দাবিই জানাতে পারেননি কেউ

খেলা

pic-03_159473বিশ্বকাপের আগে শেষ আসর, ফরম্যাটটাও একই বলে এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগকে ঘিরে আশার আলো জ্বালিয়ে বসেছিলেন সবাই। ভেবেছিলেন অন্তত এবার সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে চমকে দেবেন কেউ কেউ, দেখাবেন নির্বাচকদের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়া কোনো নৈপুণ্য। কিন্তু গতকাল প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ কিংবা হাবিবুল বাশার সেরকম একটি নামও চট করে বলতে পারেননি। অনেক সময় নিয়ে যাঁদের নাম বলেছেন, তাঁরা বড়জোর ৩০ জনের বিশ্বকাপ প্রাথমিক স্কোয়াডে ঠাঁই পেতে পারেন, চূড়ান্ত স্কোয়াডে কোনোভাবেই নয়। বিশ্বকাপের সেই ৩০ জনের তালিকা আইসিসি বরাবর পাঠানোর শেষ সময়সীমা ৭ ডিসেম্বর। তবে এরই মধ্যে সেটি বিসিবিতে জমাও দিয়ে দিয়েছে নির্বাচক কমিটি। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে যখন অভাবিত কিছু ঘটেনি, তখন ধরেই নেওয়া যায় সে তালিকার কোনো নাম থাকা-না থাকা নিয়ে চোখ কপালে ওঠার সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ। চমক হতো যদি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে চমকে দিতে পারতেন কোনো এক ক্রিকেটার। কিন্তু পারেননি কেউই। নির্বাচক কমিটির অন্যতম সদস্য হাবিবুল বাশার যেমন বলছেন, ‘প্রিমিয়ার লিগে আরো অনেকে ভালো করবে বলে আশা করেছিলাম।’ অবশ্য একটা আসরকেই দল গঠনের মানদণ্ড মনে করেন না প্রধান নির্বাচক ফারুক, ‘স্রেফ একটা টুর্নামেন্টের ওপর নির্ভর করে দল গড়ি না। সবাইকে একটা প্রসেসের মধ্য দিয়ে আসতে হয়। ধরুন, গত মাস ছয়েক ভালো করছে, এমন কাউকেই আমরা বিবেচনা করব।’ কিন্তু কেউ যদি চামারা কাপুগেদারার মতো রানের পাহাড় গড়তেন, তাহলে? তাহলে পদ্ধতি পাল্টাতেন ফারুকও, ‘তবে হ্যাঁ, কেউ যদি এক্সট্রা অর্ডিনারি কিছু করে ফেলে, তাহলে ভিন্ন কথা। এবারের লিগে তেমন কিছু ঘটেনি।’ শ্রীলঙ্কার কাপুগেদারাকে এবার প্রথম পাঁচ ম্যাচে খেলিয়েছে ভিক্টোরিয়া। সেই পাঁচ ইনিংসেই দুটি সেঞ্চুরি আর একটি ফিফটিতে তাঁর সংগ্রহ ১২১.৬৭ গড়ে ৩৬৫ রান। বাংলাদেশের কেউ এমন নৈপুণ্য দেখালে নির্বাচক কমিটি তাঁকে উপেক্ষা করত বলে মনে হয় না। কিন্তু ওই আকাশচুম্বী নৈপুণ্য দূরের কথা, জোর গলায় দাবি জানানোর মতোও কেউ নেই। এ পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগে সেঞ্চুরি হয়েছে মাত্র আটটি। এর মাত্র তিনটি করেছেন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা। রাজিন সালেহ লিগে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সেঞ্চুরি করার পর নাম লিখিয়েছেন এনামুল হক ও অভিষেক মিত্র। এঁদের মধ্যে এনামুল জাতীয় দলে নিয়মিত। রাজিন সালেহর নিজস্ব কোনো দাবি নেই। আর ওই একটি সেঞ্চুরি ছাড়া ৮ ম্যাচে ২৪৫ রান করে অভিষেক মিত্রও আন্তর্জাতিক অভিষেকের দাবিদার নন। বোলিংয়ে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের মোহাম্মদ শহিদ ভালোমতোই আলোচনায় আছেন, তবে সেটি সম্ভবত অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশন, পেসারদের ইনজুরি প্রবণতা এবং ৩০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করার সুবিধা-এ তিনের কারণেই। ব্রাদার্সের আসিফ হাসান ৮ ম্যাচে ২১ উইকেট নিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তিনি তো স্পিনার, তাও বাঁহাতি। সাকিব আল হাসান-তাইজুল ইসলামদের বিশ্বকাপ ভাবনায় আপাতত জায়গা নেই তাঁর। তবে অস্ট্রেলিয়া ‘উন্মুখ’ হয়েই ছিল একজন পেসার-অলরাউন্ডারের জন্য। জিয়াউর রহমান, মোক্তার আলী কিংবা ফরহাদ রেজা কি পারতেন না ঢাকার এ লিগে সে সুযোগটা নিতে? কিন্তু তাঁরা এমন কিছু করেননি, যা দেখে নির্বাচকরাও বাধ্য হবেন বিশ্বকাপে একজন পেসার অলরাউন্ডার নিয়ে যেতে। জাতীয় দলের বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের এমন সাদামাটা নৈপুণ্য কেন? এবারের লিগে অন্যতম প্রধান আলোচনা বাজে আম্পায়ারিংয়ের কাঁধে দায় চাপিয়ে দিতে নারাজ ফারুক, ‘আম্পায়ারিং নিয়ে কথা বলে অন্তত খেলোয়াড়দের কোনো ফায়দা হবে না।’ আরো বিস্তারিত বললেন হাবিবুল, ‘আম্পায়ারিং নিয়ে অনেক বেশি কথা হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে ক্রিকেটারদের। দশটা ম্যাচে নিজের বিরুদ্ধে এক-দুইটা বাজে সিদ্ধান্ত যেতেই পারে, সে তো আন্তর্জাতিক ম্যাচেও হতে পারে, কিন্তু সেটা ভেবে বসে থাকলে ক্ষতিটা ক্রিকেটারেরই। ক্রিকেটারদের প্রতি আমার তাই বিনীত অনুরোধ, প্লিজ, আম্পায়ারিং নিয়ে না ভেবে নিজের খেলাটা খেলো।’ হতে পারে জিম্বাবুয়ে সিরিজে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যাঁরাই সুযোগ পেয়েছেন, কাজে লাগিয়েছেন। আর সেসব দেখে নিরুসাহ হয়েছেন বাকিরা, এ তত্ত্ব মানতে রাজি নন হাবিবুল, ‘জিম্বাবুয়ে সিরিজে সবাই ভালো খেলেছে বলে আমার আর সুযোগ নেই ভেবে যে হাল ছেড়ে দেবে, এটা তার সমস্যা। কারণ বিশ্বকাপটাই তো আর শেষ খেলা না। আগামী বছর ঘরের মাঠেই চারটা গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ আছে। ভবিষ্যতে আরো খেলা হবে। তাই যে যেখানে খেলছে, পারফর্ম করলেই দলে ঢোকার সুযোগ আছে। এখন যারা জাতীয় দলে খেলছে, তারাও কিন্তু পারফর্ম করেই এসেছে। তাই কারোরই আশাহত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’ তাহলে কি উইকেটেই বাসা বেঁধেছিল সব সমস্যা? লিগ শুরুর আগে ঢাকার ক্লাবগুলোর প্রস্তুতি ম্যাচের স্রোতে উইকেটই ঠিকভাবে প্রস্তুত হতে পারেনি, বিশেষ করে ফতুল্লা স্টেডিয়ামের। আবার সে মাঠেই ১৩৬ বলে ১৬১ রানে অপরাজিত ছিলেন কাপুগেদারা, যাঁর গায়ে শেষবার শ্রীলঙ্কার জার্সি উঠেছিল ২০১২ সালের জুনে। আসলে আম্পায়ারিং-উইকেট কোনো কারণ নয়, প্রতিকূলতা জয় করার মানসিকতারই অভাব ক্রিকেটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *