋণ কেন্দ্রীভূত এবং এসব ঋণে অপ্রতুল জামানতের বিষয়টি উঠে আসে। ব্যাংকাররা জানান, বড় ঋণে শতভাগ জামানত নিশ্চিত করা কঠিন। তখন গভর্নর বলেন, ঋণ কেন্দ্রীভূত হলে আর্থিক ব্যবস্থা অস্থিতিশীল হতে পারে। এ জন্য নীতিমালা মেনে ঋণ দিতে হবে। এ ছাড়া সব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দশ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে বলা হয়। ব্যাংকগুলোর প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৯টি ব্যাংকের মধ্যে ১৮টির খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের ওপরে রয়েছে। এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

আমানতে ৬ শতাংশ এবং ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার বাস্তবায়নের বিষয়টি গত ব্যাংকার্স সভায় আলোচনা হয়। রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এ নিয়মে ঋণ দিচ্ছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানিয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে ভিন্ন চিত্র উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-২ থেকে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের ওপর গত ৮ জুলাই ও ২৭ অক্টোবর দুটি বিশেষ পরিদর্শন পরিচালিত হয়। ৮ জুলাইর পরিদর্শনে দেখা যায়, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক মেয়াদি আমানতের ওপর সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৬৩ ও ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। ঋণে সুদ নিচ্ছে সর্বোচ্চ ১২ ও ১৪ শতাংশ। আর গত অক্টোবরের পরিদর্শনে দেখা যায়, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক সর্বোচ্চ ১৫ ও ১৪ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে। আর সোনালী ব্যাংক ঋণ ও আমানতে এ নির্দেশনা অনুসরণ করলেও জনতা ব্যাংক শুধু ঋণে অনুসরণ করছে। ব্যাংকগুলোর সুদহার সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেখেছে, ১৪টি ব্যাংক আমানতে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ এবং ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর করেছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক এবং কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন এ বিষয়ে কোনো জবাব দেয়নি। ১৪টি ব্যাংক এটি একেবারেই কার্যকর করেনি। অন্য ব্যাংকগুলো প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে ব্যাংকগুলো বার্ষিক মোট ঋণের ২৩ শতাংশ সিএমএসএমই খাতে দিতে পারে। তবে গত জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ১৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আর মোট সিএমএসএমই ঋণের অন্তত ১৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণের নির্দেশনা থাকলেও ব্যাংকগুলো দিয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ বিষয়েও আজকের বৈঠকে আলোচনা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *