মিয়ানমারে সাংবাদিক হয়রানি, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন একজন প্রধান সম্পাদক

Slider সারাবিশ্ব


ডেস্ক: রাখাইনভিত্তিক বেসরকারি সংবাদ সংস্থা ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া গ্রুপের প্রধান সম্পাদক অং মার্ম ও’কে হয়রান ও গ্রেপ্তারের হুমকি অবিলম্বে বন্ধ করতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। তার বিরুদ্ধে ঔপনিবেশকি আমলের ‘আনলফুল এসোসিয়েশন অ্যাক্ট’-এর অধীনে ‘আনস্পেসিফাইড’ নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করেছে কর্তৃপক্ষ। গত ১লা মে করা ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য অং মার্ম ও আত্মগোপন করে আছেন। এ অভিযোগে তিনি দোষী প্রমাণিত হলে ৫ বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানা হতে পারে।

সিপিজের রিপোর্টিংয়ে দেখা গেছে সশস্ত্র লড়াইয়ের খবর কাভারেজ দেয়ার বিষয়কে গলাটিপে ধরতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ মাঝে মাঝেই ব্যবহার করে ‘আনলফুল এসোসিয়েশন অ্যাক্ট’। উল্লেখ্য, পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের রাজনীতি, সমাজ ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা নিয়ে নিয়মিত রিপোর্ট করে ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া গ্রুপ। ওই রাখাইনেই বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। তারা নৃশংসতা চালিয়ে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমকে দেশছাড়া করেছে। তারা এখন নির্মম অবস্থায় বসবাস করছে বাংলাদেশে।

সিপিজের দক্ষিণপূর্ণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র প্রতিনিধি শন ক্রিসপিন বলেন, মিয়ানমারে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার এমন অবনতি হয়েছে যে, এখন একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য আত্মগোপন করতে হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে ‘আনডিসক্লোজড’ বা অজ্ঞাত অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সাংবাদিক অং মার্ম ও’র বিরুদ্ধে অবিলম্বে হয়রানি বন্ধ করা উচিত মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের। একই সঙ্গে কোনো প্রতিশোধের আতঙ্কমুক্ত হয়ে অব্যাহতভাবে রিপোর্ট করতে দেয়া উচিত তার নিরপেক্ষ মিডিয়া গ্রুপকে।

এরই মধ্যে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্পেশাল ব্রাঞ্চ পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে অং মার্ম ও’র সহকর্মী ও তার পরিবারের সদস্যদের। এর মধ্যে রয়েছেন তার স্ত্রী, মা, ভাই। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে অং মার্ম কোথায় আছেন। ইমেইলের মাধ্যমে এসব কথা সিপিজে’কে জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরো বলেছেন, এ মাসের শুরুতে তার বাড়ি তল্লাশি করেছে পুলিশ। ওই সময়ে সামান্যর জন্য তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে পেরেছেন।

অং মার্ম ও বলেছেন, ৫ ও ৬ মে সিতওয়ের এক নম্বর পুলিশ স্টেশনে এ মামলায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডেভেডলমেন্ট মিডিয়া গ্রুপের সাংবাদিক নাই উইন সান এবং থেট নাইংকে। এসব জিজ্ঞাসাবাদের সময় কোন খবর বা কি অপরাধের জন্য এসব করছে সে বিষয়ে ইঙ্গিত দেয় নি পুলিশ।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জনসংযোগ বিষয়ক শাখা দ্য ট্রু নিউজ ইনফরমেশন টিমের সঙ্গে তাদের মন্তব্যের জন্য ফোন করে সিপিজে। কিন্তু তারা কোনো জবাব দেয় নি। মিয়ানমারে মিডিয়া বিষয়ক যেকোনো বিরোধ মীমাংসার জন্য নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান মিয়ানমার প্রেস কাউন্সিল। তাদের কাছে এ মামলায় হস্তক্ষেপ চেয়ে ৮ই মে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন অং মার্ম ও। তিনি বলেছেন, আজ অবধি ওই পরিষদ এ চিঠির কোনো জবাব দেয় নি।

মিয়ানমারের সংবাদ মাধ্যমের ওপর ক্রমশ বাড়ছে সেনাবাহিনীর চাপ। তার একটি উদাহরণ হলো অং মার্ম ও। এ ছাড়া ১লা এপ্রিল দ্য ইরাবতী পত্রিকার বার্মিজ ভাষা সংস্করণের সম্পাদক ইয়ি নি’র বিরুদ্ধে অনলাইনে মানহানীর ফৌজদারি অভিযোগ দায়ে করেছে। এই অভিযোগ করা হয়েছে টেলিযোগাযোগ বিষয়ক আইনের ৬৬(ডি) ধারার অধীনে। এর আওতায় দু’ বছরের জেল হওতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *