বাল্যবিবাহ, নারীপাচারসহ বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার রুখে দিচ্ছেন নারীরাই৷ এর জন্য তাঁরা তৈরি করেছেন রোকেয়া কিশোরী বাহিনী৷ বেগম রোকেয়াকে সম্মান জানাতেই এই উদ্যোগ৷ রোকেয়া কিশোরী বাহিনী কাজ করে রাজরহাটের গ্রামে৷ এই বাহিনীর সদস্যরা গ্রামের প্রতিটি বাড়ির বাচ্চা মেয়েদের স্কু্লে পাঠানোর ব্যবস্হা করেন৷ টাকার অভাবে কারোর যেন পড়া বন্ধ না হয়, সেই বিষয়ে নজর রাখেন৷ শুধু স্কুলে পাঠানোই নয়, কোথাও বাল্যবিবাহ হচ্ছে খবর পেলেই ছুটে যান বাহিনীর সদস্যরা৷ প্রথমে পরিবারের লোকেদের বোঝানোর চেষ্টা হয়৷ তাতে কাজ না হলে থানা বা পঞ্চায়েতের দ্বারস্হ হন আমিনা খাতুন, রেশমা খাতুন, আলকিমা খাতুনরা৷ নারীপাচারও রুখছেন বাহিনীর সদস্যরা৷ নভেম্বরের শেষ থেকে ডিসেম্বর পর্যম্ত রাজারহাটের বিভিন্ন গ্রামে একাধিক মিছিল করেছেন বাহিনীর সদস্যরা৷ করেছেন পথনাটিকা৷ নিজের বিয়ে আটকানো আমিনা জানালেন, বাবা জোর করে আমার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিল৷ কিন্তু আমি প্রতিবাদ করি৷ নিজের পায়ে না দাঁড়ানো পর্যম্ত বিয়ে করব না৷ আমার বন্ধু ও গ্রামের মেয়েদের এটাই শেখাচ্ছি৷ এই কাজে রোকেয়া কিশোরী বাহিনীকে সাহায্য করছে ‘টুওযর্াডস ফিউচার’ নামে একটি সংগঠন৷ সুন্দরবনের মহিলাদের জন্য কাজ করে ‘দিগম্বপুর অঙ্গীকার’৷ ‘টুওযর্াডস ফিউচার’-এর সম্পাদক সুপ্রিয়া রায়চৌধুরি জানালেন, শুধু ২০১৪ সালেই রাজারহাটের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ৩২ জন মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে৷ আমরা রোকেয়া কিশোরী বাহিনীর সদস্যদের আর্থিক ভাবে সাহায্য করার পাশাপাশি আরও অন্য ধরনের সাহায্যও করে থাকি৷ আমরা ওঁদের নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করি৷ তা ছাড়া মেয়েদের ওপর যে কোনও রকম অত্যাচারের ঘটনা ঘটলেই কী করে পুলিস বা প্রশাসনকে জানাতে হবে, তা-ও আমরা ওঁদের শেখাই৷ তা ছাড়া পড়াশোনা চালিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে গেলে অর্থেরও প্রয়োজন হয়৷ যেটা এঁদের একেবারেই নেই৷ আমরা সেই বিষয়েও এঁদের সাহায্য করে থাকি৷ এই ধরনের আরও একটি সংগঠন সুন্দরবন জাগরণ মহিলা মহাসঙঘ৷ প্রসঙ্গত, কিছুটা একই রকমের ভাবনা নিয়ে উত্তরপ্রদেশেও আছে ‘গুলাবি গ্যাং’৷ তাকে সামনে রেখেই বছরখানেক আগে তৈরি হয়েছিল গুলাব গ্যাং নামে একটি হিন্দি ছবি৷ তবে প্রতিবাদ করতে গিয়ে মাঝে মাঝে অস্ত্রও তুলে নিতেন সেই গ্যাংয়ের সদস্যরা৷ কিন্তু রোকেয়া বাহিনীর সদস্যরা জানালেন, অত্যাচার হলে আমরা নিরস্ত্র ভাবে প্রশাসনের সাহায্য নিয়েই সমস্যার সমাধান করি৷ গত বছর দেড়েক ধরে কাজ হচ্ছে রাজারহাটের বিভিন্ন গ্রামে৷ সুন্দরবনে ‘দিগম্বপুর অঙ্গীকার’ মহিলাদের নিয়ে কাজ করছে গত সাত-আট বছর ধরে৷ সেখানে এখন সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার৷ এই দুটি সংস্হাকেই আর্থিক ভাবে সাহায্য করছে অ্যাকশন এইড. রাজারহাটের আমিনারা নিজেদের কথা বলতে আসবেন সোমবার দুপুরে জীবনানন্দ সভাঘরে৷