নারীদের ওপর যৌন অপরাধ বেড়ে যাওয়ার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টায় ভারতের মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রশ্ন, ‘যৌনতার ক্ষুধা’ মিটছে না বলেই কি যৌন অপরাধের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে? বিষয়টি খতিয়ে দেখে আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে ভারতের কেন্দ্রীয় ও তামিলনাড়ু রাজ্য সরকারকে এর জবাব জানাতে আদেশ দিয়েছেন আদালত।
প্রতি বছর উদ্বেগজনকভাবে নারীদের ওপর যৌন অপরাধ বেড়ে চলেছে এবং এই জঘন্য অপরাধকে বন্ধ করতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে বলে জানিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার এবং জাতীয় মহিলা কমিশনের কাছে একগুচ্ছ প্রশ্ন রাখলেন মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি এন কিরুবাকরণ।
৬০ বছরের মানসিক ভারসাম্যমীন এক বৃদ্ধাকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত অ্যান্ড্রুজ ও প্রভূর জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি বলেন, ‘গোপনীয়তা রক্ষা, ব্যক্তিত্ব ও সম্মানে আঘাত করা হয় যৌন হেনস্থার মাধ্যমে। অসহায় দুর্গতর মনে এই ঘটনা স্থায়ী একটা ক্ষত ও প্রতিনিয়ত যন্ত্রণার সৃষ্টি করে। পুরুষ-মহিলা প্রত্যেকের নিজেদের শরীরের ওপর অধিকার রয়েছে। ব্যক্তির সম্মতি ছাড়া কখনোই সেই অধিকারে অনধিকার লঙ্ঘন করা যায় না। যৌন হেনস্থার ক্ষেত্রে দুর্গতের প্রতিরোধ সত্ত্বেও জোর করে তাঁর শরীর কলুষিত করা হয়। ’ বিচারপতি আরও বলেন, এধরনের অপরাধীরা মানুষ তো নয়ই, পশুও নয়, কারণ পশুরাও নিজেদের ক্ষেত্রে অনেক সত্।
২০১২ সালে দিল্লিতে চলন্তবাসে নির্ভয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পর ধর্ষণ-আইন কড়া হওয়া সত্ত্বেও যৌন হেনস্থার ঘটনা কীভাবে বেড়েই চলেছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মতপ্রকাশ করেন ওই বিচারপতি। এধরনের অপরাধকে মানসিক ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে পরীক্ষা করে দেখতে হবে বলেও তাঁর মত। এরপরই বেশকিছু প্রশ্ন খতিয়ে দেখে তার জবাব দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারী ও জাতীয় মহিলা কমিশনকে নির্দেশ দেয় আদালত।
বিচারপতি যে প্রশ্নগুলি করেছেন…
১. এধরনের অপরাধ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ কি মদ্যপান?
২. ভ্রূণহত্যা ও কুমারী বিয়ের কারণে যৌনতার হার কমে যাওয়াতেই কি নারীদের ওপর এই অপরাধ বাড়ছে?
৩. সংস্কৃতি, ধর্ম, নৈতিকতার কারণ দেখিয়ে আমাদের সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যৌনতা নিয়ে যে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে, সেই কারণে কি ভারতীয় পুরুষদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে অবদমিত যৌন ক্ষুধা? সে জন্যই কি বাড়ছে যৌন অপরাধ?
৪. যৌনতা নিয়ে সচেতনতার অভাবেই কি কিশোরী ও নারীদের ওপর যৌন অত্যাচার বেড়ে চলেছে?
৫. ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফিক বিষয়বস্তু সহজলভ্য হওয়াতেই কি যৌন অপরাধের বাড়-বাড়ন্ত?
এইসব প্রশ্ন খতিয়ে দেখে এর জবাব সামনের বছর ১০ জানুয়ারির মধ্যে জমা দিতে আদেশ দেন আদালত।
সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া