সাংবাদিকরা আর ‘শ্রমিক’ থাকছেন না, তারা গণমাধ্যম কর্মী

Slider বিনোদন ও মিডিয়া

ঢাকা: ‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) আইন-২০১৮’-এর খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ আইনে সাংবাদিকদের আগের মত ‘শ্রমিক’ হিসেবে বর্ণনা না করে ‘গণমাধ্যমকর্মী’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘গণমাধ্যম কর্মী (চাকরির শর্তাবলী) আইন ২০১৮’ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আগে গণমাধ্যমকর্মীরা চলতেন ‘দ্য নিউজপেপার এমপ্লয়িজ (চাকরির শর্তাবলী) আইন- ১৯৭৪’ এর আওতায়। পরে তাদের শ্রম আইনের অধীনে আনা হয়। শ্রম আইনের অধীনে গণমাধ্যম কর্মীদেরও ‘শ্রমিক’ হিসেবে বিবেচনা করা হত। নতুন আইন পাস হলে গণমাধ্যম কর্মীরা আর শ্রমিক থাকবেন না, তাদের গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে অভিহিত করা হবে।

তিনি বলেন, সরকার কর্তৃক গঠিত পরিদর্শন কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের চাকরির নিয়মাবলি স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান প্রণয়ন করবে। এক্ষেত্রে কর্মীদের সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা হবে সর্বোচ্চ ৩৬ ঘণ্টা। এর বেশি হলে তাদের ওভারটাইম দিতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা গ্রুপ বিমার আওতায় অন্তর্ভুক্ত হবেন।

আইনে গণমাধ্যমকর্মীদের ছুটির বিষয়ে বলা হয়েছে, কর্মীরা বছরে ক্যাজুয়েল লিভ পাবেন ১৫ দিন। তাদের অর্জিত ছুটি জমা হবে ১০০ দিন। আগে তা ৬০ দিন ছিল। এছাড়া পূর্ণ বেতনে দুটি উৎসব ভাতা ও ১০ দিন উৎসব ছুটি পাবেন কর্মীরা। এতে আরও বলা হয়, নারী গণমাধ্যমকর্মীরা সরকারি ছুটির মতো সমহারে মাতৃত্বকালীন ছুটি কাটানোর সুযোগ পাবেন। এছাড়া কর্মীরা তিন বছর পর পর ৩০ দিনের জন্য সবেতন ছুটি পাবেন।

আইনে কর্মীদের ওয়েজ বোর্ড অনুসারে ন্যূনতম বেতন পরিশোধের পাশাপাশি তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে। এই ফান্ডে কর্মীরা চাকরির এক বছরের মাথায় চাঁদা জমা দিতে পারবেন। মালিক পক্ষকেও ওই ফান্ডে সমহারে চাঁদা জমা দিতে হবে। আগে প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা জমা দিতে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের চাকরির বয়স দুই বছর পূর্ণ হতে হতো।

আইনে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমকর্মী ও মালিক পক্ষের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হলে ‘এডিআর’র মাধ্যমে তা নিষ্পত্তি করতে হবে। মালিক পক্ষকে এই আইনের সব বিধান পালন করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে বা লঙ্ঘিত হলে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। আইনে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা না থাকলেও জরিমানা অনাদায়ে আদালত কারাদণ্ড দিতে পারেন।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘সম্প্রচার আইন, ২০১৮’ এর খসড়ারও নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে সম্প্রচার মিডিয়া তথা রেডিও, টেলিভিশন ও অনলাইন পত্রিকায় অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার, মুক্তিযুদ্ধের তথ্য বিকৃতি বা ভুল তথ্য প্রচারের মতো ২৪ অপরাধের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এ আইন লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করা হবে।

আইনটি নতুন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স্টেক হোল্ডারদের সাথে অনেক আলোচনা করে আইনটি তৈরি করা হয়েছে। অনলাইন গণমাধ্যমের সংজ্ঞা, ক্যাবল অপারেটর, ক্যাবল টেলিভিশন চ্যানেল, ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের সংজ্ঞা, সম্প্রচারের সংজ্ঞা উল্লেখ করা আছে।

কোন সম্প্রচারকারী বা অনলাইন গণমাধ্যম পত্রিকা কর্তৃক ২৪টির মতো অপরাধ আইনে উল্লেখ রয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *