লালমনিরহাটে আগাম ধানে কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক,ঘরে উঠছে সোনালি ফসল

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি


হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট: উত্তরের জনপদ হিমালয়ের পাদদেশ তিস্তার কোল ঘেঁষে যাওয়া সীমাস্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট। পশ্চিমে তিস্তা নদী আর পূর্বে ভারতীয় সীমান্তের মাঝখানে অবস্থিত লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলা। আশ্বিন মাসের শুরু থেকে হাতীবান্ধায় কাটা শুরু হয়েছে আগাম জাতের পাকা ধান।

আশ্বিন ও কার্ত্তিক মাসে মানুষের তেমন কোনো কাজ কর্ম ছিল না। ফলে বাড়িতে বসে অলস সময় পার কারতো শ্রমজীবী মানুষ।

এক সময় উত্তরাঞ্চলের মানুষদের বলা হতো মঙ্গা এলাকার মানুষ। তবে এখন আর আগের মতো এই অঞ্চলে ‘মঙ্গা’ নামে সেই শব্দটি নেই। কালের বিবর্তন ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দিন দিন তা বদলে গেছে। এখন আর আগের মতো আশ্বিন-কার্ত্তিক মাসে অলস সময় কাটাতে হয় না। এখন কাজ করার জন্যই বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় তাদের।

আগাম জাতের নতুন পাকা ধান কেটে ঘরে তুলছে কৃষক। এতে করে কৃষকের মঙ্গাও কাটছে আর মুখে ফুটছে হাসির ঝিলিক। ‘মঙ্গা’ মেটাতে আগাম জাতের এ ধান কৃষকের ঘরে ঘরে অগ্রহায়ন না আসতেই উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে দিয়েছে।

আশ্বিনেই যেন নবান্নের সাড়া পড়েছে কৃষকের ঘরে ঘরে। ধান কাটার পর আবার সেই জমিতে আলু, শাখ, সবজি আবাদের প্রস্তুুতি নিচ্ছে এই অঞ্চলের কৃষকরা। রোগ বালাই কম, একই জমিতে বছরে তিন থেকে চার ফসল আবাদ, ধানের দাম ও গো-খাদ্য হিসেবে খড়েরও দাম ভালো পাওয়ায় দিন দিন আগাম জাতের ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে কৃষক।

সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা যায় ধান ক্ষেতের মাঝে উঁকি দিচ্ছে আগাম জাতের সোনালি ধান। আর সেই ধান কাটতে ও মাড়াই করতে ব্যস্ত সময় পার করছে এই অঞ্চলের অলস সময় পার করা কৃষকরা। যাদের আবার ধান কাটা ও মাড়াই করা হয়েছে। তারা জমি চাষ করে নতুন ফসলের প্রস্তিুতি নিচ্ছেন।

জানা গেছে, আষাঢ় মাসের শুরুতেই অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে এ জাতের ধানের চারা লাগানো হয়। চারার বয়স ২৫দিন হলে তারপর জমিতে রোপন করা হয়। জমিতে রোপনের ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে ধান পাকা শুরু হয়। আর সেই ধান ৯০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে কেটে ঘরে তোলা হয়।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট এর উদ্ভাবিত আগাম জাতের ধানগুলো হলো, বিনা-৭, ব্রী ৩৩, ব্রী ৫৬, ব্রী ৬২, পূর্বাচী ও হাইব্রীড।

উপজেলার পারুলিয়া চরের কৃষক মজিবর জানান, এই অঞ্চলে আগাম জাতের ধান আবাদ করে দিন দিন মঙ্গা কমে যাচ্ছে। ধানের ফলন ও দাম দুটোই ভালো পাওয়া যাচ্ছে। ধান ৮০০ থেকে ৯০০টাকা দরে বিক্রয় করা হচ্ছে।

এ দিকে সিন্দুর্না চরে কৃষক এরশাদ হোসেন জানান, মঙ্গার দিনে এ ধানটি কৃষকের ঘরে আনন্দ বয়ে এনেছে। ধানের ফলনও ভালো। প্রতিবিঘা জমিতে ধান ফলেছে ১১ থেকে ১২ মণ। বাজারে দামও ভালো। প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা। এছাড়া গো খাদ্য হিসেবে খড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রতি বিঘা জমি থেকে খর বিক্রি করে পেয়েছি ২ হাজার টাকা।

হাতীবান্ধা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবারে আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৪শত ৯৫ হেক্টর জমি।

আর অর্জিত হয়েছে ১৯ হাজার ৫শত ১০ হেক্টর জমি। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। তবে গত বছর অর্জিত হয়েছে ১৯ হাজার ৫শত ৮৫ হেক্টর জমি। এ বছর আগাম জাতের ধান চাষাবাদ করা হয়েছে, ১৮শত ২৮ হেক্টর জমিতে।

এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, দিন দিন কৃষক আগাম জাতের ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আমরা আগাম জাতের ধান উৎপাদনে কৃষককে বিভিন্ন ভাবে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। আগাম জাতের ধান চাষ হওয়ায় বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।

আগাম জাতের ধান বিঘা প্রতি ১৪ থেকে ১৫ মণ হয়। ৯০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে এই ধান কেটে ঘরে তোলা যায়।

লালমনিরহাটে আগাম ধানে কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক,ঘরে উঠছে সোনালি ফসল

হাসানুজ্জামান হাসানধিঃ

উত্তরের জনপদ হিমালয়ের পাদদেশ তিস্তার কোল ঘেঁষে যাওয়া সীমাস্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট।

পশ্চিমে তিস্তা নদী আর পূর্বে ভারতীয় সীমান্তের মাঝখানে অবস্থিত লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলা। আশ্বিন মাসের শুরু থেকে হাতীবান্ধায় কাটা শুরু হয়েছে আগাম জাতের পাকা ধান।

আশ্বিন ও কার্ত্তিক মাসে মানুষের তেমন কোনো কাজ কর্ম ছিল না। ফলে বাড়িতে বসে অলস সময় পার কারতো শ্রমজীবী মানুষ।

এক সময় উত্তরাঞ্চলের মানুষদের বলা হতো মঙ্গা এলাকার মানুষ। তবে এখন আর আগের মতো এই অঞ্চলে ‘মঙ্গা’ নামে সেই শব্দটি নেই। কালের বিবর্তন ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দিন দিন তা বদলে গেছে।

এখন আর আগের মতো আশ্বিন-কার্ত্তিক মাসে অলস সময় কাটাতে হয় না। এখন কাজ করার জন্যই বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় তাদের।

আগাম জাতের নতুন পাকা ধান কেটে ঘরে তুলছে কৃষক। এতে করে কৃষকের মঙ্গাও কাটছে আর মুখে ফুটছে হাসির ঝিলিক। ‘মঙ্গা’ মেটাতে আগাম জাতের এ ধান কৃষকের ঘরে ঘরে অগ্রহায়ন না আসতেই উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে দিয়েছে।

আশ্বিনেই যেন নবান্নের সাড়া পড়েছে কৃষকের ঘরে ঘরে। ধান কাটার পর আবার সেই জমিতে আলু, শাখ, সবজি আবাদের প্রস্তুুতি নিচ্ছে এই অঞ্চলের কৃষকরা। রোগ বালাই কম, একই জমিতে বছরে তিন থেকে চার ফসল আবাদ, ধানের দাম ও গো-খাদ্য হিসেবে খড়েরও দাম ভালো পাওয়ায় দিন দিন আগাম জাতের ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে কৃষক।

সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা যায় ধান ক্ষেতের মাঝে উঁকি দিচ্ছে আগাম জাতের সোনালি ধান। আর সেই ধান কাটতে ও মাড়াই করতে ব্যস্ত সময় পার করছে এই অঞ্চলের অলস সময় পার করা কৃষকরা। যাদের আবার ধান কাটা ও মাড়াই করা হয়েছে। তারা জমি চাষ করে নতুন ফসলের প্রস্তিুতি নিচ্ছেন।

জানা গেছে, আষাঢ় মাসের শুরুতেই অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে এ জাতের ধানের চারা লাগানো হয়।

চারার বয়স ২৫দিন হলে তারপর জমিতে রোপন করা হয়। জমিতে রোপনের ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে ধান পাকা শুরু হয়। আর সেই ধান ৯০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে কেটে ঘরে তোলা হয়।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট এর উদ্ভাবিত আগাম জাতের ধানগুলো হলো, বিনা-৭, ব্রী ৩৩, ব্রী ৫৬, ব্রী ৬২, পূর্বাচী ও হাইব্রীড।

উপজেলার পারুলিয়া চরের কৃষক মজিবর জানান, এই অঞ্চলে আগাম জাতের ধান আবাদ করে দিন দিন মঙ্গা কমে যাচ্ছে। ধানের ফলন ও দাম দুটোই ভালো পাওয়া যাচ্ছে। ধান ৮০০ থেকে ৯০০টাকা দরে বিক্রয় করা হচ্ছে।

এ দিকে সিন্দুর্না চরে কৃষক এরশাদ হোসেন জানান, মঙ্গার দিনে এ ধানটি কৃষকের ঘরে আনন্দ বয়ে এনেছে। ধানের ফলনও ভালো।

প্রতিবিঘা জমিতে ধান ফলেছে ১১ থেকে ১২ মণ। বাজারে দামও ভালো। প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা। এছাড়া গো খাদ্য হিসেবে খড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রতি বিঘা জমি থেকে খর বিক্রি করে পেয়েছি ২ হাজার টাকা।

হাতীবান্ধা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবারে আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৪শত ৯৫ হেক্টর জমি।

আর অর্জিত হয়েছে ১৯ হাজার ৫শত ১০ হেক্টর জমি। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। তবে গত বছর অর্জিত হয়েছে ১৯ হাজার ৫শত ৮৫ হেক্টর জমি। এ বছর আগাম জাতের ধান চাষাবাদ করা হয়েছে, ১৮শত ২৮ হেক্টর জমিতে।

এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, দিন দিন কৃষক আগাম জাতের ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

আমরা আগাম জাতের ধান উৎপাদনে কৃষককে বিভিন্ন ভাবে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। আগাম জাতের ধান চাষ হওয়ায় বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।

আগাম জাতের ধান বিঘা প্রতি ১৪ থেকে ১৫ মণ হয়। ৯০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে এই ধান কেটে ঘরে তোলা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *