রাস্তায় নামাজ পড়ায় ৭ মুসলিমকে কারাদণ্ড

Slider সারাবিশ্ব

315967_157

রাস্তায় জামায়াতে নামাজ আয়োজনের অভিযোগে মিয়ানমারে সাতজন মুসলিমকে তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত। গত রমজানের আগে সেখানকার স্থানীয় মাদরাসাটি বন্ধ করে দেওয়ায় তারা প্রায় এক বছর যাবত রাস্তায় নামাজের আদায় করে আসছিলেন। ব্রিটেনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ‘বার্মা হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক’ (বিএইচআরএন) জানিয়েছে, অভিযুক্তদের গত সোমবার মিয়ানমারের ‘ওয়ার অ্যান্ড ভিলেজ ট্র্যাক্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ল’ অনুসারে শাস্তি দেয়া হয়েছে। ওই আইনে গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা রয়েছে। তারা দেশটির সর্ববৃহৎ শহর ইয়াঙ্গুনের থারকেটা এলাকায় নামাজ আদায়ের জন্য রাস্তায় জমায়েত হয়েছিলেন।

মানবাধিকার সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক কিয়াউ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, এই মামলা এবং ঘটনা প্রবাহে যা ঘটেছে, তা বার্মার সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে একটি সামাজিক ও পরিকল্পিত ও বৈষম্যমূলক আচরণ। তিনি আরও বলেন, কর্তৃপক্ষ এই মানুষগুলোর ইবাদতের জায়গা বন্ধ করে দিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিষিদ্ধ করেছে। গত বছরের এপ্রিলে, উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরা থারকেটার দুটি মাদরাসা বন্ধ করে দেয়। যদিও তারা বলছে, স্থানীয় কতৃপক্ষ মাদরাসা দু’টিকে বন্ধ করে দিয়েছে, তারা কতৃপক্ষকে সহায়তা করেছে মাত্র।

কতৃপক্ষ জামায়াতে নামাজ পড়ার অভিযোগে গত বছরের মে মাসে এদেরকে গ্রেফতার করে। উক্ত ৭ ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, তারা দেশটির স্থিতিশীলতা নষ্ট করেছে এবং এর মধ্য দিয়ে তারা আইনের শাসন অমান্য করেছে।

কিয়াউ বলেন, যখন কিছু লোক বাইরে বৃষ্টির মধ্যে তাদের ধর্মীয় অনুশীলন (নামাজ) পালনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন তাদের গ্রেফতার করা হয়। অথচ ইবাদাতের জন্য তাদের কোন অনুমোদিত জায়গাও দেয়া হয়নি। এমনকি এজন্য তাদের শাস্তির মুখোমুখিও হতে হল। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) এর এশিয়া অঞ্চলের ডেপুটি পরিচালক ফিল রবার্টসন গত বছর বলেন, বার্মার কর্মকর্তারা সম্প্রতি উগ্রবাদীদের দাবির কাছে নতজানু হয়ে দুটি মাদরাসা বন্ধ করে দিয়েছে। বার্মার সরকার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।

মিয়ানমারের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী এবং মুসলমানরা শতকরা প্রায় ৪ ভাগ। দেশটি সামরিক স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের দিকে যাত্রা শুরু করলেও সংখ্যালঘুদের প্রতি আইনগত বৈষম্য অব্যাহত আছে। এর পাশাপাশি উগ্রবাদী বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদের উত্থান; যারা বার্মার মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালায়, বিশেষত রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর।

গত সেপ্টেম্বরে বিএইচআরএন একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে, যেখানে দেখা যায় মিয়ানমারের সব জায়গাতে মুসলমানদের ওপরে নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্তৃপক্ষ তাদের জাতীয় পরিচয় পত্র প্রদানে জটিলতা তৈরি করেছে এবং তাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদসমূহ পুনঃন্র্মিাণে বাঁধা প্রদান করছে। উল্লেখ্য, পুরো মিয়ানমারেই কথিত মুসলিম মুক্ত এলাকা গড়ার প্রবণতা ছড়িয়ে পড়ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম কমিশনের রিপোর্ট-২০১৭ অনুসারে, ক্ষমতাসীন অং সান সু চির দল ‘ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ‘চলমান ধর্মীয় স্বাধীনতা অথবা বিশ্বাসের ওপরে হামলাকে সুকৌশলে ও মর্মান্তিকভাবে বৈধতা দিয়েছে’।

মিয়ানমারের মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রধান প্রতিনিধি কিয়াউ খিন এইচআরডাব্লিউকে গত বছর বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে আমরা আমাদের দেশে এসব নতুন মসজিদ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলাম। সহিংসতার সময়ে তার অধিকাংশ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে এবং কিছু মসজিদ সরকার কতৃক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

তিনি মানবাধিকার সংগঠনটিকে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিৎ কারাদণ্ড প্রাপ্ত সাতজন মুসলিমের বিষয়ে নজর দেয়া। এটা বার্মার মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপরে নির্যাতনের সতর্কতাবার্তা মাত্র। মুসলমানদের জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রাপ্তি প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। ধর্মীয় স্বাধীনতায় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কল্পনাও বাইরে চলে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *