আলোচনা অনুষ্ঠানে অসত্য তথ্য দিলে ৫ কোটি টাকা জড়িমানা বা ৩ বছরের জেল বা দুটোই

Slider সারাদেশ

ঢাকা: আলোচনা অনুষ্ঠানে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য উপস্থাপন ও প্রচারের শাস্তি ৩ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। এমন বিধান রেখে ‘সমপ্রচার আইন-২০১৮’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। নতুন আইনে সমপ্রচার মাধ্যমের জন্য একটি কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

গতকাল সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে আইনটি নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, এই আইনটি নতুন আইন। যারা স্টেকহোল্ডার তাদের সঙ্গে অনেক কনসাল্ট করে এই আইনটি তৈরি করা হয়েছে। খসড়া আইনে অনলাইন গণমাধ্যমসহ অনেক সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। একটি কমিশন করার প্রস্তাব আছে। কমিশনের সংজ্ঞা দেয়া আছে। ক্যাবল অপারেটর, ক্যাবল টেলিভিশন চ্যানেল, ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের সংজ্ঞা দেয়া আছে। খসড়া আইনে ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিশন গঠনের প্রস্তাব রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটার জন্য একটা সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটির বিধানও রয়েছে। এই সার্চ কমিটি হবে ৫ সদস্যবিশিষ্ট, তাদের যোগ্যতা বলে দেয়া আছে।

সার্চ কমিটি যে সুপারিশ করবে সেটা প্রেসিডেন্টের কাছে পেশ করা হবে। প্রেসিডেন্ট তাদের মধ্য থেকে একজন চেয়ারম্যানসহ কমিশন করে দেবেন। এর মধ্যে একজন নারী কমিশনারও থাকবেন। কোনো কিছু সমপ্রচার করতে অনুমতি বা লাইসেন্স লাগবে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, কোনো সমপ্রচারকারী বা অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান আলোচনা অনুষ্ঠানে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য উপস্থাপন ও প্রচার, বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে যথা রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের ভাষণ, জরুরি আবহাওয়া বার্তা- এ জাতীয় নির্দেশ অমান্য করা। মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ও রাষ্ট্রীয় আদর্শ-নীতিমালা পরিপন্থি অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপন প্রচার করলে অপরাধী হবেন। এমন ২৪টি কাজ করলে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে শাস্তি সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অপরাধ সংগঠন চলমান রাখলে প্রতিদিনের জন্য সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা হবে।

এই শাস্তি সমপ্রচারকারীর জন্য প্রযোজ্য হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কমিশনারদের যোগ্যতাও উল্লেখ করা হয়েছে আইনে। যদি কেউ বাংলাদেশের নাগরিক না হন, জাতীয় সংসদ সদস্য বা স্থানীয় সরকারের যেকোনো স্তরের জনপ্রতিনিধির জন্য নির্ধারিত কোনো পদে নির্বাচিত হন, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ খেলাপি ঘোষিত হলে, দেউলিয়া বা অপ্রকৃতস্থ হলে, নৈতিক স্খলনের দায়ে যদি দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, যদি প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে কর্মরত থাকেন, কোনো সমপ্রচার বা গণমাধ্যম শিল্প সংক্রান্ত কোনো ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যদি সম্পৃক্ত থাকেন, কোনো সমপ্রচার প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে যদি থাকেন- তবে তারা কেউ কমিশনার হতে পারবেন না। কমিশনার হতে হলে সমপ্রচার, গণমাধ্যম শিল্প, গণমাধ্যম শিক্ষা, আইন, জনপ্রশাসন ব্যবস্থাপনা, ভোক্তা বিষয়াদি বা ডিজিটাল প্রযুক্তির উপর বিশেষ জ্ঞান ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। চেয়ারম্যান কমিশনারের একই যোগ্যতা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের মেয়াদ হবে নিয়োগের তারিখ থেকে ৫ বছর বা ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত তারা কাজ করতে পারবেন। তাদের অপসারণের প্রভিশনও রাখা আছে খসড়া আইনে। শারীরিক বা মানসিকভাবে যদি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হন, কমিশন ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো কাজে লিপ্তসহ এমন ৬টি কাজের জন্য অযোগ্যতা প্রমাণ করে অপসারণের সুযোগ আছে।

তিনজন সদস্যের উপস্থিতিতে কমিশনের কোরাম হবে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, কমিশনের কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছে- সমপ্রচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও গতিশীল করা, সমপ্রচার মাধ্যমের মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা। সমপ্রচার মাধ্যমে মত প্রকাশ ও সমপ্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রীতি ও মানদণ্ড অনুসরণ করা। সমপ্রচার ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য সমপ্রচার কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিযোগিতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির পথ সুগম করা। তিনি বলেন, নতুন লাইসেন্স ও নিবন্ধন দিতে নির্দেশনা প্রদান; টেলিভিশন, বেতার, ইন্টারনেট ইত্যাদি সমপ্রচার মাধ্যম ও সমপ্রচার যন্ত্রপাতির জন্য সমপ্রচারকারীর অনুকূলে লাইসেন্স ইস্যুর জন্য সুপারিশ করা, সরকারের অনুমতি পেলে কমিশন লাইসেন্স ইস্যু করবে। সমপ্রচার লাইসেন্স ও অনলাইন গণমাধ্যম নিবন্ধন দেয়ার বিষয়ে কমিশনের একক কর্তৃত্ব থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, অনলাইনের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে হোস্টিং করা বাংলা, ইংরেজি বা অন্য কোনো ভাষায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইন্টারনেটভিত্তিক রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র ও ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে সমপ্রচারের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত স্থির ও চলমান চিত্র, ধ্বনি ও লেখা বা মাল্টিমিডিয়ার অন্য কোনো রূপে উপস্থাপিত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ বা সমপ্রচারকারী বাংলাদেশি নাগরিক বা বাংলাদেশে নিবন্ধিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স অনুযায়ী ক্ষমতাপ্রাপ্ত না হলে যন্ত্রপাতি আমদানি, বিক্রি, বিক্রির প্রস্তাব, বিক্রির উদ্দেশ্যে নিজের অধিকার রাখা এই কাজগুলো করতে পারবেন না। লাইসেন্স লাগবে। নির্ধারিত ফি দিয়ে লাইসেন্স ও নিবন্ধন নবায়ন করতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কমিশন সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করবে।

দুই বা ততোধিক সমপ্রচার কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনো ঝামেলা বা বিরোধ হয় তবে কমিশন এই নিষ্পত্তি করতে পারবে। এর বিরুদ্ধে সরকারের কাছে আপিল করা যাবে। খসড়া আইনে কন্টেন্ট সম্পর্কে বলা হয়েছে- সমপ্রচারের উদ্দেশ্য ব্যবহৃত যেকোনো অডিও, টেক্সট, উপাত্ত, চিত্র বা নকশা (স্থির বা চলমান), ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা, সংকেত বা যেকোনো ধরনের বার্তা বা এগুলো যেকোনো এরূপ সংমিশ্রণ যা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে সৃষ্ট প্রক্রিয়াজাত সংরক্ষিত, উদ্ধারকৃত বা কমিউনিকেটেড হতে সক্ষম। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আদালত যদি বলে তিনি বিকৃত মস্তিষ্ক, আদালত যদি ২ বছর বা এর বেশি শাস্তি দেয়, দণ্ডিত হওয়ার পর যদি ৫ বছর পার না হয়, আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হয়, ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়, ৫ বছরের মধ্যে যদি কমিশন লাইসেন্স বা নিবন্ধন বাতিল করে থাকে তবে লাইসেন্স পাবেন না। এই ব্যক্তিরা যদি লাইসেন্স নিয়ে সমপ্রচার কার্যক্রম চালিয়ে যান তবে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড। এই অপরাধ চলমান রাখলে দৈনিক এক লাখ টাকা জরিমানা হবে। খসড়া আইনানুযায়ী বিনা পরোয়ানায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না, এগুলো জামিনযোগ্য অপরাধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *