প্রত্যাবাসনে টালবাহানার কৌশল নিয়েছে মিয়ানমার

Slider জাতীয়


কূটনৈতিক রিপোর্টার, নিউইয়র্ক: রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করতে মিয়ানমার টালবাহানার নতুন কৌশল নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে অবস্থিত গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ অভিযোগ করেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে বর্তমানে নিউ ইয়র্কে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী।

২০১৭ সালে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন সাত লাখেরও বেশি মানুষ। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চাইলেও মিয়ানমারের উদাসীনতার কারণে বিষয়টি আটকে আছে। মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে রয়টার্সের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

রয়টার্সের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ তার অবস্থান থেকে সরে আসবে কিনা। উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার দেশে ইতোমধ্যেই ১৬ কোটি মানুষ রয়েছে। আমি আর কোনও বোঝা নিতে পারি না। এটা (শরণার্থীদের চাপ) নিতে পারছি না। আমার দেশ এটা বহন করতে পারবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনও পরিস্থিতিতেই শরণার্থীরা স্থায়ীভাবে ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে থাকতে পারে না। শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমারের মূল ক্ষমতা দেশটির নেত্রী অং সান সু চি এবং তাদের সেনাবাহিনীর হাতে। তাদের সঙ্গে শরণার্থী ইস্যুতে তিনি কোনও দ্বন্দ্বে জড়াতে চান না। তবে তাদের কথায় তিনি ক্রমশ ধৈর্য হারিয়ে ফেলছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পক্ষে রোহিঙ্গাদের জন্য কোনও স্থায়ী আবাস তৈরি সম্ভব নয়। দেশের মানুষ এটা মেনে নেবে না। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক এবং তাদের অবশ্যই নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। কিন্তু মিয়ানমার সব বিষয়ে একমত হলেও বাস্তবে সে অনুযায়ী কাজ না করায় সংকট তৈরি হয়েছে। সব সময়ই তারা কোনও না কোনও অজুহাত সামনে তুলে ধরে।

প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগের বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ্য হতে’র কাছে জানতে চায় রয়টার্স। তবে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, নিয়মিত সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনের বাইরে ফোনে তিনি সংবাদমাধ্যমের কোনও প্রশ্নের উত্তর দেবেন না।

এর আগে চলতি মাসেই বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক জানান, মিয়ানমার থেকে সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে আশ্রয় দেওয়া বা গ্রহণ করার কোনও পরিকল্পনা সরকারের নেই।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের বাসিন্দা। আমরা তাদের স্থায়ীভাবে আশ্রয় দেওয়ার কথা ভাবছি না। কয়েক মাসের মধ্যেই রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার ক্যাম্প থেকে ভাসনচরে নিয়ে যাওয়া হবে। তবে সেটা অস্থায়ী। অন্যান্য দেশ কিংবা মিয়ানমার তাদের না নেওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গা শিবিরেই থাকতে হবে তাদের।

২০১৭ সালের আগস্টে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রাখাইনে পূর্ব পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখ রোহিঙ্গা।এক বছরেও মিয়ানমারের এই পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। এখনও আশার আলো দেখার মতো, নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী হওয়ার মতো অবস্থায় নেই বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লাখ লাখ মানুষ। তারও আগে থেকে বাংলাদেশে রয়েছেন আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। সম্প্রতি জাতিসংঘ জানিয়েছে, বাংলাদেশে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। তবে বাংলাদেশ বলছে, এ সংখ্যা ১১ লাখেরও বেশি।

গত বছর নভেম্বরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তিতে সম্মত হলেও এখনও পর্যন্ত কোনও রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়নি। উল্টো মিয়ানমার নিপীড়নের ভয়াবহতায় এখনও দেশটি থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *