কাপাসিয়া প্রচার-প্রচারনায় এগিয়ে রিমি, ভোটের মাঠে কৌশলী রিয়াজুল

Slider গ্রাম বাংলা

মাসুদ পারভেজ, কাপাসিয়া থেকে: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-৪, কাপাসিয়া আসনে প্রতিদ্বন্ধি ৭ জন প্রার্থী থাকলেও কাপাসিয়ার আলোচিত দুই ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য বড় দুই দলের প্রার্থীর মাঝেই মূল প্রতিদ্বন্ধিতা হবে।

আওয়ামীলীগ ও বিএনপি দুই দলের প্রার্থীর ভরসাই হলো তাদের প্রয়াত পিতা। আর মাঠের প্রচার-প্রচারনায় এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমি। কিন্তুু হামলা-মামলায় জর্জরিত হয়ে কৌশলে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বিএনপি দলীয় প্রার্থী শাহ্ রিয়াজুল হান্নান। নির্বাচনের সপ্তাহ বাকী থাকলেও ইতিমধ্যে সাধারণ ভোটাররা তাদের হিসাব কষতে শুরু করেছেন। তবে ভোটের মাঠে মূলত লড়াই হবে নৌকা-ধানের শীষ। কাপাসিয়া বাসি শেষ হাসি দেখার অপেক্ষায়।

গাজীপুর-৪ কাপাসিয়া, নির্বাচনী আসনটি উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৯৪ জন। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং মুক্তিযোদ্ধের অগ্রনায়ক অন্যতম সংগঠক বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের নির্বাচনী এলাকা। এই আসনে তাজউদ্দীন আহমদের মেঝো কন্যা সিমিন হোসেন রিমি বর্তমানে এম পি । পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বি এন পি থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন দলটির ¯স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) আ স ম হান্নান শাহ্ । আগামী সংসদ নির্বাচনে এবার এই আসনে বি এন পি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক মন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) আ স ম হান্নান শাহর পুত্র শাহ রিয়াজুল হান্নান রিয়াজ।অন্যদিকে বর্তমান সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি আওয়ামীলীগের প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠে দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। বঙ্গতাজের একমাত্র পুত্র তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ সংসদ সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করলে

সারা দেশের মতো গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনেও নির্বাচনের পালে হাওয়া লেগেছে । নির্বাচনের দিনক্ষন নির্ধারিত থাকায় সময় গুনে সকল দলের নেতা-কর্মীরা মাঠে ঝাপিয়ে পড়েছে। সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই নেতা-কর্মীরাও উজ্জিবিত হচ্ছে আওয়ামীলীগের দুইবারের এমপি প্রবীন প্রার্থী বঙ্গতাজ সিমিন হোসেন রিমি আর বিএনপির নবীন প্রার্থী হান্নান শাহ্ পুত্র শাহ্ রিয়াজুল হান্নান। উভয়েই পরিবারের দীর্ঘদিনের নির্বাচনী অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিজয়ের পথে হাটছেন বলে তাদের প্রত্যাশা। তৃনমূলের নেতাকর্মীদের নিয়ে চলছে শোডাউন ও প্রচার।

বর্তমান সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি নিয়মিত সভা-সমাবেশ, গনসংযোগ ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করছেন। তার সমর্থকরা ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে। সিমিন হোসেন রিমি বলেন, ‘আমার পিতা তাজউদ্দীন আহমদ দেশ-জাতীর জন্য জীবন দিয়ে গেছেন। আমার বিশ্বাস বিগত দিনের মত কাপাসিয়া বাসি আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। জনগন আবার আমাকে নির্বাচিত করলে মাদকমুক্ত সমাজ ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখব’। কাপাসিয়াকে সবুজ অর্থনীতি গড়তে চান সিমিন হোসেন রিমি। কৃষিজাত পন্য উৎপাদন ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরীতে আরো মনোযোগ দিতে চান। গ্রামকে শহরে পরিনত করবো।

অপরদিকে প্রয়াত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) আ স ম হান্নান শাহর মৃত্যু’র পর তার উত্তরসূরি শাহ্ রিয়াজুল হান্নান রিয়াজের নেতৃত্বে দলের নেতা-কর্মীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। ¯স্থানীয় নবীন ও প্রবীন নেতাকমীরা হামলা মামলায় জর্জরিত হয়ে প্রতিকুল পরিবেশেও দলীয় কর্মকান্ডে একাট্রা। হান্নান শাহ্’র মৃত্যুর পর তার পুত্র শাহ্ রিয়াজুল হান্নান হাল ধরেছে। নেতা-কর্মীরা মনে করে রিয়াজ তার পিতা হান্নান শাহ্’র প্রতি”ছবি।

স্বাধিনতার পর ১৯৭৩ সালে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী প্রয়াত বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ডাঃ ছানাউল্লাহ্ , ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে। এ নির্বাচনে ১৫ দলীয় ঐক্যজোটের মনোনীত প্রার্থী মুহম্মদ শহীদুল্লাহ নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ-বিএনপি অংশ গ্রহন করেনি। এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ওবায়দুল্লাহ্ নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএন পি থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) আ স ম হান্নান শাহ্ নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের ১২জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের ছোট ভাই অ্যাডভোকেট আফছার উদ্দিন আহমদ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) আ স ম হান্নান শাহ’র সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করে জয়লাভ করেন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচনে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের পুত্র তানজিম আহমদ সোহেল তাজ হান্নান শাহ্’র সঙ্গে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। তারপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি থেকে অর্থনীতিবিদ এম, এ আব্দুল মজিদ প্রতিদ্বন্ধিতা করে প্রায় ৬৭ হাজার ভোট পেলেও সোহেল তাজ বিজয়ী হন। তারপর সোহেল তাজ প্রথমে মন্ত্রীত্ব থেকে পরে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করলে এ আসনে উপ-নির্বাচনে আওয়ামীগ থেকে তার বড় বোন সিমিন হোসেন রিমি তার আপন চাচা অ্যাডভোকেট আফছার উদ্দিন আহমদের (স্বতন্ত্র প্রার্থী) সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী দশম সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি’র অংশ গ্রহন ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্ধিতা করে সিমিন হোসেন রিমি আবারও নির্বাচিত হন।
স্বাধিনতার পর এ পর্যন্ত আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ৬ বার নির্বাচিত হয়। বিএনপি ৩ বার এবং একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হন।

কাপাসিয়ায় বরাবরই তীব্র প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামীলীগ-বিএনপি প্রার্থীর মাঝে ভোটের ব্যবধানও খুব একটা বেশী নয়। তবে বিভিন্ন কারনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে সাধারণ ভোটারের মতামত অন্যরকম। ভোটের মাঠে সচেতন ভোটাররা মুখ খোলতে নারাজ। ভোটাররাও যেন কৌশলী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *