‘মি টু’! মানে, ‘আমিও যৌননিগ্রহের শিকার’!

Slider জাতীয়

ভারতের কয়েকজন নারীর পর আমার জানা মতে, বাংলাদেশেরও দুই নারী মুখ খুলেছেন। কীভাবে তারা পুরুষের যৌননিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তা প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশের নারীদের জন্য এমন ঘটনা প্রকাশ করার কাজটা সোজা না। যথেষ্ট সাহস দরকার। শুধু সাহস না, এমন ঘটনা জনসমক্ষে প্রকাশ করার জন্য দরকার দুঃসাহস। সে কারণে তাদের দুজনের প্রতিই আমার অশেষ শ্রদ্ধা জানাই।
বাংলাদেশে কাগজে-কলমে ৭০ শতাংশের বেশি মানুষকে শিক্ষিত মনে করা হলেও আসলে প্রকৃত শিক্ষিতের সংখ্যা আমার মতে ১০ শতাংশের কম। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নারীদের প্রতি আমাদের সনাতন ধ্যান-ধারণা বদলাতে তেমন কাজে আসেনি!
নইলে কোনো মেয়ে ধর্ষণ বা যৌননিপীড়নের শিকার হলে কোন যুক্তিতে আমরা মেয়েটির ওপরেই সকল দোষ চাপিয়ে দেই? কোন যুক্তিতে কেবল তারই সম্ভ্রমহানি হয়েছে বলে মনে করি? এমন ঘটনায় নিপীড়ক বা ধর্ষকের নিজের সম্ভ্রমহানির বিষয়টা আমাদের মাথায় আসেই না! এমন পুরুষ আমাদের আশেপাশে অসংখ্য আছেন, যারা মনে করেন, নারীদের এমনভাবে নিপীড়ন করাটা তেমন অন্যায় কিছু না। কেউ কেউ হয়তো সেটাকে যথেষ্ট গৌরবের কাজ বলেও ভাবেন।

আর, এ কারণেই আমি মনে করি, এখন নারীদের উচিত তেমন পুরুষদের চিনিয়ে দেয়া।
তবে, সাহসটা কেবল নারীরাই দেখাবে কেন?

আমি চাই, পুরুষরাও দেখাক।

পুরুষরা কবে কোন অবস্থায় কোন নারীকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছিলো, কবে কোন নারীকে অনৈতিকভাবে স্পর্শ করেছিলো, কবে কাকে ধর্ষণ করেছিলো তা প্রকাশ করুক। (তবে, তাদের নামধাম গোপন রেখে। )
নারীরা সাহসী হলে পুরুষরাইবা এটুকু সাহস দেখাতে পারবে না কেন?

কেউ কেউ বলতে পারেন, এমন দুঃসাহস আমি নিজে দেখাতে পারবো কি না! হ্যাঁ, আমি পারবো।
বলা দরকার, আমি সেটা করেছিও। যারা ‘আমার গল্প’ পড়েছেন তারা জানেন, এমন পরাজয়ের, এমন লজ্জাজনক ঘটনার বিবরণ আমি সেখানে দিয়েছি।
বাইশ-তেইশ বছর বয়সে একটি মেয়েকে আমি তার ইচ্ছের বিরুদ্ধেই চুমু খেতে গিয়েছিলাম। কাজটা যে ঠিক হয়নি, সেটা পরে বুঝেছিলাম। সেই ঘটনার জন্য আজও আমার লজ্জা ও অনুতাপের শেষ নেই। কারণ, এমন ঘটনার জন্য তো ক্ষমা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু অপরাধের ভার কিছুটা কমানোর সুযোগ আছেই।
সমস্যা হচ্ছে, পুরুষের মনস্তত্ত্ব এমনভাবেই তৈরি, নারীর কাছে পরাজয়ের কাহিনি অন্তত তারা প্রকাশ করতে চায় না। প্রকাশ করতে শেখেওনি। তবে, একদিন শিখে যাবে নিশ্চয়ই।
এ লেখার পর আমার আত্মীয়ারা, আমার নারীবন্ধুরা কী বলবেন, তারা আমার সম্পর্কে কী ভাববেন, জানি না। কিন্তু আমি তো জানি, নিজের কতোটা বদল আমার ঘটেছে এ জীবনে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *