আবু বকর নিখোঁজের পরপরই ইসিতে অভিযোগ করেছিল বিএনপি

Slider রাজনীতি


ঢাকা:যশোর জেলা বিএনপি নেতা আবু বকর আবু নিখোঁজের পরপরই নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছিল বিএনপি। এ ছাড়া মনোনয়নপ্রত্যাশী আরো পাঁচ নেতাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে এমন অভিযোগ করে বিএনপি একটি তালিকাও কমিশনে জমা দিয়েছিল। গত বুধবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা বরাবর এ সংক্রান্ত একটি তালিকা জমা দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মামলা ও তথ্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। বুড়িগঙ্গা নদী থেকে আবু বকরের মরদেহ উদ্ধারের খবরের পর বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে। তবে গতকাল এক অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা জানিয়েছেন, বিএনপি নেতা হত্যার তদন্ত করে পুলিশকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে। এ ঘটনায় ফৌজদারি মামলা হবে। তদন্ত করবে পুলিশ। তদন্তেই বের হয়ে আসবে তাকে কিভাবে মারা হয়েছে।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার রাত ৮টার দিকে রাজধানীর পুরানা পল্টনের মেট্রোপলিটন হোটেল থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হোন যশোর জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও কেশবপুরের মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বকর আবু।
নিখোঁজের পরদিন ১৯শে নভেম্বর বেলা ১টার দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর চর-খেজুরবাগ বেবী সাহেব ডকইয়ার্ড সংলগ্ন এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। পরে ময়না তদন্তের জন্য তার মরদেহ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড) পাঠায়। বৃহস্পতিবার নিহতের স্বজনরা হাসপাতালের মর্গে গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করেছে।

নিহত বিএনপি নেতার ঘনিষ্ঠজন সাইদুল ইসলাম লিটন মানবজমিনকে বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার ভোর চারটার দিকে মরদেহ যশোরের উদ্দেশ্যে নেয়া হয়েছে। বিকালে কেশবপুর পাবলিক ময়দানে ও তার নিজ গ্রামে পৃথক দুটি জানাজা শেষে মরদেহ দাফন করা হয়েছে। জানাজায় সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, মনোনয়ন নিতেই তিনি তার সমর্থকদের নিয়ে ঢাকায় এসে একটি হোটেলে উঠেছিলেন। রোববার হোটেল থেকে বের হওয়ার পরই তিনি নিখোঁজ হন। এর ঘণ্টাখানেক পরে তিনি তার ভাতিজা সুমনকে ফোন করে জানান, অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাকে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে।

দক্ষিণ কেরানিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ জামান মানবজমিনকে বলেন, ১৯ তারিখ আমরা একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করেছি। এরপর আর কোন মামলা হয়নি। বিএনপির এই নেতার মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি দলীয় কোন্দলে হয়তো তাকে হত্যা করা হতে পারে। এর বাইরে সংঘবদ্ধ কোনো অপরাধী চক্র তাকে হত্যা করতে পারে। তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত বলা যাবে। ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান বলেন, এখনও আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। আমরা তাকে উদ্ধারের পর তার গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাইনি। মরদেহের ময়না তদন্ত করা হয়েছে। রিপোর্ট আসলে হয়তো মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। এই ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা এমন প্রশ্নে এই পুলিশ সুপার বলেন, আমরা তদন্ত করছি। তিনি একা আসেননি। তার সঙ্গে আরো লোকজন ছিল। কিভাবে এই ঘটনা ঘটেছে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে গতকাল বেলা ১২টার দিকে আবু বকর আবুর মরদেহ কেশবপুর পৌঁছালে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ও মহাসচিবের পক্ষে মরহুম এই নেতার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান, সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকনসহ জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ।

এদিকে এই হত্যাকাণ্ডকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের বলে যে মন্তব্য করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি বলেন, আবু বকর আবু একজন নিরীহ রাজনীতিক। তার সঙ্গে দলের স্থানীয় কোনো নেতার কোনো বিরোধ ছিল না। তাছাড়া যশোরাঞ্চলের বিএনপি নেতাদের মধ্যে চমৎকার সুসম্পর্ক রয়েছে। আমাদের ধারণা, এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ। এর মাধ্যমে একটা ম্যাসেজ দিতে চাচ্ছে বলে আমরা মনে করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *