‘বাঁকখালী বাঁচলে কক্সবাজার বাঁচবে, দখলমুক্ত করে পুরণো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে’

জাতীয়

 

image_111827_0
ইসলাম মাহমুদ, কক্সাবাজারঃ কক্সবাজার জেলার অন্যতম প্রধান নদী বাঁকখালীর দূষণরোধ, অবৈধ দখলমুক্তকরণ ও ড্রেজিংয়ের দাবিতে এক ঘন্টা ধরে মানববন্ধন করেছে পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন ‘বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন’। সংগঠনটির কক্সবাজার জেলা শাখা ২৮ ডিসেম্বর রোববার এই কর্মসূচি আয়োজন করে। বাঁকখালী নদীর কিনারে কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাট এলাকায় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলে।
পরে জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার পৌর মেয়র ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। মানববন্ধনের পরপরই পৌর মেয়র সরওয়ার কামালকে অনুষ্টানস্থলেই স্মারকলিপিটি তাঁর হাতে তুলে দেয়া হয়।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে পৌর মেয়র সরওয়ার কামাল বলেন, ‘বাঁকখালী নদী দূষণ ও দখলে নাব্যতা হারানোর প্রভাব আমরা প্রতিনিয়তই দেখছি। দীর্ঘদিন ধরেই আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, বাঁকখালী নদী দখলমুক্ত করে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী এই নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু মন্ত্রীরা আসেন, প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু পরে আর কোন কাজ হয় না।’

তিনি বলেন, ‘বাঁকখালী নদী দখলমুক্ত করে নাব্যতা ফেরানো গেলে এই নদী পথেই চকরিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও চট্টগ্রামে যাতায়াত সহজ হতো, যা এক সময় একমাত্র পথ ছিল। সেই ঐতিহ্য আমরা হারিয়ে ফেলেছি।’

তিনি বাঁকখালী নদী দখলমুক্ত করার জন্য জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, ‘বাঁকখালী নদীকে ঘিরেই সুন্দর পর্যটন স্পট গড়ে উঠতে পারে। কিন্তু আমাদের কথা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত পৌছানোর মতো কোন নেতা-মন্ত্রী নেই।’

বেলা একটার দিকে জেলা প্রশাসককে বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। তাঁর দপ্তরে বাঁকখালী নদীর দখলমুক্তি ও ড্রেজিংয়ের দাবিতে দেয়া স্মারকলিপি গ্রহণের পর জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘উচ্ছেদ কার্যক্রম চালাতে গেলে প্রচুর টাকার প্রয়োজন হয়। আমরা মন্ত্রণালয়ে টাকা বরাদ্দের জন্য লিখেছি। টাকা পেলেই বড় ধরণের উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হবে।’

তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যেই ছোট ছোট দখলদারদের স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। বিষয়টি আদালতকেও জানানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন মনে করেন, বাঁকখালী নদী বাঁচলেই কক্সবাজার বাঁচবে। বাঁকখালীকে ঘিরেই কক্সবাজার গড়ে উঠেছে।

এদিকে সকালে বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট পয়েন্টে আয়োজিত মানববন্ধনে সিনিয়র সাংবাদিক নুরুল ইসলাম হেলালীর সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন। বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও নদী গবেষক মো. মনির হোসেন, সংগঠনটির ঢাকা বিভাগীয় সমন্বয়কারি মনোয়ার হোসাইন রনি, কক্সবাজার জেলা সভাপতি আবদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আনছার হোসেন।

সংগঠনটির জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক ইসলাম মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্টিত সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. মনির হোসেন বলেন, ‘পৃথিবীর কেউ যদি নদী দেখতে চায় তাহলে তাকে বাংলাদেশে আসতে হবে। আমাজন নদীর পরেই বাংলাদেশি নদীর অবস্থান। নদীকে ঘিরেই বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সুন্দরবনে গেলে উদ্ভিদ দেখি। কিন্তু কক্সবাজারে বাঁকখালী নদীতেই রয়েছে তেমন জলজ উদ্ভিদ। এখানে আসলে বাঁকখালী নদী যেমন দেখা যাবে, তেমনি সুন্দরবনের জলদ উদ্ভিদের সৌন্দর্যও উপভোগ করা যাবে।’

নদী নিয়ে পিএইচডি গবেষণারত মনির হোসেন মনে করেন, ‘নদী না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। আর কক্সবাজারে বাঁকখালী না বাঁচলে কক্সবাজার বাঁচবে না। তাই যে কোন প্রকারেই হোক দখলদার উচ্ছেদ করে বাঁকখালীর পুরণো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে।’

এই মানববন্ধন কর্মসূচি সমাজের নানাশ্রেণী পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তারা অবিলম্বে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে বাঁকখালীতে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *