দুই শতাধিক বিদেশী নার্স বছরে নিয়ে যাচ্ছে অর্ধশত কোটি টাকা

Slider বিচিত্র

297078_116

 

 

 

 

বিদেশী চিকিৎসকই নন, নার্সরাও বাংলাদেশ থেকে বছরে অর্ধশত কোটির বেশি টাকা নিয়ে যাচ্ছেন অবৈধভাবে। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল রয়েছে যেখানে বিদেশী নার্সরা নামাত্র অনুমতি নিয়ে এবং বেশির ভাগই বিনা অনুমতিতে বছরের পর বছর ধরে কাজ করছেন। এদের বেশির ভাগই ভিজিট ভিসায় এ দেশে আসেন এবং পরে নানা কারণ দেখিয়ে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে এ দেশে অবস্থান করেন। জানা গেছে, নার্সদের বেশির ভাগই প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আসছেন।

সংশ্লিষ্টদের মতে বাংলাদেশে বিদেশী নার্সের কোনো প্রয়োজন নেই। এ দেশে নার্সিং কারিকুলাম যথেষ্ট উন্নত মানের। যারা বিভিন্ন নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে নার্স হয়ে বেরোচ্ছেন তাদের মেধাও প্রশংসনীয়। স¤প্রতি নার্সিংয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী একজন ইউরোপিয়ান বাংলাদেশের নার্সিং কারিকুলাম দেখে প্রশংসা করে গেছেন। সব ধরনের চিকিৎসার জন্য এ দেশে যথেষ্ট যোগ্য নার্স আছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার সুরাইয়া বেগম। গতকাল শনিবার তার অফিসে সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, আমাদের নার্সরা যথেষ্ট সমর্থবান, তারা মেধাবীও বটে। এখানে চিকিৎসাকাজে সহায়তা করার জন্য বিদেশী নার্সের প্রয়োজন নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবশ্য প্রযুক্তি হস্তান্তরের (টেকনোলজি ট্রান্সফার) জন্য উচ্চ প্রশিক্ষিত নার্সের প্রয়োজন হতে পারে। তবে এসব কাজে যারা আসেন তারা সুনির্দিষ্ট কাজ করে ভিসা শেষ হওয়ার আগেই নিজের দেশে চলে যান।

বাংলাদেশে কতজন বিদেশী নার্স নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিল থেকে অনুমতি নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে রেজিস্ট্রার সুরাইয়া বেগম জানান, ৫০ জনের মতো বিদেশী নার্স কাজ করতে পারেন এ দেশে। এর বাইরে আছে কি না আমরা জানি না। তিনি বলেন, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনুমতির জন্য আবেদন করেছিলেন ২০ জন নার্স। আবেদনকারীদের সম্বন্ধে নার্সিং কাউন্সিল মতামত পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে। যে ২০ জন আবেদন করেছেন এর বাইরে হয়তো আরো ৩০ জনের মতো থাকতে পারে।

কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু রাজধানী ঢাকাতেই দুই শ’র বেশি বিদেশী নার্স কাজ করছেন। এদের বেশির ভাগেরই কোনো অনুমোদন নেই। এরা বিভিন্ন হাসপাতাল অথবা ক্লিনিকে কাজ করছেন। ঢাকার বাইরেও কয়েকটি বড় শহরে বিদেশী নার্স, বিশেষ করে ভারতীয় নার্সরা কাজ করছেন। অনুমোদনহীন নার্সরা বাইরে খুব একটা আসেন না। তা ছাড়া ঢাকায় থাকলে তো খুব বেশি সমস্যা হয় না। ভারতীয় নাগরিকদের গায়ের চেহারা অনেকটা বাংলাদেশীদের মতো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এদের পার্থক্য করা যায় না। এ সুযোগটা নিয়েই এরা বাংলাদেশে কাজ করছেন নির্বিঘেœ স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে।

জানা গেছে, এদের অনেকেই দক্ষ নার্স। ফলে এরা উচ্চ বেতনে কাজ করছেন। এদের বেশির ভাগেরই প্রতি মাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকা বেতন দিতে হচ্ছে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানকে।

নার্সিং কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার সুরাইয়া বেগম জানিয়েছেন, ৫০ জনের বাইরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সেবার জন্য কিছু ইউরোপিয়ান নার্স কাজ করছেন। এদের কারোরই নার্সিং কাউন্সিলের অনুমোদন নেই। তিনি জানান, হতে পারে এরা মানবিক কাজে বাংলাদেশে এসেছেন। তবু সবারই উচিত অনুমোদন নিয়ে কাজ করা। আমরাও বিদেশে গেলে অথবা সেখানে কাজ করলে যথাযথ অনুমোদন নিয়েই কাজ করি।

বাংলাদেশে শুধু নার্সই নয়, রয়েছেন কয়েক শ’ ভারতীয় ডাক্তার। এরা টেকনোলজি ট্রান্সফার, এ দেশের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের অধীনে সেবা করার নামে বাংলাদেশে কাজ করছেন এবং বছরে কয়েক শ’ কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। এদের ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের অনুমোদন নিয়ে আছেন এবং অবশিষ্ট ৯০ শতাংশ বিনা অনুমতিতে এখানে অবস্থান করছেন।

উল্লেখ্য বাংলাদেশ ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দেশ। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্নভাবে বছরে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি ভারতে চলে যাচ্ছে। এত বিশাল অঙ্কের ডলার বাংলাদেশ থেকে চলে গেলেও ভারত বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কোনো কাজের বুয়াকেও সহ্য করে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *