বৈদ্যুতিক গাড়িতে চলবে দেশ

Slider তথ্যপ্রযুক্তি


বিশ্বজুড়ে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার বেশ বড় হলেও, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আমদানি খুব কম। পরিবেশ দূষণ কমাতে এ ধরনের গাড়ি আমদানিতে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দেবে সরকার। এ জন্য একটি নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। ইলেকট্রিক মোটর রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল নীতিমালা-২০২৩ নামের খসড়াটি গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। চলতি মাসেই এর অনুমোদন শেষে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (চেয়ারম্যান) নূর মোহাম্মদ মজুমদার আমাদের সময়কে বলেন, বৈদ্যুতিক গাড়ি চলাচলের নীতিমালার খসড়াটি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠানো হয়। এর পর সেখান থেকে মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো হয়েছে। তার আগে অংশীজনের মতামত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, গাড়ি কেনার সময় প্রথমেই রক্ষণাবেক্ষণ ও জ¦ালানি খরচের চিন্তা মাথায় আসে। এসব দিক বিবেচনায় বৈদ্যুতিক গাড়ির খরচ তুলনামূলক কম। একই পরিমাণ শক্তি নিয়ে সাধারণ ইঞ্জিনের তুলনায় বেশি দূরত্বে যেতে সক্ষম বৈদ্যুতিক গাড়ি। এক রাতেই সম্পূর্ণ চার্জড হয়ে যায় এই গাড়ি। পরিবেশ সুরক্ষার কথা চিন্তা করলে প্রচলিত জ্বালানিচালিত গাড়ির চেয়ে বৈদ্যুতিক গাড়ি ভালো।

নীতিমালার প্রাথমিক খসড়ায় বলা হয়েছিল, লিথিয়াম আয়ন বা তার চেয়ে উচ্চতর দক্ষতাসম্পন্ন ব্যাটারি বিদ্যুৎচালিত গাড়িতে ব্যবহার করতে হবে। তবে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রচলিত অ্যাসিড ব্যাটারি ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়। তবে এর বিরোধিতা করেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাটারি ব্যবসাসংশ্লিষ্টরা। পরে শর্তটি শিথিল করে মন্ত্রণালয়। চূড়ান্ত খসড়ায় বলা হয়, লিড অ্যাসিড/লিথিয়াম আয়ন/অধিকতর উন্নত ও পরিবেশবান্ধব ব্যাটারি ব্যবহার করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য ব্যাটারির বিষয়ে সচেতন থাকতে হয়। প্রতিনিয়ত চার্জ দেওয়ার ফলে ব্যাটারিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তখন ব্যাটারি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে খরচের বিরাট ধাক্কা সামলাতে হয়। খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, ব্যাটারি অকেজো হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের গাইডলাইন অনুযায়ী ডিসপোজাল করতে হবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে পরিবহন খাত থেকে ৩.৪ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড হ্রাস করার অঙ্গীকার করেছে বাংলাদেশ। এই লক্ষ্য অর্জনে এই সময়ের মধ্যে ব্যবহৃত যানবাহনের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ ইলেকট্রিক মোটরযানে রূপান্তর করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন ব্যতীত এ গাড়ি বিক্রি করা যাবে না বলেও নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে। সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী, গাড়ির ইকোনমিক লাইফ নির্ধারণ করবে সরকার। আর চার্জিংয়ের ব্যাপারে বিদ্যুৎ বিভাগ প্রণীত গাইডলাইনের কথা বলা হয়েছে।

বর্তমানে রাজধানীতে বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার বাণিজ্যিক চার্জিং স্টেশন নেই, তবে ব্যক্তিপর্যায়ে রয়েছে। এ বিষয়গুলো সহজলভ্য হলে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার আরও বাড়বে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, চার্জিং স্টেশনে বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করতে হবে। টেস্টিংয়ের জন্য এককভাবে বা বেসরকারিভাবে রিসার্চ ল্যাব করা যাবে। নীতিমালাটি চূড়ান্ত হয়েছে গত ৬ ফেব্রুয়ারি। এর পর ১৫ ফেব্রুয়ারি এ নিয়ে মতবিনিময় করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

নীতিমালায় বৈদ্যুতিক মোটরযান বলতে বাস, ট্রাক ও ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ব্যাটারিচালিত সাইকেল, রিকশা, রিকশাভ্যান বৈদ্যুতিক যান বলে বিবেচিত হবে না। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ধীরগতির বৈদ্যুতিক মোটরযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। খসড়ায় ধীরগতি বলতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩০ কিলোমিটার বেগে চলাচলকারী যানবাহনকে বোঝানো হয়েছে। আমদানির ক্ষেত্রে যানটি অবশ্যই নতুন হতে হবে। ব্যবহৃত ইলেকট্রিক মোটরযান আমদানি করতে হলে গাড়িটি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত লাইফটাইম থাকতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিবেশ দূষণ ও কার্বন নিঃসরণ রোধে বৈদ্যুতিক গাড়িকে ভবিষ্যতের বাহন বলা হচ্ছে। পাশের দেশ ভারতেও চলছে বিদ্যুৎচালিত প্রাইভেট কার, বাস। চীনও এই গাড়ি উৎসাহিত করছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, আগামী দশক পর জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত গাড়ি থাকবে না।

তথ্যমতে, বৈদ্যুতিক গাড়ির মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত প্রতিষ্ঠান টেসলা। যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় এই বৈদ্যুতিক গাড়িও এখন বাংলাদেশের রাস্তায় চলছে। দেশে প্রথম টেসলার বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি হয় ২০১৭ সালে। ঢাকার রয়েল মোটরস নামে একটি প্রতিষ্ঠান আমদানি করে গাড়িটি। শুল্ককরসহ খরচ পড়ে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। তবে শুধু টেসলাই নয়, ইউরোপের অডি, মার্সিডিজ কিংবা পোরশে ব্র্যান্ডের বৈদ্যুতিক গাড়িও চলছে দেশের রাস্তায়। সংখ্যায় কম হলেও এ ধরনের গাড়ি পথচারীদের দৃষ্টিতে পড়তেও পারে।

বাংলাদেশে এক সময় শতভাগ গাড়িই ছিল জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত। এরপর আসে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের সমন্বয়ে চালিত হাইব্রিড গাড়ি। তবে দেরিতে হলেও দেশের সড়কে নেমেছে বৈদ্যুতিক গাড়ি। এখন গণপরিবহনে দেখা যাবে বৈদ্যুতিক গাড়ি। ভারতীয় ঋণে ১০০ বৈদ্যুতিক বাস আমদানি করবে বিআরটিসি। দ্বিতল এই এসি বাস কেনার প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। গাড়িগুলো দেশে আমদানির পর চলাচল করবে বিআরটিসির মিরপুর, মতিঝিল, জোয়ারসাহারা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম ডিপোতে। এ জন্য থাকবে সাবস্টেশন, চার্জিং স্টেশন, ওয়াশিং প্ল্যান্ট ও ওয়ার্কশপ। ইতোমধ্যে ডিটেইলড প্রজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর) পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *