বাড়িতে ঢোকার সকল রাস্তা বন্ধ, দুই শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

Slider রংপুর

হাসানুজ্জামান হাসান ,লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় ছোট শিশুর ঝগড়াকে কেন্দ্র করে গোলাম রাব্বানী নামে একজনের পরিবারকে বেধড়ক মারধোর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে, বাড়িতে ঢোকার সকল রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে একদল উশৃংখল লোক সাফিউল ইসলাম গং এর বিরুদ্ধে। জেএসসির টেস্ট পরীক্ষা শুরু হলেও লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত ৮ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। নিজ বাড়িতে ঢুকতে না পেরে ৫দিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে ঐ পরিবারটি।

এদিকে ইউপি চেয়ারম্যান ও থানা পুলিশ গিয়ে রাব্বানীর বাড়িতে ঢোকার রাস্তায় দেয়া বেরা খুলে দিতে বললেও তা আমলে নেননি সাফিউল ইসলাম গং। এ ঘটনায় গোলাম রাব্বানী (৪২) ১০ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করলেও এখনও তার কোন সমাধান হয়নি।

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের পুর্ব সারডুবি (বড় মসজিদ) এলাকার ঘটনাস্থলে গেলে এমননি চিত্র চোখে পড়ে। এর আগে (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে ঐ এলাকায় এ ঘটনাটি চলছে।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের পুর্ব সারডুবি (বড় মসজিদ) এলাকার মৃত সোলেমান আলীর পুত্র গোলাম রাব্বানী (৪২) বসবাস করেন ঐ এলাকার মমতাজ উদ্দিনের ছেলে সাফিউল ইসলাম গং এর ৮-১০টি পরিবারের মাঝে বাড়ির করে। দীর্ঘদিন যাবতকাল রব্বানীর পরিবারের সাথে ঝগড়াবিবাদ লেগেই আছে সাফিউল ইসলাম গং এর। এমত অবস্থায় গত (২২ সেপ্টেম্বর) রবিবার সকাল ১০ টার দিকে রব্বানীর ছোট ছেলের সাথে সাফিউল ইসলাম গং এর একটি ছোট বাচ্চা খেলা খেলছিলো। খেলার সময়ে বাচ্চা দুটির মাঝে ঝামেলা হলে তারা উভয়ই কান্নাকাটি করে। ফলে ছোট বাচ্চাদের ঝগড়া পরবর্তীতে বড়দের মাঝে লেগে যায়। এসময় সুযোগ বুঝে সাফিউল ইসলাম গং এরা গোলাম রাব্বানীর বাড়িতে গিয়ে রব্বানী ও তার স্ত্রী মিনা বেগম (৩৫)কে লাঠিসোঁটা দিয়ে বেধড়ক মারধর করলে তারা গুরুতর আহত হয়। পরে এলাকাবাসী ছুটে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন।

এলাকাবাসীর সহযোগিতায় গোলাম রব্বানী ও তার স্ত্রী মিনি বেগম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসা নেন। যার রেজি নং ১১৩১২/৪০ ও ১১৩১৯/৩৯।
এদিকে রব্বানী ও তার স্ত্রী বাড়িতে না থাকায় তার স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের প্রাণনাশের বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখি বাড়ি থেকে বের করে দেয়। রব্বানীর পরিবারেরা যাতে আর বাড়িতে প্রবেশ করতে না পারে এজন্য তার বাড়ি ঢোকার সকল রাস্তায় ছোটছোট সুপারির গাছ রোপন করে বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেয় সাফিউল ইসলাম গং এরা।

গোলাম রব্বানী ও তার স্ত্রী মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হলে পরিবার সহ বাড়িতে গিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেন। এসময় সাফিউল ইসলাম গং এর বিভিন্ন হুমকিধামকি ও লাঠিসোঁটার ভয়ে তারা বাড়ি ছেড়ে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে এসে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নেন। তখন থেকে ৫দিন এযাবতকাল তার অন্যের বাড়িতে ছোট একটি খুপরি ঘরে বসবাস করছে। গোলাম রাব্বানী তার বাড়ি ঢোকার জন্য স্থানীয় মাতব্বর, মেম্বার ও চেয়ারম্যানের দ্বারেদ্বারে ঘুরে আজও তার বাড়িতে ঢোকার রাস্তার বেড়া সরাতে পারেনি। তার নিজ বাড়ি ঢোকার জন্য এবং সাফিউল ইসলাম গং এর বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেও পায়নি কোন সমাধান। ফলে কটিন আতংকে আতংকিত হয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে রব্বানীর পরিবার।

গোলাম রব্বানীর ছেলে ও পাইকারটারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণীতে পড়ুয়া মাসুদ রানা (১৪) বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে আমার জেএসসির টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আমার বই, খাতা কলম, কাপড়চোপড় বাড়িতে থাকায় আমি লেখাপড়া করতে পারছিনা। টেস্ট পরীক্ষায় ভালো ফলাফল না করলে স্যার আমাকে জেএসসি পরীক্ষা দিতে দিবেনা, এ কথা বলেই অঝোরে কান্নাকাটি করেন মাসুদ রানা।

একই স্কুলে ১০ম শ্রেনীতে পড়ুয়া রব্বানীর বড় মেয়ে বলেন, আর কিছুদিনের মধ্যে আমার এসএসসির টেস্ট পরীক্ষা। আমার বই, খাতা, কলম, কাপড়চোপড় ঘরের মধ্যে থাকায় আমি লেখাপড়া করতে পারছিনা। অন্যের বাড়িতে গোসল করে যে অন্য কাপড় পরব তারও কোন উপায় নাই। সাফিউল ইসলাম গং এরা আমাদের দুই ভাইবোননের লেখাপড়ার ব্যাঘাত ঘটাতে আমাদের বাড়ির রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানা ঐ দুই শিক্ষার্থী।

বাড়িতে ঢোকার সকল রাস্তা বেড়া দিয়ে বন্ধ করার বিষয়ে জানতে চাইলে সাফিউল ইসলাম বলেন, রব্বানী আমার বাবাকে অপমান করেছে বিধায় আমরা তার বাড়িতে ঢোকার রাস্তা বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছি এবং এই এলাকায় আমরা তাকে বসবাস করতে দিবনা। তাতে কার কি করার আছে করবে। আমি কাউকেই ভয় পাইনা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসী অনেকেই বলেন, সাফিউল গংরা খুবই খারাও প্রকৃতির লোক। তারা রাব্বানীকে এলাকায় ছাড়া করার জন্য প্রায়ই তার পরিবারের উপর আক্রমণ করে। এলাকার মুরুব্বি, মেম্বার ও চেয়ারম্যান কাউকেই সাফিউক গংরা মানেনা বলে আরও জানান ঐ এলাকার লোকজন।

এবিষয়ে কথা হলে বড়খাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হেলা মোস্তফা জামাল সোহেল বলেন, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে দুইদিন যাই। সাফিউল গংকে উপযুক্ত বিচারের আশ্বাস দিয়ে রব্বানীর বাড়ির ঢোকার জন্য রাস্তা বন্ধ করা বেরা সরিয়ে নিতে বললেও তারা আমার কথা আমলে নেয়নি। ফলে আমি রব্বানীকে আইনের আশ্রয় নিতে বলি।

হাতীবান্ধা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এবিষয়ে গোলাম রাব্বানী নামে একজন থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *