রোহিঙ্গা সমস্যার পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার জন্য তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদ্রিম গতকাল সোমবার রাতে ঢাকায় এসেছেন। মূলত বিনালি ইলদ্রিম রোহিঙ্গা সমস্যার মতো আঞ্চলিক বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিলেও ঢাকায় এসে দুই দেশের সম্পর্কের ‘পুরোনো ক্ষত’ মেরামতের পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন কূটনীতিক-বিশ্লেষকেরা। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রশ্নে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে সম্পর্কে তিক্ততা সৃষ্টি করেছিল তুরস্ক।
তিন দিনের সফরের দ্বিতীয় দিনে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদ্রিম আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর দপ্তরে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন। সেখানে দুই দেশের সম্পর্ক জোরদারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। বৈঠক শেষে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে এক দেশকে অন্য দেশের স্বীকৃতি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে দুটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের কথা রয়েছে।
সফরের দ্বিতীয় দিনে আগামীকাল বুধবার বিনালি ইলদ্রিম কক্সবাজারে গিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন। বিকেলে কক্সবাজার থেকে তুরস্কের পথে যাত্রা করবেন।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে ৮৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ৬৩ কোটি ১০ লাখ ডলার। আর তুরস্ক রপ্তানি করেছে ২১ কোটি ২০ লাখ ডলার।
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবীর গতকাল বিকেলে বলেন, ‘বিনালি ইলদ্রিমের এই সফরকে সম্পর্ক স্বাভাবিক উষ্ণতায় ফেরত আনার প্রয়াস হিসেবে দেখা যেতে পারে।’ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রশ্নে তুরস্কের ভূমিকা নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে হুমায়ূন কবীর বলেন, এ মুহূর্তে তুরস্ক অতীত নিয়ে খুব একটা নাড়াচাড়া করতে চায় না। দেশটি সামনের দিকে এগোতে চায়। এ ক্ষেত্রে তুরস্কের উচিত হবে স্বাভাবিক ও সম্মানজনক সম্পর্ক রাখার ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া।
উন্নয়ন সহযোগিতা চুক্তিতে না
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে এই সফরে উন্নয়ন সহযোগিতা চুক্তি সই করতে চায় তুরস্ক। এ জন্য চুক্তির একটি খসড়াও দেশটি দিয়েছে। চুক্তিটি সই হলে বাংলাদেশে তুরস্কের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (টিকা) স্থায়ী দপ্তর খোলার বিষয়টি রয়েছে। ইন্টারনেট ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিশ্বে প্রতিবছর এক বিলিয়ন ডলার বা প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দেয় তুরস্কের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থাটি।