এ কেমন বর্বরতা

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

ঢাকা: এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫। একই সঙ্গে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন মেডিকেল ও বুয়েটে। প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন থাকায় তিনি বেছে নেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে। মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি শিক্ষার্থী নামের কুলাঙ্গাররা। নির্মম, নিষ্ঠুর কায়দায় তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বুয়েট ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মী। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে অন্তত নয় জনকে আটক করা হয়েছে। মামলা দায়ের করা হয়েছে ১৯ জনের বিরুদ্ধে। বুয়েটের শের-ই বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে হত্যা করা হয় একই হলের ২০১১নম্বর কক্ষে।

এ ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। আবরারের সহপাঠিদের দাবি সাম্প্রতিক একটি ইস্যুতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় বুয়েট ছাত্রলীগের নেতারা আবরারকে ডেকে নিয়ে পিঠিয়ে হত্যা করে। আবরার ফাহাদ ইলিক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ট্রিপল-ই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়। হত্যার পর হত্যাকারীরা আবরারের নিথর দেহ দ্বিতীয় তলার সিঁড়িতে ফেলে যায়। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকায় আটক ছাত্রলীগ নেতারা হলেন, বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মোস্তাকিম ফুয়াদ, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ, উপ-সমাজ কল্যাণ সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা, গ্রন্থ ও গবেষণা সম্পাদক ইশতিয়াক মুন্সি, সহ-সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু।

এদিকে, আবরার হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল অবস্থা বিরাজ করছে বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার প্রতিবাদ ও হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। বিক্ষোভ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও। আর আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ছাত্রলীগ। রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখার সময়ও শিক্ষার্থীরা শের-ই বাংলা হল প্রাধ্যক্ষের কক্ষের সামনে বিক্ষোভ করছিলেন। রাতে আবরারের বাবা বরকতুল্লাহ ১৯জনকে আসামী করে চকবাজার থানায় ছেলে হত্যার মামলা করেন। এর আগে সন্ধ্যায় ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, বুয়েট শিক্ষার্থী ফাহাদ হত্যার ঘটনায় মোট নয়জনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া সিসিটিভির ফুটেজ দেখে জড়িত এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে বিকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) ফুটেজ দেখে ছয়জনকে সনাক্ত করা হয়েছে। জানা গেছে, রোববার রাত ৮টার দিকে উপ আইন বিষয়ক সম্পাদক অমিত সাহার নেতৃত্বে তিন ছাত্রলীগ নেতা আবরারকে ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নেয়। এরপর সেখানে তাকে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কিনা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এক পর্যায়ে ওই কক্ষে আরো কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে ডেকে এনে আবরারকে মারধর করা হয়। মারধর করতে করতে তার থেকে বিভিন্ন জবানবন্দী আদায় করার চেষ্টা করে ছাত্রলীগ নেতারা। একজন স্ট্যাম্প ও লাঠি দিয়ে তাকে আঘাত করে। এক পর্যায়ে রাত ৩টার দিকে আবরার অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে দ্বিতীয় তলার সিঁড়িতে ফেলে যায় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। এরপর সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবরারের নিথর দেহ দেখে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসক ও হল প্রশাসনকে খবর দেন। চিকিৎসক এসে আবরারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। এরপর হল প্রশাসন সকাল ৬টার দিকে আবরারের নিথর দেহ প্রথমে হল ক্যান্টিনে নিয়ে আসেন। এরপর সেখান থেকে সাড়ে ৬টা দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বুয়েটের চিকিৎসক ডা. মাসুক এলাহী জানান, রাত তিনটার দিকে হলের শিক্ষার্থীরা আমাকে ফোন দেয়। আমি হলে গিয়ে সিঁড়ির পাশে ছেলেটিকে পড়ে থাকতে দেখি। ততক্ষণে ছেলেটি মারা গেছে। তার সারা শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই। আবরারকে মারধরের সময় ওই কক্ষে উপস্থিত ছিলেন শাখা ছাত্রলীগের একজন গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ঘনিষ্টজনকে জানান, আবরারকে শিবির সন্দেহে রাত আটটার দিকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে আনা হয়। সেখানে আমরা তার মোবাইলে ফেসবুক ও মেসেঞ্জার চেক করি। ফেসবুকে বিতর্কিত কিছু পেইজে তার লাইক দেয়ার প্রমাণ পাই। সে কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাই। আবরারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বুয়েট ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুজতবা রাফিদ, উপ সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ আইন সম্পাদক অমিত সাহা। পরবর্তীতে প্রমাণ পাওয়ার পরে চতুর্থ বর্ষের ভাইদের খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে বুয়েট ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার সেখানে আসেন। একপর্যায়ে আমি রুম থেকে বের হয়ে আসি। এরপর হয়তো ওরা মারধর করে থাকতে পারে। পরে রাত তিনটার দিকে শুনি আবরার মারা গেছে। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে ফাহাদের একজন রুমমেট ঘটনার বিষয়ে বলেন, টিউশনি শেষে রুমে রাত নয়টার দিকে আসি। তখন আবরার রুমে ছিলো না। অন্য রুমমেটদের কাছ থেকে জানতে পারি তাকে ছাত্রলীগের ভাইয়েরা ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে গেছে। পরে রাত আড়াইটার দিকে হলের একজন এসে আবরার আমাদের রুমমেট কিনা জানতে চান। আমি হ্যাঁ বললে সিঁড়ি রুমের দিকে যাওয়ার জন্য বলেন। পরে সিঁড়ি রুমের দিকে গিয়ে দেখি তোশকের ওপরে আবরার পড়ে আছে। পরে ডাক্তার এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর শের-ই বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ বলেন, ডাক্তারের ফোন পেয়ে হলে আসি। এসে ছেলেটির লাশ পড়ে আছে দেখতে পাই। ডাক্তার জানান, ছেলেটি আর নেই। পরে তাকে পুলিশের সহায়তায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, পুলিশ ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে। হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে সব ধরণের সহায়তা করা হবে। এদিকে দুপুরে আবরারকে যে কক্ষে হত্যা করা হয় সে কক্ষ (২০১১) থেকে দু’টি লাঠি, চারটি স্ট্যাম্প, একটি চাপাতিসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশ। একটি স্ট্যাম্পে শুকনা রক্তের দাগ রয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। পুলিশের ক্রাইম সিন ইউনিট, মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ও চকবাজার থানা পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। এছাড়াও কক্ষটি থেকে পুলিশ তিনটি খালি মদের বোতল, একটি অর্ধেক ভরা মদের বোতল (পানি নাকি মদ নিশ্চিত নয়)। দুপুরে শের-ই বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষটি পরিদর্শন করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। এসময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, আবরারকে পিটিয়ে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে। ঘটনাটি তদন্তে ডিবি, থানা পুলিশ কাজ করছে। যারা জড়িত তারা অবশ্যই আইনের আওতায় আসবে। তিনি বলেন, আমরা আলামত সংগ্রহ করেছি। সেগুলো পর্যালোচনা করছি। যারা জড়িত তাদের পূর্ণাঙ্গ বিবরণী তদন্তে চলে আসবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, তদন্তে রাজনীতিক প্রভাব পড়বে না। এদিকে ঘটনার পরপরই গাঢাকা দিয়েছেন ২০১১ নম্বর কক্ষের শিক্ষার্থীরা। এ কক্ষের শিক্ষার্থীরাই আবারারকে ডেকে এনে হত্যা করে। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপ-দপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ, সমাজসেবা বিষয়ক উপ-সম্পাদক ও বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশারফ। ওই কক্ষের আরেক শিক্ষার্থী বর্তমানে দুর্গাপূজার ছুটিতে বাড়িতে অবস্থান করছেন। মারুফ ইসলাম নামে আবরারের এক সহপাঠী বলেন, ভারতবিরোধী স্ট্যাটাস দেয়ায় তার ওপর ক্ষুব্ধ হয় ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা। তার বিরুদ্ধে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু সে আমার সাথে এর আগে তিনদিনের তাবলীগে গিয়েছিল।

লাঠির আঘাতে আবরারের মৃত্যু:
এদিকে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে এক সংবাদ সম্মেলন করেন ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. মো. সোহেল মাহমুদ। তিনি বলেন, দুপুর দেড়টার দিকে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফাহাদের হাতে, পায়ে ও পিঠে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এই আঘাতের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। আঘাতের ধরণ দেখে মনে হয়েছে, ভোঁতা কোনো জিনিস যেমন, বাঁশ বা স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তবে তার মাথায় কোনো আঘাত নেই। কপালে ছোট একটি কাটা চিহ্ন রয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তার শরীরে বিশেষ কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। হাতে, পায়ে ও পিঠে আঘাতের স্থানে রক্তক্ষরণ ও পেইনেই তার মৃত্যু হয়েছে।

মারধরের সঙ্গে জড়িতরা সবাই ছাত্রলীগের পোস্টেড: বুয়েট ছাত্রলীগ সভাপতি
এদিকে, আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় জড়িতরা ছাত্রলীগের পোস্টেড বলে স্বীকার করেছেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার জামিউশ সানি। গতকাল দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন। জড়িতদের সবাইর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, রাতে খবর পাওয়ার পরই আমি সেখানে (ঘটনাস্থল) যাই। কয়েকজন তাকে ওই রুমে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে মারধর করা হয়েছে বলে শুনেছি। যারা মারধরে জড়িত তারা সবাই ছাত্রলীগের পোস্টেড নেতা। তিনি আরো বলেন, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমন একটি ঘটনায় ছাত্রলীগের কর্মীরা জড়িত থাকতে পারে- এমন ভাবাও কষ্টের। এটা খুবই ন্যাক্কারজনক। সানি বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে ছাত্রলীগের ছেলে হিসেবে নয়, অপরাধী যে-ই হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি
এদিকে আবরার হত্যার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ছাত্রলীগ। গতকাল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সাক্ষারিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তদন্ত কমিটিকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটির দুই সদস্য হলেন- সহসভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক আসিফ তালুকদার।

বিক্ষোভে উত্তাল ঢাবি-বুয়েট
এদিকে, আবরার হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। গতকাল সকাল থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ অব্যাহত রাখছে শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা আবরারের হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করেন। সকাল থেকে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা আবরার হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করে। এসময় তারা কয়েক দফায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চায়। কিন্তু প্রশাসন এতে অস্বীকৃতি জানায়। দুপুরে হল প্রাধ্যক্ষের কার্যালয় ঘেরাও করে শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা সিসিটিভি ফুটেজ না দেখানো পর্যন্ত প্রাধ্যক্ষের কার্যালয় ছাড়বে না বলে ঘোষণা দেয়। বুয়েট শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসও প্রদক্ষিণ করেন। দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও প্রদক্ষিণ করে। তবে ঢাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল আসতে দেখে শের-ই বাংলা হলের সবকটি ফটক বন্ধ করে দেয় হলটির কিছু শিক্ষার্থী। এসময় বৃষ্টি উপেক্ষা করে চলে এ বিক্ষোভ। বিক্ষোভ থেকে ‘বিজেপির দালালরা ; হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই; আবরার হত্যার ফাঁসি চাই’, ‘ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হুঁশিয়ার সাবধান,’ ‘হলে হলে দখলদারিত্ব; বন্ধ কর, করতে হবে’, ‘বুয়েট তোমার ভয় নেই, আমরা আছি লাখো ভাই’, ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘হলে হলে সন্ত্রাস রুখে দাড়াও ছাত্র সমাজ’, ‘শিক্ষা, ছাত্রলীগ, একসাথে চলে না’, ‘সন্ত্রাসীদের কালো হাত, ছাত্রলীগের কালো হাত, ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভে কয়েকজন শিক্ষকও উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিলটি বুয়েটে ক্যাম্পাসও প্রদক্ষিণ করে। বিক্ষোভকারীরা বলেন, আবরার হত্যার পেছনে ছাত্রলীগের অতিমাত্রায় ভারতপ্রেম প্রেরণা জুগিয়েছে। দেশপ্রেমিক আবরারের ভারতবিদ্বেষী স্ট্যাটাস দেয়ার কারণে তাকে খুন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর। প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশনসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতারা। এদিকে, ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ শেষে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘আজকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কি হচ্ছে? প্রত্যেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দলদাস প্রশাসনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়ার্ত পরিবেশ কায়েম করা হয়েছে। যেখানে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের ভয়ে অন্যরা কথা বলতে ভয় পাচ্ছে, একটা প্রতিবাদ করতে ভয় পাচ্ছে।’ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনগুলোকে শিক্ষার্থীদের ওপর পরিচালিত নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডের সহযোগী দাবি করে ডাকসুুর ভিপি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই দলকানা প্রশাসন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের এই অপকর্মের অন্যতম সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। যেই কারণে আপনারা দেখেছেন এই বুয়েটে কিছুদিন আগে যখন নিরাপদ সড়ক আন্দোলন হয়েছিল তখন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে তখনকার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে ওই ছেলেকে বেদম প্রহার করেছিলেন, পরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। আমরা একটা কথা বলতে চাই, কোনো শিক্ষার্থী যদি অন্যায় অপরাধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন রয়েছে তাদের হাতে তুলে দেবেন তারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু ছাত্রলীগকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের গায়ে আঘাত করার অধিকারটা কে দিল?’ এদিকে বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এসময় বক্তারা বলেন, বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যায় জড়িত সকলকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত বিচার করতে হবে। এসময় সকল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, বুয়েটের মত একটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন মেধাবী ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করার মাধ্যমে ছাত্রলীগ নিজেদেরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে আবারও প্রমাণ করছে। আবু বক্কর হত্যাকাণ্ড এবং বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের বিচারের নামে যে প্রহসন হয়ছে তেমনি এই বিচার নিয়ে যদি এরকম প্রহসন করার চেষ্টা করা হয় তাহলে ছাত্রদল রাজপথে নেমে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এর জাবাব দিবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *