ভারতীয় মিডিয়ার খবর: বিএসএফ সদস্য নিহতের ঘটনায় ঢাকার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে দিল্লি

Slider জাতীয় ফুলজান বিবির বাংলা সারাবিশ্ব


ডেস্ক | সীমান্তে একজন বিএসএফ সদস্যের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক মহলে সতর্কতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও ভারতীয় অনলাইন মিডিয়া দি প্রিন্ট খবর দিয়েছে যে, এ বিষয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের মধ্যে একটা চাপা টানাপড়েন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২৫শে অক্টোবর প্রিন্ট রিপোর্টে বলেছে, ভারত এই বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে একটি ‘শক্তিশালী প্রতিবাদ’ জানিয়েছে। একটি সরকারি ব্যাখ্যা দাবি করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, কেন সিংকে গুলি করা হলো, সেই বিষয়ে ঢাকাকে একটি বিশ্বাসযোগ্য উত্তর দিতে হবে। আমরা আশা করি, ঢাকা শিগগিরই এই ব্যাখ্যা দেবে এবং কেসটির ইতি টানবে।

প্রিন্ট বলেছে, ২০১৪ সাল থেকে দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী যৌথ টহলের যে ব্যবস্থা করে আসছিল তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। একজন ঊর্ধ্বতন বিএসএফ কর্মকর্তা বলেছেন, দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে চলমান টেনশনের কারণে দুই দেশের ডিজি পর্যায়ের বৈঠক আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শক্রমে শিগগিরই শুরু করা হবে।
যদিও গত ১৭ই অক্টোবর সীমান্তে ওই হত্যাকাণ্ডের পরে আবার ধীরে ধীরে মাছ ধরা তৎপরতা শুরু হয়েছে। বিএসএফের ইস্টার্ন কমান্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সঞ্জীব সিং বলেছেন, আমি এলাকাটি পরিদর্শন করেছি। ওই এলাকায় ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
উভয় পক্ষ সেক্টর পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন।

তবে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলেছে, ভারতে বিএসএফ এবং বিজিবি’র মহাপরিচালক পর্যায়ের আগামী বৈঠক পুনর্বিবেচনা করছে। এটা হবে নজিরবিহীন। কারণ ২০১৪ সাল থেকে মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক বছরে দু’বার করে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি। গত জুন মাসে ঢাকায় সর্বশেষ বৈঠক বসে এবং আগামী ডিসেম্বরে ভারতে এটা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

প্রিন্ট প্রতিবেদন আরো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, পদ্মা নদীর সীমান্ত নিয়ে ভিন্ন ভারতীয় চিন্তাভাবনা রয়েছে। বলা হয়েছে, ‘এমন জায়গায় বিজয় নিহত হয়েছেন, সেটি একটি নদীমাতৃক সীমান্ত। পদ্মা নদী দ্বারা বিভক্ত। দু’দেশের মধ্যে কৌশলগত বোঝাপড়া রয়েছে যে, এই নদীর মাঝ বরাবর রেখা হবে সীমান্তরেখা। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে, গোটা পদ্মা তাদের অংশে পড়েছে। যদিও ঢাকাকে ভারত স্পষ্ট বলেছে, নদীর মাঝামাঝি হবে দেশের সীমান্তরেখা। উভয় পক্ষের মতভিন্নতা রয়েছে কিন্তু সমস্যার উদ্ভব ঘটে চলতি বছরে। বাংলাদেশে যখন ডিম পাড়ার মৌসুমের কারণে ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ভারত এই আইন অনুসরণ করে না। সুতরাং ভারতীয় জেলেদের ওই এলাকায় মাছ ধরার উপর ভারত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলেছে, বাংলাদেশ পতাকা বৈঠক ডাকা সত্ত্বেও যখন সিং নিহত হয়, তখন পরিস্থিতি খারাপের দিকে মোড় নেয়। পতাকা বৈঠকে গিয়ে অভ্যন্তরে থাকা ভারতীয় মৎস্যজীবীদের ছাড়িয়ে আনার জন্য বিএসএফ সদস্যরা নদী অতিক্রম করে। এবং বাংলাদেশ থেকে ফেরার সময় তারা সিংসহ আরেকজন গুলিবিদ্ধ হন।’

দি প্রিন্ট অবশ্য বলেছে, ‘‘বাংলাদেশি কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলেছে, ১৭ই অক্টোবর পতাকা বৈঠক কখনো ডাকা হয়নি। এবং বিএসএফ অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেছিল। এবং ‘‘ভুল বোঝাবুঝির’’ কারণে সিং গুলিবিদ্ধ হন। দি প্রিন্ট আরো লিখেছে, ভারতকে যেটা হতাশ করেছে, সেটা হলো বিএসএফ জওয়ানের মৃত্যুর পরে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিএসএফের কাছে একটা প্রতিবাদ নোট লিখেছে। তারা বলেছে, আগেভাগে না জানিয়ে জওয়ানরা বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে। ওই নোটে আরো দাবি করা হয়েছে, আত্মরক্ষার্থে গুলি করা হয়েছিল। এবং বিজিবিকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নভেম্বরে ভারত সফর করতে পারেন। বাংলাদেশি সূত্রগুলো বলেছে, দেশের কিছু মহল চলতি মাসের গোড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে খুশি ছিল না। এখন আশা করা হচ্ছে যে, তিনি আবার কলকাতা সফর করবেন ২২শে নভেম্বর। যেখানে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। আর সে কারণেই সীমান্ত দুর্ঘটনার বিষয়টি দুই ডাউন প্লে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।

ওই রিপোর্টে এরপর বলা হয়, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ‘অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী’ যে মন্তব্য করেছেন, তা অনেক বাংলাদেশি হজম করতে পারেননি। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, উভয় পক্ষের উচিত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের উভয় দিক যারা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেন, সেই বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পুরো বিষয়টি পুরোপুরি খতিয়ে দেখা উচিত, যাতে উত্তেজনা না বাড়ে সেজন্য সংযত ও বিরত থাকা উচিত। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক চক্রবর্তী ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ঢাকায় ছিলেন। তিনি বলেছেন, আপনি কখনো একজন ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া নাকচ করতে পারেন না। সেখানে অবশ্যই কিছু মৌখিক উচ্চবাচ্য হয়েছে। সব ঘটনাই পুরোপুরি তদন্ত করা হয়েছে। এটা সব থেকে দুর্ভাগ্যজনক যে, গুলি করার মতো কোনো কারণ ছিল না কিন্তু তবুও তা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনার ফলে তাই বলে সম্পর্ক উল্টে যেতে পারে না।

ভারতের থিংক ট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো জয়তী ভট্টাচার্য। তিনিও মি. চক্রবর্তীর সঙ্গে একমত। মিজ জয়তী বলেন, ‘‘এটা একটা বিচ্যুতি। কখনও মাঠ পর্যায়ে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু দু’দেশের সম্পর্ক এখন শ্রেষ্ঠ। এই ইস্যুতে ভারত হয়তো বাংলাদেশকে বিব্রত করতে চায় না।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *