চ্যালেঞ্জের মুখে বিএনপি

Slider রাজনীতি

279910_195

 

 

 

 

নির্বাচনী বছরে আবারো কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বিএনপি। চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডে দলটির স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ওলটপালট হয়ে গেছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি আদায় এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার বদলে দলটির এখন মূল এজেন্ডা হয়ে দাঁড়িয়েছে দলীয় প্রধানের কারামুক্তি। খালেদা জিয়ার শিগগির জামিন পাওয়ার যে আশা দলের অভ্যন্তরে জাগ্রত হয়েছিল, তাতে চিড় ধরেছে। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক কৌশল সূক্ষ্ম পর্যালোচনায় নিয়ে দলটিকে এখন পথ চলতে হচ্ছে সতর্কভাবে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৯-১০ মাস বাকি থাকায় দলের নেত্রীর কারামুক্তির জন্য কঠোর কোনো আন্দোলনেও নামতে পারছে না বিএনপি। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ইতোমধ্যে ১৮ দিন পার করেছে তারা। দলটির নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, সংঘর্ষে জড়াতে নানা উসকানি রয়েছে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিও তাদের পালন করতে দেয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় তারা সতর্কভাবেই নানামুখী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরান ঢাকার জেলখানায় রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শে শীর্ষ নেতারা বিশেষভাবে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা দল পরিচালনায় সামনে থেকে ভূমিকা রাখছেন। খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার সাথে সাথে বিএনপির ঐক্যে ফাটল ধরতে পারে, এমন প্রপাগান্ডা ছিল বিভিন্ন মহলে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত সে ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। বরং সাংগঠনিক কার্যক্রমে বিএনপিতে এখন বেশ ঐক্য পরিলতি হচ্ছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রচারণা রয়েছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি বিলম্বিত করে ক্ষমতাসীন দল বা কোনো পক্ষ দু’টি কৌশলের আশ্রয় নিতে পারে। প্রথমত, টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসতে আগামী নির্বাচন ঘিরে নানা ধরনের দরকষাকষি চালানো; দ্বিতীয়ত, খালেদা জিয়াবিহীন নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছতে বিএনপিকে বাধ্য করা।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া এখন তারা অন্য কিছুই ভাবছে না। সব ধরনের প্রতিকূলতা পেরিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে মাঠে থাকার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। চেয়ারপারসনের মুক্তি ত্বরান্বিত করতে মাঠের কর্মসূচি ও আইনি লড়াই ছাড়াও নানা তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে থাকলেও দল পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন বলে জানা গেছে। দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে তার। ইতোমধ্যে তিনি সুনির্দিষ্ট তিনটি নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রথমত, দলীয় প্রধানের মুক্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকা; দ্বিতীয়ত, কঠিন এ সময়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা এবং তৃতীয়ত, নির্বাচনের মাঠ প্রস্তুত করা।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়া দিগন্তকে বলেছেন, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বিএনপি এখন বেশি ঐক্যবদ্ধ। শুধু তা-ই নয়, প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নেতারা রাজপথে সক্রিয়। সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে বিএনপি আবারো ঘুরে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, দেশের এই চরম সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমরা বদ্ধপরিকর। যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে আমরা প্রস্তুত। আন্দোলন সফলে আমরা রাজপথে থাকব।

জানা গেছে, সরকার যতই কঠোর হোক কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবে না বিএনপি। শেষ পর্যন্ত ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে তারা। নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারবিরোধী জনমত সৃষ্টি করাই তাদের মূল ল্য। আগামী সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত এ কৌশলেই এগোতে চায় দলের হাইকমান্ড।

এ মুহূর্তে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দিয়ে শক্তি য় করতে নারাজ বিএনপি। দলটির নেতাদের মতে, আক্রমণাত্মক কর্মসূচি দিলে সরকারও হার্ডলাইনে যাবে। সে কারণে তারা হরতালসহ কঠিন কোনো কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে না। দলের নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশ নিতে রাজপথে নেমে আসছেন। বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থিতি ক্রমে বাড়ছে। এ অবস্থায় উগ্র কোনো কর্মসূচি দেয়া হলে অতীতের মতো আবারো সুযোগ নেবে মতাসীন দল। এতে দেশ-বিদেশে দলের ভাবমর্যাদাও সঙ্কটে পড়বে। একই সাথে সারা দেশে নেতাকর্মীদের ওপর মামলা ও ধরপাকড়ে আবারো ব্যাকফুটে চলে যাবে দল।

সিনিয়র নেতারা বলছেন, তারা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের সুফল পাচ্ছেন। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সুশীলসমাজ সবাই তাদের পক্ষে কথা বলছেন।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, চেয়ারপারসনকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠালেও আমরা কঠোর কর্মসূচি দেইনি। নিয়মতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছি। কিন্তু সেখানেও কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশ লাঠিচার্জ করছে। সরকার নাশকতার জন্য আমাদের নানাভাবে উসকানি দিচ্ছে। কিন্তু আমরা সে দিকে পা দিচ্ছি না।

তিনি বলেন, সরকারের আশা ছিল খালেদা জিয়াকে আটক করতে পারলে বিএনপি ভেঙে যাবে। দলের নেতাকর্মীরা হতাশায় ভেঙে পড়বে কিন্তু সেটা হয়নি। উল্টো বিএনপি আরো শক্তিশালী হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *