মানবতার শৃঙ্খলে বন্দি সমাজ, সমতার লড়াই বহুদূর!

Slider টপ নিউজ বাংলার মুখোমুখি সাহিত্য ও সাংস্কৃতি

সামজিকতা ও নৈতিকতার মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, আদিম কাল থেকেই। তবে কয়েক যুগ ধরে অনেক বেশী। ইদানিং এর মাত্রা এত বেড়ে গেছে যে, আমরা নৈতিক অধঃপতনের কুফল বর্ণনা করার ভাষা হারিয়ে ফেলছি অনেক সময়। কারণ এমন কিছু নতুন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, যে সব অপরাধের বর্ননা করা লজ্জ্বাস্কর। সন্তানকে বাঁচাতে মা বা, বাবা, মারা যাচ্ছেন। আবার সন্তনকে খুন করছেন মা বা বাবাই। আবার সন্তানও খুন করছেন বাবা অথবা মাকে, এমনকি বাবা-মাকেও। এর চেয়ে লোমহর্ষক ঘটনাও ঘটছে। মেয়ের ইজ্জ্বত বাঁচাতে গিয়ে মা বা বাবা খুন হচ্ছেন। আবার মেয়েকে ধর্ষনের দায়ে অভিযুক্ত হচ্ছেন বাবাও। এসব লজ্জা ও ঘৃনাজনক অনৈতিক কাজগুলো সমাজ থেকে সামাজিকতা বলতে যা বুঝায়, তাকে তাড়িয়ে দিতে চাইছে বলেই মনে হচ্ছে।

একটি শান্তিপূর্ন সমাজের সামাজিকতার সঙ্গে অনৈতিকতার এই সংঘাত, আমাদের অনেক সত্যকেই অসত্য বলে সন্দেহ সৃষ্টি করিয়ে দেয়। কারণ ভাল ও মন্দ কাজ করার মানুষ যখন একই ব্যাক্তি হয়, তখন কোনটা কোন কাজ, তা বুঝা মুশকিল হয়ে যায়। দেখা যায়, অনেক ভিক্ষুক ক্ষুদা নিবারণের জন্য ভিক্ষা করেন। আবার অনেক ব্যাক্তি ভিটে মাটি ও চাল চুলো থাকতেও ভিক্ষা করেন, বড় লোক হওয়ার জন্য।

এমন দৃশ্যও দেখা যায়, প্রকৃত ভিক্ষুক স্বাভাবিকভাবে ভিক্ষা করতে গিয়ে কম টাকা পায়। বেশী করে টাকা পাওয়ার জন্য নিজে বা নিজের পরিবার বা নিজ সন্তানকে ভুয়া লাশ বানিয়ে বা পাগল সন্তান বলে শিকল পড়িয়ে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে। বিক্ষাবৃত্তির এই ধরণের নতুন নতুন কৌশলের কাছে হার মেনে যায় বাস্তব ও সত্য দৃশগুলো। যেমন কোন ভিক্ষুক যদি সত্যি সত্যি তার পরিবারের কারো লাশ রাস্তার পাশে রেখে টাকা চায় বা নিজের অসুস্থ সন্তানেন কথা বলে বা অসুস্থ সন্তান নিয়ে ভিক্ষা চায় তবুও মানুষ সন্দেহ করে। কারণ ভাল ও মন্দ কাজ করার ব্যাক্তি যখন একই ধরণের হয়, তখন কোনটা সত্য তা বুঝা মুশকিল হয়ে যায়। ফলে নৈতিকতার এই বিপর্যয় সামাজিকতাকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়ায় আজ সমাজ বিপদগামী। আর এতে মহাবিপদে পড়ে যাচ্ছে জাতি।

গতকাল ইফতারের একটি দাওয়াতে যাওয়ার সময় গাজীপুর শহরের রেলক্রসিং-এ পাওয়া গেলো একটি দৃশ্য। এক মা তার সন্তানকে রেলক্রসিং এর একটি পিলারের সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে ভিক্ষা করছেন। শিকল পড়া সন্তানকে মানসিক রোগী বলে সন্তানকে দিয়েই ভিক্ষার বাটি বাড়িয়ে দিচ্ছেন ভিক্ষার জন্য। দেখা গেলো, ভিক্ষার এই নতুন দৃশকে কেউ বলছেন, প্রতারণা, আবার কেউ কেউ ভিক্ষা দিচ্ছেন। অনেক নারীদের এই শিকলপড়া ছেলেকে ভিক্ষা দিতে গিয়ে চোখ মুছতেও দেখা গেছে। আবার অনেকে উপহাস করে খারাপ মন্তব্য ছুঁড়ে দিয়ে চলে যাচ্ছেন।

নিজের সন্তানকে শিকল দিয়ে বেঁধে কোন মা যদি ভিক্ষা করাতে পারেন তবে সেটা কিসের মধ্যে পড়ে? দৃশ্য যদি সঠিক হয়, তবুও প্রশ্ন, এই ভাবে কেন? আর যদি দেখা যায়, এটি ভিক্ষা করার একটা আধুনিক পদ্ধতি, তবে বলতে হবে, আধুনিকতায়ও ভুল আছে, যা অন্যায়ের মধ্যে পড়ে যায়।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, নৈতিকতার অধঃপতনের কারণে সামাজিক অপরাধ হু হু করে বাড়ছে। একই সঙ্গে আধুনিকতার অজুহাতে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন অপরাধ, যা ভয় ও ভয়ঙ্করও বটে। এই অবস্থা চলতে থাকলে সামনে নৈতিকতার পরিধি এমন ছোট হবে যে, নৈতিকতা বলতে বুঝাবে জলাশয় আর মহাসাগর হয়ে যাবে অনৈতিকতা। তখন আর ফিরে আসার সময় থাকবে না। তাই এখনি সময় ঘুরে দাাঁড়াবার।

ভিক্ষাবৃত্তি কেউ সমর্থন করে না। তাই বলে ভিক্ষুককে তাড়িয়ে দিতে হবে বা তিরস্কার করতে হবে এমনটি হওয়াও উচিত নয়। বরং নিজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সাধ্যমত চেষ্টা করে ভিক্ষাবৃত্তিকে উঠিয়ে দিয়ে ভিক্ষকুদের অন্য কাজ দিতে সামর্থ্য তৈরী করতে হবে। কেউ ৩০ তলা ভবনের উপর থেকে নষ্ট খাবার ফেলবে আর নীচে বসে ক্ষুদার্থ মানুষ দিনের পর দিন অপক্ষো করবে ক্ষুদা নিবারণের জন্য, এমনটি হওয়ার কারণেই ক্ষিপ্ত নিম্নগোষ্ঠি, নতুন নতুন ধরণের অপরাধ তৈরী করে সমাজকে অনৈতিকতার শৃঙ্খলে বন্দি করে ফেলছে। তাই উচিত উপরতলা ও নীচতলার মধ্যে একটি সমতার তলা তৈরী করা, যেখানে বসবাস করবে সবাই। ফলে আর কাউকে ক্ষুদা নিবারণে কারো জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।

এই সব বিষয়ে কবি নজরুল তার চিঠিত বলেছিলেন, ভিক্ষা যদি কেউ তোমার কাছে চাইতেই আসে , অদৃষ্টের বিড়ম্বনায় তাহলে তাকে ভিক্ষা নাই ই দাও , কুকুর লেলিয়ে দিওনা। আঘাত করার একটা সীমা আছে, সেটাকে অতিক্রম করলে আঘাত অসুন্দর হয়ে আসে আর তক্ষুনি তার নাম হয় অবমাননা।

রিপন আনসারী
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী
তাং ০৩/০৬/১৯

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *