‘মুসলিম বলেই আমি হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের নিশানায়’

Slider সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

165435sharbarijohraahmed

গাড়ি চালিয়ে গত বৃহস্পতিবার কোথাও যাচ্ছিলেন শর্বরী জোহরা আহমেদ । পথে একটা জায়গায় হঠাৎ আবিস্কার করলেন, তিনি একা। কাছাকাছি আর কেউ নেই। হঠাৎ ভয় গ্রাস করলো তাকে।

‘এতদিন ধরে যে আমার ওপর আক্রমণ চলছে তাতে আমার খারাপ লেগেছে, কিন্তু আমি ওরকমভাবে ভয় পাইনি। কিন্তু কালকে আমি ভয় পেলাম। আমার মনে হলো, এই মূহুর্তে কেউ না কেউ এসে তো আমাকে কিছু করতে পারে। আমি তো একা এখানে। তখন আমি একটু ভয় পেয়েছি। তারপর অবশ্য আমি তাড়াতাড়ি এই চিন্তা সরিয়ে দিয়েছি। আমি যদি এটা নিয়ে বেশি চিন্তা করি, এটা নিয়ে বেশি মানসিক কষ্ট যদি হয়, তাহলে তো ওরাই জিতে যাবে’, বিবিসি বাংলার শাহনাজ পারভীনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলছিলেন তিনি।

মার্কিন টিভি সিরিজ কোয়ানটিকোর একটি পর্বকে কেন্দ্র করে যে তুলকালাম এখন চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, শর্বরী জোহরা আহমেদ হঠাৎ করেই নিজেকে তার কেন্দ্রে আবিস্কার করেন।

কোয়ানটিকো একটি ড্রামা থ্রিলার। মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক এবিসি এটি তৈরি করে। ভারতীয় তারকা প্রিয়াংকা চোপরা এতে একটি মূল চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ড্রামা সিরিজের একটি পর্বে দেখানো হয়েছিল হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা একটি সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করে সেটির দায় পাকিস্তানিদের ওপর চাপাতে চেয়েছিল। টিভি সিরিজের এই কাহিনী হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের এতটাই ক্ষিপ্ত করে যে তারা প্রিয়াংকা চোপরাকে এর জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে। তার বিরুদ্ধে মিছিল করে। তাকে দেশদ্রোহী বলে বর্ণনা করে।

কিন্তু এই টিভি সিরিজের সঙ্গে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শর্বরী জোহরা আহমেদের সম্পর্ক কি? তাকে কেন টার্গেট করলো হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা?

পুরো ড্রামা সিরিজটি যারা লিখছে, সেই তিরিশ জন লেখকের একজন হচ্ছেন শর্বরী জোহরা আহমেদ।

‘তিরিশ জনের মধ্যে আমি হচ্ছি একমাত্র মুসলমান। তাই আমাকেই তারা আক্রমণের জন্য বেছে নিয়েছে।’

‘ওরা বলছে যে আমি মুসলমান লেখক, কেন আমি এরকম লিখেছি সেজন্যে আমাকে নানাভাবে আক্রমণ করে যাচ্ছে। এক্সট্রিম। খুবই এক্সট্রিম। ওরা আমাকে বলছে আত্মহত্যা করতে। আমি নাকি পাকিস্তানি এজেন্ট। আমি নাকি ইচ্ছে করে এটা লিখেছি। ভারতের বিরুদ্ধে, হিন্দুদের বিরুদ্ধে। আমি নাকি ইচ্ছে করে অ্যান্টি-হিন্দু প্রপাগান্ডা লিখছি।’

যে কাহিনী নিয়ে এত তুলকালাম, তার সঙ্গে শর্বরী জোহরা আহমেদের কোন সম্পর্ক নেই। সেটা জানার পরও আক্রমণ বন্ধ হচ্ছে না।

শর্বরী মনে করেন তার ধর্ম এবং বাংলাদেশি পরিচয় এর একটা বড় কারণ।

‘তার মানে বিষয়টা শেষ পর্যন্ত একটা ধর্মের বিষয় হয়ে দাঁড়ালো একদম। প্রথমে ঐটা নিয়ে। ধর্ম। তারপর বলছে আমি পাকিস্তানি। যখন ওরা বুঝেছে আমি পাকিস্তানি না, বাংলাদেশি, তারপর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শুরু করেছে।’

যেসব ভাষায় তাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণ করা হচ্ছে, তাকে তিনি একেবারেই বর্ণবাদী বলে মন্তব্য করেন।

‘বাংলাদেশ সম্পর্কে তারা নানা রকম আজে-বাজে কথা লিখছে। আমরা একটা গরীব, ব্যাকওয়ার্ড দেশ। আমরা অশিক্ষিত। আমরা গরীব। ইত্যাদি।’

এই যে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে আক্রমণ করা হচ্ছে, সেজন্যে তিনি কি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন? তিনি কি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে কোন অভিযোগ করেছেন?

শর্বরী জোহরা আহমেদ বললেন, ‘না, আমার বন্ধু-বান্ধবরা বলছে যেতে। পুলিশের কাছে যেয়ে বলতে। কিন্তু যারা আমাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণ করছে ওরা বেশিরভাগ তো ভারতে। কয়েকজন বোধহয় আমেরিকাতে। আমি টুইটারে দেখলাম ওদের নাম। কয়েকজন এই দেশে। বেশিরভাগই ভারতে। তখন আমি ভাবলাম, এটা নিয়ে আমি বেশি ঝামেলা করতে চাই না। হয়তো এক-দু’দিন পরে শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এখন সাতদিন হয়ে গেল। এক সপ্তাহ ধরে এটা চলছে।’

এবিসি টিভি নেটওয়ার্ক এই বিতর্কের পর যে ভূমিকা নিয়েছে সেটা নিয়েও ক্ষুব্ধ তিনি। তাকে যে এভাবে আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে, এবিসি একবারের জন্যও তার পাশে দাঁড়ায়নি।

‘ওরা কিছুই করেনি। আমার পক্ষে কিছুই বলেনি। ওরা প্রিয়াংকা চোপরাকে নিয়ে ব্যস্ত। আমার কি হচ্ছে না হচ্ছে সেটা নিয়ে ওদের কোন মাথাব্যাথা নেই।’

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *