রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে রেলগাড়ি সেজেছেন বলিউড তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া

Slider সারাদেশ

620c9bda32bb1edf948e485bbbf17c23-5b05425a4b038

টেকনাফ: টেকনাফের আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গা শিশুরা আজ অন্য প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে কাছে পেয়েছে। আজ বুধবার সকালে টেকনাফের বালুখালীতে ইউনিসেফ পরিচালিত শিশুবান্ধব কেন্দ্রে শিশুদের সঙ্গে চমৎকার সময় কাটিয়েছেন এই বলিউড তারকা। তিনি এখানে শিশুদের সঙ্গে রেলগাড়ি সেজেছেন, নাচ করেছেন, গান গেয়েছেন। আবার শিশুদের ১ থেকে ১০ পর্যন্ত ইংরেজিতে গণনা শিখিয়েছেন।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া যখন বালুখালীতে এই স্কুলে আসেন, তখন বেলা ১১টা ৫০ মিনিট। এ সময় তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। তিনি শিশুদের পড়াশোনার খোঁজখবর নেন। বিদায়বেলায় রোহিঙ্গা শিশুরা তাঁকে হাতে তৈরি বাঁশের ঝুড়ি উপহার দেয়। এই উপহার পেয়ে তিনি খুবই আপ্লুত হন।

এদিকে আজ সকাল সাড়ে নয়টায় ইউনিসেফের স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে পালংখালীর জামতলি অস্থায়ী আশ্রয়শিবিরে যান প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। সেখানে গাড়ি থেকে নেমে কাঁদা-মাটির অনেকটা পথ হেঁটে তিনি আশ্রয়শিবিরে যান। সেখানে রোহিঙ্গা শিশু আর নারীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় মিয়ানমার থেকে আসার আগে তাদের ওপর যে অকথ্য নির্যাতন হয়েছে, এখানে থাকা নারীদের কাছ থেকে সেসব ঘটনা জেনে দুঃখ প্রকাশ করেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া।

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিলের (ইউনিসেফ) শুভেচ্ছাদূত হিসেবে গত সোমবার সকালে বাংলাদেশে এসেছেন তিনি। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সার্বিক অবস্থার ব্যাপারে ধারণা পাওয়ার জন্য ইউনিসেফের আমন্ত্রণে তিনি বাংলাদেশে আসেন। ঢাকা থেকে তাঁকে সরাসরি কক্সবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। গত তিন দিনে টেকনাফে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন অস্থায়ী আশ্রয়শিবিরে যান প্রিয়াঙ্কা চোপড়া।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে এই বলিউড তারকা গিয়েছিলেন টেকনাফের হাড়িয়াখালীর ভাঙ্গার এলাকায়। প্রায় নয় মাস আগে রোহিঙ্গা-ঢলের অন্যতম প্রবেশপথ ছিল এই এলাকা। নাফ নদী আর বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়কের এই অংশ দিয়ে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গার বেশির ভাগই এসেছিল। এদের বড় অংশ ছিল নারী ও শিশু। সীমান্তের ওপারে চোখ রাখলেই দেখা যায় মিয়ানমার।

প্রিয়াঙ্কা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে শুনতে থাকেন, তারা প্রথমে এক বা কখনো একাধিক পাহাড় ডিঙিয়ে, নদী আর সাগর পেরিয়ে সবশেষে দীর্ঘ পথ হেঁটে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আসে।

কক্সবাজার সফরের দ্বিতীয় দিনে গতকাল দিনের শুরুতে তিনি এখানে আসার পর রোদ থেকে বাঁচতে একটি গাছের নিচে দাঁড়ান। তাঁর সামনে দাঁড়ানো ইমাম হোসেনকে নাফ নদীর দিকে দেখিয়ে প্রিয়াঙ্কা প্রশ্ন করেন, ‘তোমরা কি ওই পথ দিয়ে এসেছ? জামা কোথায়?’ ইমাম জানায়, প্রচণ্ড গরম, তাই সে জামা গায়ে দেয়নি। এরপর আরও কয়েকজন শিশুকে কাছে ডাকেন প্রিয়াঙ্কা। এদের অনেকের গায়ে জামা ছিল না। পরে তাদের নিয়ে তিনি ছবি তোলেন।

কিছুক্ষণের মধ্যে প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে ঘিরে ভিড় বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে নিরাপত্তাও জোরদার হয়। নিরাপত্তার বাড়াবাড়িতে বিরক্তও হন প্রিয়াঙ্কা। নিরাপত্তা কমানোর জন্য তিনি পুলিশকে অনুরোধ করেন। প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘প্লিজ, আমার জন্য এত নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই। সামনে-পেছনে এত গাড়ি থাকতে হবে না। একটা গাড়ি থাকলেই চলবে।’ তারপরও কড়া নিরাপত্তা ছিল তাঁকে ঘিরে।

টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়ক থেকে প্রিয়াঙ্কা টেকনাফের নেটং (উঠনি) পাহাড়ের উদ্দেশে রওনা হন। সেখানে গেলে তাঁকে জানানো হয়, নাফ নদী দিয়ে মিয়ানমার থেকে কীভাবে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসেছে। এখান থেকে পূর্ব দিকে মিয়ানমার ও পশ্চিমে টেকনাফ এবং জলিলের দিয়া। নাফ টুরিজম পার্ক করা হচ্ছে জলিলের দিয়ায়। এখানে ১৫ মিনিট অবস্থান করে ছবি তোলেন প্রিয়াঙ্কা।

এরপর প্রিয়াঙ্কা লেদা বিজিবি চৌকির কাছে ইউনিসেফ পরিচালিত রোহিঙ্গা শিশুদের খেলাধুলার জন্য তৈরি স্থান পরিদর্শন করেন। পরে প্রিয়াঙ্কা আসেন উখিয়ার বালুখালীতে অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবিরে। এখানে ইউনিসেফ পরিচালিত শিশুবান্ধব কেন্দ্রে এসে ঘণ্টাখানেক কাটান। তিনি শিশুদের সঙ্গে লুডু খেলেন। তাদের আঁকা ছবি নিয়ে গল্প করেন। তিনি খেলনা চায়ের কাপ নিয়েও শিশুদের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠেন। পরে প্রায় মিনিট ১৫ হেঁটে লোকজনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে শিবির ছেড়ে যান। শিবির ছাড়ার আগে তিনি শিশুদের হিন্দিতে স্কুলে যাবে কি না জানতে চান। এরপর তিনি তাদের স্কুলে যেতে বলেন, নিজের দিকে খেয়াল রাখার কথাও বলেন। সবার শেষে ‘খোদা হাফেজ’, ‘আবার দেখা হবে’ বলে বিদায় নেন।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার মুম্বাই ফিরে যাবেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *