পথ শিশু যখন মাদকসেবী!

Slider ঢাকা নারী ও শিশু

IMG_9057-01

 

 

 

 

 

 

 

মোস্তাফিজুর রহমান দীপঃ

বিমানবন্দর রেলওয়ে ষ্টেশন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ঠিক বিপরীত দিকে অবস্থিত হওয়ায় ঢাকা বিমান বন্দর সড়ক দিয়ে এখানে সহজে আসা যাওয়া যায়।আর এখানেই হচ্ছে ভয়াবহ মাদক সেবন এবং বিক্রি।

জয়দেবপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেনে ওঠলাম। গন্তব্য হাজী ক্যাম্প।  ঘড়িতে সময় ১০ টা বেজে ৩১ মিনিট। আনুমানিক ৪০ মিনিট পর ট্রেন থেকে নামলাম বিমানবন্দর  ষ্টেশনে। কিছুক্ষণ ষ্টেশনে ট্রেন এর অপেক্ষায় থাকা  অপেক্ষমান যাত্রী,  ভীক্ষুক এবং ব্যাস্ত দোকানদার । হঠাৎ চোখ পড়লো  রেল লাইনে বসে থাকা কিছু পুরুষ এবং মহিলার দিকে।
প্রাথমিক দৃষ্টিকোন থেকে বুঝতে পারলাম এরা  যাত্রী নয়। এদের মধ্যে দুইটি ১০-১২ বছর বয়সি বাচ্চাও আছে।  যাদের পাশে রাখা বস্তা আর বস্তার মুখে দেখা যাচ্ছে প্লাস্টিক এর বোতল। দেখে বোঝাই যাচ্ছে এরা পথ শিশু। মহিলা বসে আছে একটা বস্তা মতো ব্যাগ এর উপর ৫-৭ মিনিট পর্যবেক্ষন করলাম ছেলে টাকে।  ছেলেটা পকেট থেকে মহিলাকে কিছু টাকা দিলো। মহিলা তার বসে থাকা ব্যাগ এর ভিতর থেকে কিছু একটা বের করে ছেলে টার হাতে দিলো। সন্দেহ নিয়ে এগিয়ে যেতেই মহিলা সহ বাকি ৩ জন একেক জন একেক দিকে হাটা শুরু করলো। পিছু নিলাম মহিলার উদ্দেশ্য মহিলার সাথে কথা বলা। মহিলা ষ্টেশন এর গেইট এর দিকে বাহিরের দিকে যাওয়া শুরু করলো।  এর মধ্যেই ট্রেন এসে থামলো ষ্টেশন এ। লোকজন এর ট্রেনে ওঠা নিয়ে শুরু হলো দৌড়াদৌড়ি। ভীড়ের মাঝে হারিয়ে ফেললাম মহিলা কে। ঘটনা এখানেই শেষ হলেও হতে পাড়তো। কৌতুহল কে অসমাপ্ত রেখে ষ্টেশন এর ওভার ব্রিজ ব্যাবহার করে অন্যপ্রান্তের প্লাটফর্ম দিয়ে হাটা শুরু করলাম। উদ্দেশ্য হাজীক্যাম্প।
IMG_9056-01
প্লাটফর্ম দিয়ে হাটতে হাটতে হঠাৎ চোখ পড়লো বাহিরের রাস্তার ডিভাইডার এর দিকে দেখতে পেলাম সেই ১০-১২ বছর বয়সী পথশিশুটি তার সাথে মধ্য বয়সি ২ টি লোক।  খেয়াল করলাম হাতের তলায় কিছু একটা ঘসছে একটি লোক। ছোট ছেলেটি মোড়ানো একটি কাগজ বের করলো।  সেখান থেকে কিছু বের করে পূর্বের লোকটির হাতে দিলো।সে তা আবার হাতের তলায় ঘসতে  শুরু করলো।  তার পর তা সিগারেট এর ভিতর ভরে বাচ্চা ছেলে টির হাতে দিলো ক্যামেরার স্কিনে ব্যাপারটা দেখে ক্যামরা বন্ধ করে এগিয়ে গেলাম। ঘটনাস্থলে পৌছাতে আমার খানিকটা ঘুড়ে যেতে হয়েছে কেননা আমি রাস্তা এবং প্লাটফর্ম এর মাঝখানের গ্রীল  এর  ভীতর থেকে ঘটনাটি পর্যবেক্ষন করছিলাম। ঘুরে যেতে যেতে ততক্ষনে ছোট্ট ছেলেটি ধোয়া গ্রহন করা শুরু করে দিয়েছে। ক্যামেরা হাতে দেখে তারাও দৌড় শুরু করলো।
ঘটনাস্থল এর পাশদিয়ে  রিকশা,সিএনজি,পথচারী রা যাতায়াত করছে।
কিছু কিছু পথচারী নাক চেপে হাটছে।অথচ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাস্তা দূর্গন্ধময় কোন আবর্জনা ও নেই। ধোয়ার গন্ধে বোঝা যাচ্ছে।
তারা এখানে বসে মাদক সেবন করেছে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
জনসচেতনতার অভাবেই আজ এই অবস্থা।
ছোট্ট বাচ্চাটি জানেও না মাদকের ভয়াবহতা কি
?
স্বাভাবিক ভাবে দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করার ফলে তারা সামাজিক ভাবে তাদের অধিকার, সুযোগ সুবিধা গুলো ঠিক মতো পেয়ে থাকে না।  যেই বয়সে তাদের স্কুল এ যাওয়ার কথা সেই বয়সেই তারা ঝরে যায়।  আমাদের সুশীল  সমাজ এর প্রতিনিধিরা প্রতিনিয়ত তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলছে। খোজ নিলে দেখা যাবে তাদের বাসাতেও কাজ করছে এই বয়সী  ছেলে মেয়ে। আমরা অনেক কিছুই বলি করি অনেক কম। মাদক এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করতে গঠিত হয়েছে অসংখ্য সংগঠন, হচ্ছে সেমিনার, সামাজিক গনমাধ্যমে  আসছে মাদক বিরোধী সভা সেমিনার এর ফুটেজ।
অবশ্যই এতে করে মানুষ সচেতন হচ্ছে। কিন্তু এসব পথ শিশুদের সচেতন করা তো দূরে থাক
পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে নাক চেপে তার পরও কেউ কিচ্ছু বলছে না।
আমরা জানি বর্তমান প্রশাসন মাদক এর ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন হওয়া সত্বেও মাদক ব্যাবসা হচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে দরকার জনসচেতনতা। মাদক এর বিরুদ্ধে জনগনের এর ঐক্য বোধ এবং প্রশাসন কে সাহায্যই পারে মাদক এর ভয়াবহতা থেকে সকল শ্রেণীর মানুষ কে রক্ষা করতে সেই সাথে পথ শিশুদের কেও অকালে ঝরে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *