খুলনায় জমজমাট ডিজিটাল প্রচারণা

Slider খুলনা

115729_f3

খুলনা: নির্বাচনী প্রচারণামুখর খুলনা নগরবাসী। তরুণ ভোটারদের টানতে চলছে ডিজিটাল প্রচারণা। নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত থাকায় তরুণদের জন্য ডিজিটাল পদ্ধতির এই কৌশল নিয়েছে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। অনলাইন ও নানা সামাজিক মাধ্যমে প্রার্থীর নামে খোলা নানা একাউন্ট, চ্যানেল ও ফ্যানপেজ। সেখানেই নানা কৌশলে ভোট প্রচারণা চলছে। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী পাঁচ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক ও বিএনপি প্রার্থী

নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সমর্থকরা ফেসবুকে ফ্যানপেজ খুলে প্রচারণা চালাচ্ছে। সেখানে প্রার্থীদের নাম, প্রতীক এবং ব্যক্তিগত ভালো দিকগুলো তুলে ধরছেন।

গণসংযোগের বিভিন্ন ছবি দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। মাইকিং ও জনসংযোগ এর মতো নির্বাচনী প্রচারণার সনাতন পদ্ধতির সঙ্গে এই ডিজিটাল প্রচারণা খুলনায় বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। ডিজিটাল প্রচারণার কাজে নিয়োজিত প্রার্থীর সমর্থকরা বলছেন, নির্বাচনী সভার চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসের বার্তা বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছায়। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার নানা প্লাটফর্মে নির্বাচনী প্রচারণা চালালে বেশি ফলপ্রসূ হচ্ছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইতিমধ্যে তার প্রচারণার জন্য উদ্বোধন করেছেন ‘ভোট ফর খালেক’ নামে একটি ওয়েবসাইট। এর আগে বিএনপি তৈরি করেছে ‘বিএনপি খুলনা ডট কম’ নামের ওয়েবসাইট। ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগের লক্ষ্যে এ আয়োজন করা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আবদুল খালেকের ডিজিটাল নির্বাচনী প্রচারণা সেলের সদস্য সফিকুর রহমান পলাশ বলেন, প্রচারে সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক হাতিয়ার এখন সোস্যাল মিডিয়া। বিশেষ করে ফেসবুকের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে দ্রুত বার্তা পৌঁছানো যায়। তিনি জানান, ওয়েবসাইট ছাড়াও ফেসবুকে ‘খালেক ভাইকে মেয়র চাই’ নামে একটি পেজ রয়েছে। এছাড়া খোলা হয়েছে টুইটার অ্যাকাউন্ট ও ইউটিউব চ্যানেল। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা মিডিয়া উপ কমিটির অফিস সেক্রেটারি ও খুলনা জেলা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিয়াজ জানান, নৌকা প্রতীকের গণসংযোগের ছবি-নিউজ মুহূর্তের মধ্যে ইমেইল যোগে সংবাদ কর্মীদের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। নির্বাচন পরিচালনা মিডিয়া উপ-কমিটির সদস্য ছাত্রলীগ নেতা জয়নাল ফরাজী বলেন, সামাজিক মাধ্যমে সাবেক মেয়র আবদুুল খালেকের সময়েরও আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নমূলক নানা তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে।

এদিকে, বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা মিডিয়া উপ-কমিটির সদস্য সচিব ও মহানগর বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এহতেশামুল হক শাওন বলেন, বিএনপি মনোনীত ২০ দল সমর্থিত, ধানের শীষের প্রার্থী খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি, নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নির্বাচনী বিষয়ে নিয়ে দেশে, বিদেশে যে কোনো স্থান থেকে আলোচনা, উপদেশ, পরামর্শ সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের যোগাযোগ করার জন্য সোস্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্লাটফর্ম খোলা হয়েছে। তিনি জানান, মেয়র প্রার্থী কখন কোথায় গণসংযোগ করছেন সঙ্গে সঙ্গে তার সংবাদ ও নিউজ সাংবাদিকদের কাছে ই-মেইলের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। ফেসবুকের মাধ্যমে গণসংযোগটি লাইভ প্রচার করা হচ্ছে। ধানের শীষের নির্বাচনী প্রচার উপ-কমিটির সদস্য সচিব ও স্বেচ্ছাসেবক দলের খুলনা মহানগর আহ্বায়ক আজিজুল হাসান দুলু বলেন, নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সমর্থনে সোস্যাল মিডিয়ার নানা প্লাটফর্মে পেজ তৈরি করা হয়েছে। ফেসবুক পেজের পাশাপাশি রয়েছে ওয়েবসাইট, ওয়াটস্‌অ্যাপ, ভাইবার, ইমো, টুইটার অ্যাকাউন্ট। খোলা হয়েছে ইউটিউব চ্যানেল। এছাড়া নির্বাচন উপলক্ষে একটি ইমেইল অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। কেসিসি ইলেকশন ২০১৮ নামে একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। ভোটার তার স্মার্টফোনে অ্যাপটি ডাউনলোড করে নির্বাচনী ইশতেহারসহ সব ধরনের তথ্য এবং কিউআর কোড-এর মাধ্যমে প্রতিদিন সংবাদপত্রের নির্বাচন সংক্রান্ত সর্বশেষ সংবাদ জানতে পারবেন। চাইলে প্রোফাইলের ছবিটি ধানের শীষের ফ্রেমেও আনতে পারবে। নির্বাচন পরিচালনা মিডিয়া উপ-কমিটির সদস্য যুবদল নেতা জিএম রাসেল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী প্রচারণা চালানো হচ্ছে ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে। প্রার্থীদের ফেসবুকের জনপ্রিয় নানা পোস্ট তুলে ধরা হচ্ছে। সেগুলো অনেক ‘শেয়ার ও লাইক’ পাচ্ছে। এতে বিভিন্ন তথ্য পৌঁছে যাচ্ছে ভোটারের কাছে। আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মো. ইউনুচ আলী বলেন, ডিজিটাল প্রচারণার অনুমতি আছে নির্বাচন আইনে। তারপরও সচেতনভাবে প্রচারণা চালানোর আহ্বান জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ: মহানগরীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সোমবার নগরীর সরকারি মডেল স্কুলে শিক্ষকদের জমায়েত করে সমাবেশের মাধ্যমে এ নির্দেশ দেয়া হয়। সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা বক্তব্য রাখেন। এ সকল স্কুল-কলেজে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে এবং এ সকল শিক্ষকরাই ভোট গ্রহণের দায়িত্ব পালন করবেন। বিএনপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। সভায় যে সকল শিক্ষক উপস্থিত থেকে একটি নির্দিষ্ট মার্কার পক্ষে কাজ করার স্বপক্ষে বক্তব্য রেখেছেন তাদের কেসিসি নির্বাচনে কোনো ধরনের দায়িত্ব না দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। মঙ্গলবার রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর প্রধান এজেন্ট অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা। অভিযোগে তিনি বলেন, ওই সমস্ত শিক্ষক দায়িত্ব পালন করলে নিরপেক্ষতা ভঙ্গ হবে। তারা যা করেছে তা নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন। এর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি। সরকারি দপ্তরে কর্মরত প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের নিয়েও নির্বাচনী সভার আয়োজন করেছেন তালুকদার আবদুল খালেক। বুধবার দুপুর ১২টায় আইইবি সেন্টার খালিশপুরে এ নির্বাচনী সভাকে কেন্দ্র করে মধ্যাহ্ন ভোজেরও আয়োজন করা হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ ধরনের আয়োজন সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিধিমালার চরম লঙ্ঘন দাবি করে সভা বন্ধ করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নির্বাচনী প্রধান এজেন্ট অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্রে বলা হয়, নির্বাচন আচরণবিধিমালা অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ। কিন্তু সরকারি দলের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক ইতিপূর্বে চিকিৎসক ও শিক্ষকদের নিয়ে নির্বাচনী সভা করে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। এ বিষয়ে একাধিক অভিযোগ দেয়া হলেও প্রতিকার পাওয়া যায়নি। আইইবি খুলনা কেন্দ্রের প্রকৌশলী সমাবেশ বন্ধ করতে নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়।

বিএনপি নেতার বাড়িতে পুলিশের তাণ্ডব: খুলনা জেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম সম্পাদক ও কেসিসি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নির্বাচন উপকরণ বিভিন্ন কেন্দ্রে সরবরাহ সংক্রান্ত কমিটির দায়িত্ব পালনরত আবু হোসেন বাবুর বাড়িতে রূপসা থানা পুলিশ অভিযানের নামে তাণ্ডব চালিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ ও ডিবির কর্মকর্তারা তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এবং স্থানীয় অন্যান্য নেতাদের নির্বাচনী তৎপরতা থেকে বিরত থাকার হুমকি দেয়। পুলিশ অভিযানের সময় বেশ কিছু নির্বাচনী উপকরণও নষ্ট করে। এ বিষয়ে বুধবার বিএনপির মেয়র প্রার্থীর প্রধান নির্বাচী এজেন্ট অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ভোটের আগেই থাকবে ১০ জন করে পুলিশ: ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২২৬টি ভোট কেন্দ্রকে অতি গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের নিরাপত্তায় থাকবে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও বিজিবি। তবে অতিরিক্ত নিরাপত্তায় প্রতিটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ভোটের আগে থেকেই ১০ জন করে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। ভোটকেন্দ্র ও আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ মোড়, রাজনৈতিক দলের কার্যালয় ও নগরীর প্রবেশদ্বারে ১৩ই মে থেকে তাদের দায়িত্ব পালন শুরু হবে। একইসঙ্গে আচরণবিধি পর্যবেক্ষণে মাঠ পর্যায়ে রয়েছে ম্যাজিস্ট্রেটদের ১০টি টিম ও চারটি নাগরিক ভিজিলেন্স টিম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *