সুসংগঠিত আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ দুর্বল বিএনপি

Slider রাজনীতি

131410a1জামালপুর ৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের সুসংগঠিত ও শক্তিশালী আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী লড়াইয়ে বিগত দিনে একবারও টিকতে পারেনি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল বিএনপি। এখানে আওয়ামী লীগের একক সম্ভাব্য প্রার্থী বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি।

আসন্ন নির্বাচনে মির্জা আজম এমপির সঙ্গে লড়াই করতে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক গোলাম রব্বানী, কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল ও ইঞ্জিনিয়ার দৌলতুজ্জামান আনসারীসহ বিএনপির চারজন সম্ভাব্য প্রার্থী। এ ছাড়া এ আসনে সিপিবির প্রার্থী হিসেবে হাসান হাফিজুর রহমান সোহেল মাঠে সক্রিয় রয়েছেন বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগ: জামালপুরের মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ আসনে আওয়ামী লীগের একক সম্ভাব্য প্রার্থী বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি। তিনি এ আসন থেকে পরপর চারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে নিয়োজিত থাকায় মির্জা আজম এমপি তাঁর নির্বাচনী এলাকার রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্ট ও বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে এমপি থাকায় তিনি মেলান্দহ এবং মাদারগঞ্জ উপজেলায় বহু স্কুল কলেজ ও মাদ্র্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিয়ে এলাকার বহু শিক্ষিত যুবক যুবতীর বেকার সমস্যা সমাধান করেছেন।

মির্জা আজম এমপি বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে তিনি তাঁর নিজ নির্বাচনী এলাকা ছাড়াও জামালপুর জেলার সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সচেষ্ট। তিনি ইতিমধ্যে  জেলা শহরের যানজট রোধে দুটি বাইপাস সড়ক নির্মাণ ও জামালপুর মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ ছাড়া  তিনি মেলান্দহে বেগম ফতিুন্নেছা মুজিব ভেটেরিনারি কলেজ স্থাপন, বঙ্গমাতা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন, জামালপুরে দুটি বিদ্যুত প্লান্ট নির্মাণ এবং জেলা শহরে একটি দৃষ্টিনন্দন কালচারাল ভিলেজ প্রতিষ্ঠা ও দুটি অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার কার্যাক্রম দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছেন।

জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক সুরুজ্জামান জানান, জামালপুর জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি জেলার সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি জেলা শহরসহ জেলার প্রতিটি উপজেলায় দলকে সুসংগঠিত করতে সচেষ্ট। তিনি ইতিমধ্যে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ ও জেলা যুবলীগের সম্মেলন সম্পন্ন করিয়ে নিয়মিত কমিটি গঠন করিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি জেলা আওয়ামী লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক উপায়ে সংগঠনের প্রতিটি স্তরেই নিয়মিত কমিটি গঠন কার্যক্রম প্রায় শেষ করিয়েছেন। এতে মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ আসনসহ জেলার প্রতিটি আসনেই দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে।

মেলান্দহ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক সুজা বলেন, ‘মেলান্দহ উপজেলার সর্বস্তরেই বর্তমানে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো অত্যন্ত সুসংগঠিত। এ আসনে মির্জা আজম এমপি আবারো নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়ে স্বাচ্ছন্দেই নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে পারবেন।

মাদারগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জীবন কৃষ্ণ শাহা এবং মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান বেলালের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা বলেন, ‘মাদারগঞ্জ উপজেলার সর্বস্তরেই আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সুসংগঠিত। এ আসনের একমাত্র এমপি প্রার্থী অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি। তিনি আসন্ন নির্বাচনেও প্রার্থী হয়ে খুব সহজেই বিজয়ী হবেন।’

বিএনপি: মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ আসনে বিএনপিতে বরাবরই দুটি গ্রুপ বিদ্যমান থাকায় এখানে বিএনপির প্রার্থী কখনো জয়ের মুখ দেখেনি। তবে মেলান্দহের সাবেক পৌর মেয়র হাজি দিদার পাশাসহ তার গ্রুপটি গতবছর বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। এরপর থেকেই এ আসনে বিএনপির দলীয় কোন্দল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে আগামী নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির প্রার্থীকে আর দলীয় কোন্দল মোকাবেলা করতে হবে না বলে বিএনপিদলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

আসন্ন নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকার শীর্ষে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক ও মেলান্দহ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল। এ ছাড়া এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে সক্রিয় কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক গোলাম রব্বানী, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল এবং বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার মো. দৌলতুজ্জামান আনসারী।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, ‘আমি ২০০১ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে এক লাখ সাত হাজার ভোট পেয়ে মাত্র ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে মির্জা আজমের কাছে পরাজিত হয়েছি। পরবর্তী নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা আমাকে মনোনয়ন দিলেও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারিনি। তবে বর্তমানে মেলান্দহ এবং মাদারগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে কোনো প্রকার দ্বন্দ্ব কলহ এবং গ্রুপিং নাই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হলে এবং সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে পারলে আমি অবশ্যই বিপুল ভোটে বিজয়ী হতে পারবো বলে আশাবাদী।’

এ আসনে বিএনপির অপর শক্তিশালী সম্ভাব্য প্রার্থী গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে সর্বদাই  বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে টানা ৩৬ বছর পার করেছি। আমি রাজনীতির পাশাপাশি এলাকার দরিদ্র এবং অসহায় মানুষগুলোকে দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সহযোগিতা করে আসছি। এ ছাড়া বন্যা ও শীতসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় এলাকাবাসীকে দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছি। আমি বিগত দিনে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করতে সর্বদাই সচেষ্ট থেকেছি। এ ছাড়া আমি ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক কাজে দেশ ও বিদেশে ভ্রমণ করে যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা জাতীয় রাজনীতিতে কাজে লাগাতে চাই।

গোলাম রব্বানী আরো বলেন, ‘মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ আসনে বিএনপির ভোট অধিক হলেও যোগ্য প্রার্থী না দেওয়ায় বার বার আসনটি বিএনপির হাতছাড়া হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে এই আসনটি উদ্ধারে প্রার্থী নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবার সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন না বলে আমি বিশ্বাস করি। আসন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলে আমি অবশ্যই নির্বাচিত হবো এবং এ দুটি উপজেলার বেকার সমস্যা সমাধানসহ এলাকার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবো।’

এ আসনে বিএনপির অপর সম্ভাব্য প্রার্থী জামালপুর জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার মো. দৌলতুজ্জামান আনসারী স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী পরিবারের একজন সুশিক্ষিত, ভদ্র ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির মানুষ হিসেবে এলাকায় সমাদৃত। তিনি মেলান্দহ উপজেলার ষোষেরপাড়া ইউনিয়নের ছবিলাপুর  গ্রামের মানুষ। এলাকাটি মেলান্দহ এবং মাদারগঞ্জ উপজেলা দুটির দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত। এ উপজেলা দুটির দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি ইউনিয়নে ইঞ্জিনিয়ার মো. দৌলতুজ্জামান আনসারী একজন জনপ্রিয় নেতা। তবে এ আসনের দুটি উপজেলার বেশির ভাগ ইউনিয়নে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা কিছুটা দুর্বল হলেও সাধারণ ভোটারদের মাঝে ধানের শীষের অসংখ্য কর্মী ও সমর্থক রয়েছে। এ ছাড়া এ আসনে বিএনপির রাজনীতিতে বর্তমানে কোনো অভ্যন্তরীণ কোন্দল নাই। এ জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনমত ও যোগ্যতা যাচাই পূর্বক আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দিলে বিএনপি প্রার্থীর জযের সম্ভাবনা রয়েছে।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মো. দৌলতুজ্জামান আনসারী বলেন, ‘মেলান্দহ এবং মাদারগঞ্জ উপজেলা  দুটির দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি ইউনিয়নসহ উপজেলার অসংখ্য বিএনপি নেতাকর্মী ধানের শীষের মনোনয়নের জন্য বর্তমানে আমার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ। বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীদের অনেকেই এখন আমার সঙ্গে আগাম নির্বাচনী গণসংযোগে মাঠ  চষে বেড়াচ্ছেন। আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি থেকে আমাকে ধানের শীষের মনোনয়ন দিলে জয়ের সম্ভাবনা অধিক বলে আমি আশাবাদী।’

এ আসনে বিএনপির অপর সম্ভাব্য প্রার্থী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, ‘তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হলে এবার এ আসনে আমি  মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’

সিপিবি: আসন্ন নির্বাচনে এ আসন থেকে ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও যুব ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাসান হাফিজুর রহমান সোহেল সিপিবির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে।

জাতীয় পার্টি: মাদারগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক মাস্টার বলেন, ‘বয়স্ক মানুষ হিসেবে আমার নির্বাচন করার কোনো আগ্রহ নেই। এখানে জাতীয় পার্টি থেকে ইতিপূর্বে অনেকেই নির্বাচন করার আগ্রহ দেখালেও তারা এখন আর যোগাযোগ করছেন না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *