অনেক কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের মারধর ও কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ

Slider জাতীয়

42f7122aa94e7a146109dc1a541695ef-5afa611fc4b65

খুলনা: খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন ওয়ার্ডে ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টকে ঢুকতে না দেওয়া, কয়েকজন এজেন্টকে মারধরের মতো ঘটনা ঘটেছে। সিটি করপোরেশনের ১১, ১৫, ২২, ২৫, ২৬, ২৯, ৩০ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের অনেক কেন্দ্রে ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সরেজমিন ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে। তবে বিএনপি অভিযোগ করেছে তাদের ৪০টি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

ভোট শুরুর ১৫ মিনিট আগে সকাল পৌনে আটটায় খুলনা সিটি করপোরেশনে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের রূপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পোলিং এজেন্ট সেলিম কাজীকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। তিনি কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করার জন্য ঢুকতে গেল তাকে পিটিয়েছে সরকারি দলের সমর্থকেরা। আহত সেলিমকে খুলনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

৩১ নম্বর ওয়ার্ডে হাজী আব্দুল মালেক দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্র ও লবণছড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে থাকা বিএনপি প্রার্থীর ক্যাম্পে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এ ছাড়া সেখানকার ভোটকেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্টদের বের করা হয়েছে। এ সব কেন্দ্রে ভোটের লাইন থেকে বিএনপি সমর্থক বা বিএনপির পরিচিত মুখ ভোটারদের বের করে দেওয়া হয়েছে। এসব অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বিএনপির সমর্থকেরা।

২৪ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল গণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কোনো পোলিং এজেন্ট নেই। সেখানকার স্থানীয় বিএনপির কর্মীরা অভিযোগ করছেন, সেখানে বিএনপির এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে সোনা পোতা স্কুল কেন্দ্রে নারী ভোট কেন্দ্রের সামনে বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

২৫ নম্বর ওয়ার্ডে সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে মো জাহিদুল ইসলাম নামের এক ভোটার কেন্দ্র থেকে বেরিয় অভিযোগ করেন, তাকে নৌকা মার্কার ব্যালটে সিল মারার জন্য জোর করা হয়েছে। তিনি রাজি না হলে তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে। ওই কেন্দ্রের বুথের ভেতর সরকারদলীয় মেয়রপ্রার্থীর লোকজন অবস্থান নিয়ে প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে।

বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকেরা অভিযোগ করছেন, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী আমিনুল ইসলাম মুন্নার লোকজন কোনো কেন্দ্রেই বিএনপির এজেন্টদের ঢুকতে দেয়নি। এরপর মুন্নার লোকজন আবদুল গণি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বিএনপির নির্বাচনী ক্যাম্পে ভাঙচুর চালায়।

এদিকে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু অভিযোগ করেছেন, ৪০টি ভোটকেন্দ্র থেকে ধানের শীষের নির্বাচনী পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন সরকারদলীয় প্রার্থীর সমর্থকেরা। তাঁরা প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের সামনে জটলা পাকাচ্ছেন। বিএনপির পোলিং এজেন্ট, সমর্থক ও ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে ঢুকতে না পারেন, এ জন্য ঘেরাও করে রেখে আতঙ্কজনক পরস্থিতি সৃষ্টি করেছেন তাঁরা।

আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে খুলনা জিলা স্কুল কেন্দ্রে নজরুল ইসলাম মঞ্জু সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

বিএনপির মেয়র প্রার্থী জানান, খুলনা জিলা স্কুল কেন্দ্রে একাডেমিক ভবন-১ ও একাডেমিক ভবন-২—এই দুই ভবনে ভোট হচ্ছে। একটিতে ভোটার ১ হাজার ৩৭০ ও অপরটিতে ২ হাজার ৩৩৮ ভোট। বুথের সংখ্যা ১২। কিন্তু একটিতেও বিএনপির পোলিং এজেন্ট নেই। তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে একাডেমিক-১ ভবনের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাজী মোহম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘ধানের শীষের এজেন্টরা আমার কাছ পর্যন্ত এসে পৌছায়নি।’

একাডেমিক ভবন-২-এর প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আতিয়ার রহমানও একই বক্তব্য দেন।

একাডেমিক ভবন-২-এর ৮টি বুথের মধ্যে ২ নম্বর বুথে নৌকার মার্কার ২ জন এবং ৪ নম্বর বুথে ৩ জন পোলিং এজেন্টকে পাওয়া যায়।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মঞ্জু জানান, তিনি যে ৫-৬টি কেন্দ্রে গেছেন, সেসব কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্টদের মারধর করা হয়েছে। কেন্দ্রের ভেতর ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

এখন পর্যন্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালেয় বিএনপির পক্ষ থেকে ৪০টি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১, ১৩, ১৫, ২২, ২৫, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১ ওয়ার্ডগুলো রয়েছে।

মঞ্জু বলেন, ‘কোনো ভোটই হচ্ছে না। অবস্থা খুবই খারাপ। আমার এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্রের বাইরে থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।’

এ পরস্থিতিতে তিনি কী করবেন—জানতে চাইলে মঞ্জু বলেন, ‘আরও দেখব।’

খুলনার নির্বাচনে মেয়র পদে এবার পাঁচজন প্রার্থী। আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক নৌকা এবং বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুজ্জাম্মিল হক হাতপাখা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) মিজানুর রহমান বাবু (কাস্তে) এবং জাতীয় পার্টির এস এম শফিকুর রহমান (লাঙ্গল) মেয়র পদে লড়ছেন।

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ১৪৮ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৫ জন নারী কাউন্সিলর পদে লড়ছেন। এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটার ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। ভোট হচ্ছে ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রে। দুটি ওয়ার্ডের দুটি ভোটকেন্দ্রে ভোট হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *