রেলের হুইসেলে উঠে বসলো লাশ!

Slider বিচিত্র

রেলগেটে একটি ট্রাক (টাটা-৪০৭) দাঁড়িয়েছিল। এদিকে চলছে ক্রমাগত হরিধ্বনি।

হঠাৎ চক্ররেলের হুইসেল। তারপরই আজব কাণ্ড। মরার খাটে সটান ‘উঠে বসলেন’মৃত বৃদ্ধা। ভয়ে তখন আত্মারাম খাঁচাছাড়া সবার। শোকার্ত ছেলের চিৎকার, “মরা মা উঠে বসেছে। ” ততক্ষণ রেলগেট পেরিয়ে শ্মশানের সামনে পৌঁছে গেছে ট্রাকটি। ঘটনাটি কলকাতায় নিমতলা শ্মশানের একটু আগেই। হঠাৎ করে মৃত মা উঠে বসায় চাঞ্চল্য ছড়ায় আত্মীয়-পরিজনদের মধ্যে। অবশ্য পরে বিষয়টি পরিষ্কার হয়।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এদিন সকালে মৃত্যু হয় বৃদ্ধা নমিতা সাহার। তার অন্ত্যেষ্টির আয়োজন করেন ছেলে রাজু সাহা ও আত্মীয়, প্রতিবেশীরা। ট্রাক ভাড়া করে বৃদ্ধার লাশ নিমতলা ঘাটে নিয়ে আসার জন্য তৈরি হয় পরিবার। নিমতলা ঘাটে ঢোকার আগে চক্ররেলের লাইনের সামনে আসতেই তারা দেখেন রেলগেট বন্ধ। শোনা যায় ট্রেনের শব্দ। রেলগেটের কাছে এসে হুইসেল বাজায় চক্ররেলের ইঞ্জিন। হঠাৎ লাশ ঘিরে থাকা আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা দেখেন, খাটের উপর উঠে বসেছেন মৃত ওই বৃদ্ধা। শুরু হয়ে যায় চিৎকার, চেঁচামেচি।

হতবাক বৃদ্ধার ছেলেও। হাতে মায়ের ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে তিনিও অবাক হয়ে বলছেন, “মা উঠে বসেছেন। ” যারা খাট ঘিরে বসেছিলেন, তাদের মধ্যে কয়েকজন বলতে থাকেন, ট্রেনের হুইসেলের প্রচণ্ড শব্দেই তিনি জেগে উঠেছেন। ভূতের ভয়ে কয়েকজন নেমেও যান গাড়ি থেকে।
এদিকে শ্মশানের সামনে হই হট্টগোল শুনে ছুটে আসেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা। তারাই ডেকে নিয়ে এলেন চিকিৎসককে। চিকিৎসক বৃদ্ধার নাড়ি পরীক্ষা করে জানান, তার অনেকক্ষণ আগেই মৃত্যু হয়েছে। ‘রিগার মর্টিস’-এর কারণে ‘উঠে বসেছিল’ বৃদ্ধার মৃতদেহ।

হই হট্টগোলের মধ্যেই চালক সোজা ট্রাক নিয়ে পৌঁছে যান নিমতলা শ্মশানঘাটে। চেঁচামেচি শুনে শ্মশানঘাটে অন্ত্যেষ্টির কাজে আসা অনেকে দাঁড়িয়ে পড়েছেন গাড়ির সামনে। চোখের সামনে কীভাবে মৃত মানুষ খাটে উঠে বসলেন, সেই বিবরণ দিতে শুরু করেছেন কয়েকজন। তা শুনতে ভিড় জমেছে আরও বহু মানুষের। নিমতলা ঘাটের সামনের রাস্তা রীতিমতো বন্ধ হয়ে যায়।

খবর পেয়ে চলে আসেন উত্তর বন্দর থানার কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিক ও কর্মীরা। মৃতদেহ উঠে বসেছেন খবর পেয়ে তাদেরও সন্দেহ হয়। কারণ, পুলিশ জানে, মৃত্যুর কয়েকঘণ্টা পর ‘রিগার মর্টিস’ হয় ও তার ফলে প্রাণ না থাকা সত্ত্বেও কোনও মৃতদেহের অঙ্গ সঞ্চালন হতে পারে। এমনকি, মৃতদেহ উঠেও বসে।

দুই পুলিশকর্মী ছুটে যান নিমতলা শ্মশানের দায়িত্বে থাকা পৌরসভার চিকিৎসকের কাছে। অন্যরা ভিড় সরাতে শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে আসেন চিকিৎসক। তিনি মৃত বৃদ্ধার নাড়ি পরীক্ষা করেন। জানিয়ে দেন, অনেকক্ষণ আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। এই উঠে বসার কারণও নিছক প্রাকৃতিক। মৃতার আত্মীয়দের বোঝানো হয়। এরপর তার লাশ দাহ করার ব্যবস্থা শুরু হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *