রাতুল মন্ডল শ্রীপুর (গাজীপুর)প্রতিনিধিঃ বরমী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন ফিরিয়ে দিলেন মুচি সিরা লালের স্বপ্নের দোকান।
(১০ অক্টোবর বুধবার) সকাল ১০ টার দিকে উপজেলার বরমী ইউনিয়নের সাতখামাইর বাজারে উপস্থিত হয়ে দখনকৃত দোকানের মালামাল সরিয়ে পূনরায় সিরালাল রবি দাস (৫৫)কে তার দোকান ফিরিয়ে দেন
সিরালাল পেশায় জুতার কারিগর (মুচি)। শারীরিক অক্ষমতা ও অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারণে গত ১৬ বছর আগে থেকে ফুটপাতে বসে জুতা সেলাই ও পালিশের কাজ শুরু করেন।
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার সাতখামাইর বাজারে বরমী সড়কের পাশে তিনি একটি পুরনো কড়ই গাছের গোড়ায় বসে জুতা সেলাই করতেন। সিরা লাল রবি দাস লিভার সিরোসিস নামক রোগে ভুগছেন।
প্রতিদিন তিনি সাড়ে তিন’শ থেকে পাঁচ’শ টাকা আয় করে সংসার চালাতেন। সে আয়ের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাকে ফুটপাত থেকে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আট হাজার টাকা জামানত নিয়ে তার জায়গায় এক পান সুপারী বিক্রেতাকে বসানো হয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি এখন পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন।
যারা তাকে ফুটপাত থেকে উঠিয়ে দিয়েছেন তারা হলেন একই বাজারের ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক, সাবেক ইউপি সদস্য ফজলুল হক ও তাদের সহযোগীরা।
সিরা লাল রবি দাস অভিযোগ করে বলেন, গত প্রায় ১৬ বছর আগেও চামড়ার ব্যবসা করেছেন। অর্থনৈতিক দৈন্যতা ও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ায় পেশা পরিবর্তন করে জুতা সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন।
তিনি জানান, তাঁর সাতজন কন্যা সন্তান। বিউটি, চম্পা, পারুল, অঞ্জলী, সুইটি, অষ্টমী, ও আনুরাধা। বিউটি ও চম্পা বৈবাহিকসুত্রে স্বামীর বাড়ি থাকেন। বাকি পাঁচজন কন্যা ও স্ত্রীসহ সাত সদস্যের পরিবারের প্রত্যেকের অন্ন যোগাড় করতে হয় সিরা লাল রবি দাসকে। সাধ্যমতো প্রত্যেক কন্যাকে জুতা সেলাইয়ের কাজ করে পড়াশোনা করিয়েছেন। তার মেয়েদের প্রায় প্রত্যেকেই পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত জুতা সেলাইয়ে বাবাকে সহযোগিতা করেছেন। খেয়ে-পড়ে কোনোরকমে তাদের সংসার চলেছে। কিন্তু গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে খাওয়া-পড়ার কষ্টে দিন কাটছে পরিবারের সাত সদস্যের।
সিরা লাল রবিদাসের স্ত্রী আরতি রানী রবি দাস বলেন, একটা মানুষকে কাজ করতে দিল না তারা। আমরা ভিক্ষা করতে চাই না। কারো জায়গাও দখল করিনি। সমাজের আর ১০টা মানুষের মতো ইজ্জত নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম। তাদের সেটিও সহ্য হল না।
সাতখামাইর বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাঞ্চন বলেন, আমরা বাজার কমিটি উদ্যোগ নিয়েও ব্যার্থ হয়েছি।
স্থানীয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ীরা বলেন, সিরা লালকে উঠিয়ে আট হাজার টাকা জামানতের বিনিময়ে সেখানে পান ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে বসানো হয়েছে। তবে রবিউল এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে চায়নি।
সাতখামাইর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লিয়াকত হোসেন দুলাল বলেন, সিরা লাল দাস দরিদ্র ও অসুস্থ মানুষ। মেয়েরা তার বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছে, একজন এখনও পড়ছে। এতগুলো মেয়ে তারপরও সমাজে পরিবারের কোনো স্ক্যান্ডাল নেই। তার মেয়েরাও তাকে জুতা সেলাই ও পালিশের কাজে সহযোগিতা করে। এখনও ছোট দুই মেয়ে সিরা লালের অনুপস্থিতিতে তার জায়গায় বসে জুতা পালিশ করে। আমরা সিরা লালকে তার জায়গায় রাখতে পারিনি। এ নিয়ে এলাকায় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সিরা লাল রবি দাসের কন্যা ও সাতখামাইর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী অষ্টমী রানী দাস জানায়, সে ও তার ছোট বোন অনুরাধা তার বাবাকে জুতা সেলাই ও পালিশের কাজে সহযোগিতা করেন। গত ১০দিন যাবত খেয়ে না খেয়ে খুব কষ্টে তাদের দিন কাটছে।
অভিযুক্ত সাবেক ইউপি সদস্য ফজলুল হক বলেন, তিনি গত তিন মাস যাবত অসুস্থ। এ কাজে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ব্যবসায়ী মোজাম্মেল এ কাজটি খারাপ করেছে এবং সে একজন বিএনপির লোক।
অভিযুক্ত মোজাম্মেল হককে একাধিকবার ফোন করলে বেলা ১১টার দিকে একবার ফোন রিসিভ করেন। পরিচয় জেনে তিনি জানান, তাঁর আত্মীয় মারা গেছেন। তিনি জানাযার নামাজে রয়েছেন। পরে তিনিই ফোন দিবেন। কিন্তু বিকেল তিনটা পর্যন্ত কোনো ফোন না দেয়ায় আবারও তাকে কমপক্ষে ১০ বার ফোন দেয়া হয় কিন্তু রিসিভ করেননি। সব মিলিয়ে অনেক চেষ্টার পরও তার সাথে কথা বলা যায়নি।