হাফিজুল ইসলাম লস্কর, সিলেট : আজ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর সিলেট জেলা ও মহানগরের ত্রি-বার্ষিক মহা-সম্মেলন বা কাউন্সিল। ইতিমাধ্যেই কাউন্সিলরের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কাউন্সিল ভেন্যু সিলেট নগরীর ইতিহ্যবাহী আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে ৬০ ফুট লম্বা মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করবেন কাউন্সিলের প্রধান অতিথি আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ত্রি-বার্ষিক মহাসম্মলনে সিলেট জেলা ও মহানগরের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক নির্বাচন করা হবে কাউন্সিলদের প্রত্তক্ষ্য ভোটে।
জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কমিটি ঘোষণা করা হয় ২০১১ সালের নভেম্বরে। তিন বছর মেয়াদের এ কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে ৫বছর আগে। এ ৮ বছরে অনেকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা কারণে কাউন্সিল আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ ৮ বছর পর সম্মেলন অনুষ্টিত হতে যাচ্ছে আগামীকাল। সিলেট আওয়ামীলীগ পরিবারে বইছে আনন্দের বন্যা।
কাঙ্খিত সম্মেলনের শেষ মুহুর্তে পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মেলাচ্ছেন নিকাশ নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছেন দলের ক্রান্তিকালের মাঠের রাজনীতিতে সরব ও ক্লীন ইমেজে থাকা নেতারা। যারা মাঠের রাজনীতিতে সকল সময় ছিলেন সরব, আর তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে যাদের গভীর সু-সর্ম্পক এবং বিপদে আপদে যাদের সব সময় কাছে পেয়েছেন। প্রত্যেক কর্মীরই আশা বসন্তের কোকিল নয় ত্যাগী নেতৃত্ব আসবে সিলেট আওয়ামীলীগে। সম্মেলনকে সফল ও সার্থক করতে সিলেট আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা নিজস্ব উদ্যোগে নগরীকে সাজিয়েন মনের মতো করে।
থেমে নেই নেতাদের দোড়ঝাঁপ। শীর্ষ পদ তথা কমিটিতে আসতে দৌড়ঝাঁপে রয়েছেন একাধিক নেতা। কমিটিতে আসতে পুরনোদের সঙ্গে নতুন অনেকের নামও আলোচনায় আসছে। নগরে সাঁটানো বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণও জানান দিচ্ছে প্রার্থী কারা? তবে সবকিছুকেই ছাপিয়ে আলোচনার শীর্ষে ‘ইলেকশন’ না ‘সিলেকশন’। প্রদপ্রত্যাশীরাও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর ভরসা রাখছেন। আর সমঝোতার মাধ্যমেই কমিটি হবে, এমনটি ধারণা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
দলীয় একাধিক সূত্রে জানাযায়, কাউন্সিল বিষয়ে বুধবার (০৪ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় সিলেট আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এক নেতা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আর তাই অনেকেই বলছেন যে, এই বৈঠকেই সিলেট আওয়ামীলীগের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গেছে নেত্রীর ইশারায়। আর এটা সত্য হলে সমঝোতার মাধ্যমেই কমিটি হবে এটা নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একধিক নেতা। তবে সিলেট আওয়ামীলীগ পরিবারে গুঞ্জন রয়েছে পুরনোদের আবারো মূল্যায়ন করা হবে! তাই কাউন্সিলে ইলেকশন’ নয় ‘সিলেকশনের মাধ্যমেই কমিটি হচ্ছে। আর একথা ভালভাবে জানেন পদপ্রত্যাশী নেতারা তাই কদর কমেছে কাউন্সিলরদের। এ যাবত কাউন্সিলরদের দ্বারস্থ হননি বা ফোনও করেননি পদপ্রত্যাশীরা। পুরনোদের আবারো মূল্যায়িত হলেও কিছুটা সংশয় জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমানকে নিয়ে। তার পরিবর্তে মন্ত্রী ইমরান আহমদ বা জেলার সহ-সভাপতি মাহমুদ উস সামাদ অথবা বর্তমান জেলার সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান রয়েছেন সভাপতির দৌড়ে আলোচনায়। তবে সংসদ সদস্যরা পদে আসতে না পারার একটি ঘোষণায় লুৎফুর রহমানের পাল্লা ভারী হয়ে যায়। তাই জেলার সহ-সভাপতি মাহমুদ উস সামাদ ও সহ-সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদের এবারও সভাপতি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা অপুর্ণই থাকছে। তাই সভাপতি পদে নেত্রী প্রবীণ লুৎফুর রহমানের উপর আস্তা রাখলে সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকছেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। কেননা, আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ ও দলের জন্য ত্যাগী নেতা হিসাবে তার খ্যাতি নেতা হিসেবে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত খ্যাতি রয়েছে শফিকুর রহমান চৌধুরীর।
আর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে সাবেক সিটি মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন আসাদ উদ্দিন। এ দু’টি পদেও পরিবর্তনের সম্ভাবনাও খুবই ক্ষীণ, মনে করছেন নেতাকর্মীরা। যদিও কামরান দলের কেন্দ্রীয় সংসদের কার্যনির্বাহী কমিটিতে আছেন।
তবে নেতাকর্মীদের ধারনা সম্মেলনে মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসবে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগে। আবার পুরনোদের শীর্ষপদে রেখে নতুন-পুরাতনদের নিয়ে ব্যালেন্স কমিটি আসার সম্ভাবনার কথাও বলছেন অনেক কর্মী। তবে, নতুন কমিটির শীর্ষ বা গুরুত্বপূর্ণ পদে বিতর্কিতদের জায়গা হচ্ছে না-এমনটি মনে করছেন আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী। কারন সিলেট আওয়ামীলীগের সকল নেতাদের আমলনামা রয়েছে সভাপতি শেখ হাসিনার টেবিলে।
মন্ত্রী, এমপি ও শীর্ষ নেতাদের আশির্বাদ বা লবিং-তদ্বিরে নয়, আমলনামা দেখেই এবার যোগ্যদের হাতে নেতৃত্বের দায়িত্ব্য তুলে দেবেন সভানেত্রী এমন প্রত্যাশা তৃণমূল নেতাকর্মীদের। আর একারণে শীর্ষ পদ প্রত্যাশি বিতর্কিত নেতা ও তাদের কর্মী সমর্থক চরম আতঙ্কে রয়েছেন। তবে একথা নিশ্চিত যে, বিগত চার দলীয় জোট সরকারের সময়ে যারা গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছেন, তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে বাদ না দিতে নির্দেশ দিয়েছেন নেত্রী।