নারায়ণঞ্জের সোনারগাঁওয়ের বিখ্যাত লিচু পাকতে শুরু করেছে। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে বাজারেও আসবে বলে লিচু বাগানের চাষি ও ব্যবসায়ীরা আশা করছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বাগানের লিচুতে রঙ ধরেছে। সোনারগাঁওয়ের লিচু আগাম বাজারে আসে বলে দেশের বিভিন্ন স্থানের লিচুর তুলনায় এ লিচুর চাহিদা থাকে বেশি। সুস্বাদু ও সুমিষ্ট হিসেবে সোনারগাঁওয়ের লিচু সারা দেশে বেশ পরিচিত। বৈশাখের শেষ সময়ে এ লিচু প্রথম বাজারে আসে। এরই মধ্যে প্রতিটি গাছের ডালে থোকায় থোকায় ঝুলছে কাঁচা ও আধা পাকা লিচু। বাগানগুলোতে ণে ণে বেজে উঠছে টিন ও বাঁশের তৈরী বাজনা।
দেশের অন্যসব অঞ্চলের লিচুর আগে বাজারে আসে বলে সোনারগাঁওয়ের লিচুর প্রতি ক্রেতার আগ্রহ বেশি। লিচু চাষিরা জানান, এ বছর দেশের আবহাওয়া লিচু চাষের অনুকূলে থাকার কারণে লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। এতে করে বেশ খুশি চাষিরা। এ বছর লোকসানে পড়তে হবে না বলেও জানিয়েছেন চাষিরা।
সোনারগাঁওয়ে বিভিন্ন লিচু বাগান ঘুরে দেখে যায়, প্রতিটি বাগানের লিচু গাছে থোকায় থোকায় কাঁচা পাকা লিচু ঝুলছে। ঝাঁকড়া গাছের ডালে ডালে ঝুলন্ত লাল টকটকে রংয়ের ছোট ফলের গুচ্ছ লিচুর দৃশ্য খুবই মনোরম। ব্যবসায়ীরা প্রতিটি গাছে বৈদ্যুতিক বাতি, টিনের বাজনা বাজিয়ে উচ্চ শব্দ করে বাদুড় ও কাকের উপদ্রপ থেকে লিচুকে রা করতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। রাতে এভাবে পাহারা দেয়ার সময় প্রতিটি বাগানে উৎসবের আমেজ ল করা যায়।
লিচু চাষিরা জানিয়েছেন, সোনারগাঁওয়ে কদমী, মোজাফফরপুরী, চায়না-এলাচি, পাতি এ পাঁচ ধরনের লিচুর চাষ হয়ে থাকে। তবে অন্যান্য লিচু থেকে বর্তমানে কদমী লিচু চাষের প্রতি চাষিরা মনোযোগী হয়ে পড়েছেন। সোনারগাঁওয়ে অন্যান্য ফসলের চাষ বাদ দিয়ে চাষিরা এখন লিচু চাষে আগ্রহী হয়েছেন। প্রতি বছর এক একটি বাগান চার-পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। তাই চাষিরা কোথাও একটু খালি জায়গা পেলেই সেখানেই কদমী লিচুর বাগান তৈরি করছেন। তবে এ বছর লিচুর মুকুল ধরা থেকে শুরু করে লিচু বড় হওয়া পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। তাই ফলন ভালো হয়েছে। বিগত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে তোলা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
এদিকে সোনারগাঁওয়ে ছোট বড় মিলিয়ে তিন শতাধিক লিচুর বাগান রয়েছে। এ বাগানে বেশির ভাগই কদমী লিচু চাষ হচ্ছে। বাগানীরা আশা করছেন এ বছর কদমী লিচু বিক্রি হবে প্রতি শ’ সাড়ে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে। পাতি লিচু বিক্রি হবে প্রতি শ’ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। এ বছর লিচু চাষের জন্য আবহাওয়া ভালো থাকায় লিচুর গুটি ও মুকুল নষ্ট হয়নি। ফলে লিচুর আশানুরূপ ফলন হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার সোনারগাঁও পৌরসভা, বৈদ্যেরবাজার, মোগরাপাড়া, বারদী, সনমান্দি ও সাদিপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে লিচু বাগান রয়েছে। তবে পৌরসভার সর্দার বাড়ী, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, দুলালপুর, বাড়ী মজলিশ, দীঘিরপাড়, পানাম, অর্জুন্দি, বাগমুছা, দত্তপাড়া, ইছাপাড়া, কৃষ্ণপুরা, হাড়িয়া, পানাম গাবতলী, ষোলপাড়া, ভট্টপুর এলাকায় উৎকৃষ্টমানের লিচুর চাষ হয়ে থাকে। সোনারগাঁওয়ের লিচু রঙে ও স্বাদে অতুলনীয়।
লাহাপাড়া গ্রামের লিচু চাষি জালাল উদ্দিন জানান, এ বছর লিচুর মুকুল ঝড়বাতাসে নষ্ট না হওয়ায় লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। বিগত বছরের চাষিদের ক্ষতি পুষিয়ে তোলা সম্ভব হবে।
পানাম গাবতলী গ্রামের লিচু ব্যবসায়ী ইসমাইল ও কাউসার মিয়া বলেন, আমরা লিচুর ফলন না দেখেই বাগান মালিকের কাছ থেকে কিনে থাকি। লিচু ব্যবসায়ীরা ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে লিচু ব্যবসা করে। এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় ভালো লাভের আশা করতে পারছি।
স্থানীয়রা জানান, অন্যান্য এলাকার লিচুর চেয়ে সোনারগাঁওয়ের লিচু আকারে একটু বড় ও সুস্বাদু হওয়ায় এ লিচুর চাহিদা বেশি। আর সোনারগাঁওয়ের লিচু সবার আগে বাজারে আসে তাই এ লিচুর চাহিদা একটু বেশি। তুলনামূলকভাবে সোনারগাঁওয়ের লিচু বেশি দাম থাকবে।
গাবতলী বাহাউদ্দিন সাহেবের বাগানের ক্রেতা সালাউদ্দিন বেপারী জানান, সোনারগাঁওয়ের গাবতলী সাধুর বাগানের লিচুর চাহিদা অন্যান্য বাগানের লিচুর চেয়ে বেশি। কারণ এ লিচু আকারে বড় ও সুস্বাদু। লিচু পাকা শুরু হয়েছে। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে কদমী লিচু বাজারে আসবে। তবে মওসুমের শুরুতে এ লিচুর দাম চড়া হতে পারে।
সোনারগাঁও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশেক পারভেজ বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় সোনারগাঁওয়ের আবহাওয়া লিচু চাষের জন্য অনুকূলে ছিল। এ বছর খরা বা ঝড়বৃষ্টি তেমন হয়নি। ফলে সোনারগাঁওয়ের লিচুর ফলনও ভালো হয়েছে।