এ জন্যই তিনি মাশরাফি

খেলা টপ নিউজ

untitled-39_157399_0টেস্টে ৩-০ করা গেছে, ওয়ানডেতে ৫-০ নয় কেন! ওয়ানডে সিরিজের শুরু থেকে অমন একটা হাওয়া কিন্তু ছিল। তবে সেটি যতটা সর্বজনে, ততটা বাংলাদেশ ড্রেসিংরুমে না। অন্তত প্রকাশ্যে অত বড় লক্ষ্যের কথা বলতে শোনা যায়নি কাউকে। বরং ‘আমরা হোয়াইটওয়াশের কথা ভাবছি না, পরের ম্যাচটিতে আমাদের সব মনোযোগ’ জাতীয় মুখস্থ বুলি আওড়াতে দেখা গেছে ক্রিকেটারদের। পাঁচ, চার, তিন, দুই…এই কাউন্টডাউন এখন এসে দাঁড়িয়েছে এক-এ। ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকেও কাল তাই সহাস্যে বলতে হলো, ‘এখন তো আর বলতে পারছি না যে একেকটা ম্যাচ ধরে এগোব। কারণ একটাই ম্যাচ বাকি। হ্যাঁ, তাতে আমরা জিততে চাই। সে জন্য যতটা ভালো খেলা প্রয়োজন, তা আমাদের খেলতে হবে।’ ছবি : মীর ফরিদ
অঅ-অ+

তাঁকে খেলানো যেমন হয়েছে, তেমনি আগলে রাখার চিন্তাও করতে হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। সে জন্য গত কয়েক বছরে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে টানা খেলার ঝক্কিতে ফেলা হয়েছে কমই। চোটজর্জর ক্যারিয়ার আরো লম্বা করার জন্য ঘনঘন বিশ্রাম দিয়েই খেলানো হয়েছে এই পেস বোলারকে। বিশেষ করে ২০১৫-র বিশ্বকাপ সামনে রেখে তাঁকে এ বছর কখনো টেস্ট বিবেচনায়ও রাখা হয়নি। ঠিক হয়েছিল, শুধুই সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেলবেন তিনি। কিন্তু সেই ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টিতেও তাঁকে আগলে রেখে ব্যবহার করা হয়েছে। টানা ক্রিকেটের ধকল থেকে নিয়মিতই ছুটি পেয়ে এসেছেন তিনি। গত ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ওভারে নিষ্পত্তি হওয়া পরপর দুটো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিলেন। এর পরই লঙ্কানদের সঙ্গে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি খেলেননি। খেলেননি শেষ ম্যাচও। শুধু দ্বিতীয় ম্যাচটি খেলা মাশরাফি নিয়মিত খেলেননি এশিয়া কাপেও। কারণ ঘরের মাঠে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য সজীব রাখা হচ্ছিল তাঁকে। সেই আসরেও বাংলাদেশ প্রথম দুটো ম্যাচ জিতে পরের রাউন্ড নিশ্চিত করে ফেলার পর হংকং ম্যাচে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল মাশরাফিকে। এবার যখন সামনে আরেকটি বিশ্বকাপ, তখন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয় নিশ্চিত হওয়ার পর বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক বিশ্রামে যাবেন বলেই ধরে নিয়েছিলেন অনেকে। দলীয় পরিমণ্ডলে, এমনকি নির্বাচকরাও তাঁকে বিশ্রাম দেওয়ার আলোচনা করেছিলেন বলে খবর।

এ জন্যই তিনি মাশরাফি যদিও এবার মুখ ফুটে কেউ সেটা মাশরাফিকে বলতেও যাননি। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০১৫-র বিশ্বকাপ তাঁর নেতৃত্বেই খেলতে যাওয়ার কথা বাংলাদেশের। কিন্তু তাঁর যখন-তখন ইনজুরিতে পড়ার দীর্ঘ ইতিহাস থেকে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও অবলীলায় এমন একটি ‘পাদটীকা’ জুড়ে দিতে পারেন, ‘মাশরাফি যেহেতু চোটপ্রবণ…।’ এ অবস্থায় বিশ্রাম নেওয়ার কথা বললে পাছে যদি মাশরাফি অন্য কিছু ভেবে বসেন, তাই দলসংশ্লিষ্ট সবাই খেলা না খেলার ব্যাপারটি ছেড়ে দিয়েছেন তাঁর ওপরই। এ বছর তিনি ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের তিনটি ম্যাচই খেলেছেন। একটি ম্যাচও মিস করেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েও। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩-০ হওয়ার পর তিনি বিশ্রামে যাচ্ছেন বলে যাঁরা অনুমান করেছিলেন, তাঁদের ভুল প্রমাণ করে চতুর্থ ম্যাচেও নেমে পড়েছেন। পঞ্চম ম্যাচ খেলা নিয়ে সংশয়ও কাল দুপুরের সংবাদ সম্মেলনে উড়িয়ে দিতে চাইলেন, ‘এখনো ও রকম কোনো চিন্তাই করিনি।’ কিন্তু এ রকম টানা খেলে যাওয়াটা কি তাঁর ফিটনেস অনুমোদন করছে? সংগত কারণেই প্রশ্নটা উঠেছে। যে প্রশ্নের জবাবে বেরিয়ে এলেন অন্য মাশরাফিও। অন্য রকম এক দায়বোধ থেকেই যে টানা খেলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত তাঁর, ‘সত্যি কথা বলতে কী, টেস্ট যখন খেলছি না, তখন আমার দায়িত্ব হলো ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে ভালোভাবে অংশ নেওয়া। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই খেলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। একেই টেস্ট খেলছি না। তার ওপর ভালো অবস্থায় থেকেও যদি বিশ্রাম নিই, তাহলে সেটা অবিচারই হবে। অন্তত সৎ কোনো সিদ্ধান্ত হবে না।’ নিজের ভেতরেই তৈরি হওয়া সততার দাবি থেকে টানা খেলে যেতে যেতে ফিটনেস নিয়ে বাড়তি আÍবিশ্বাসও পাচ্ছেন, ‘আমি আÍবিশ্বাসী। শেষ ম্যাচটি (চতুর্থ ওয়ানডে) খেলা অবশ্য আমার জন্য খুব কঠিনই ছিল। কারণ দুটো ম্যাচের মাঝখানে মাত্র এক দিনের বিরতি ছিল। তাতেও যখন ম্যাচটি খেলে ফেলতে পেরেছি, তখন আমি আরো আত্মবিশ্বাসী হয়েছি।’ পঞ্চম ও শেষ ওয়ানডের আগে দুই দিনের বিরতি নিশ্চয়ই বিরতিহীন খেলার ক্ষেত্রে আরো প্রত্যয়ী করেছে মাশরাফিকে। বিশ্বকাপে গেলে তো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা আরো কম। কারণ সেখানে ছয়টি গ্রুপ ম্যাচের মধ্যে সর্বনিু দুই ও সর্বোচ্চ ছয় দিনের বিরতি পাবে বাংলাদেশ। এর আগপর্যন্ত সব ঠিকঠাক থাকলে অধিনায়ক হয়েই বিশ্বকাপে যাবেন মাশরাফি। আবার তিনি ‘চোটপ্রবণ’ বলে সাকিব আল হাসানকে তাঁর ডেপুটিও করে রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় ফিট থেকে বিশ্বকাপে যাওয়ার ভাবনায় ‘অধিনায়কত্ব’ নেই বলেই দাবি করলেন মাশরাফি। এ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার অনাগ্রহ প্রকাশ করে বললেন, ‘অধিনায়কত্ব করার জন্য আমি কোনো চ্যালেঞ্জই নিচ্ছি না। আমি বরং খেলার জন্য আলাদা চ্যালেঞ্জ নিতে রাজি। নেতৃত্ব কে দেবে, সে সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড। যে-ই হোক, আমার কাজ হবে পারফর্ম করা। আর এই মুহূর্তে একটাই চ্যালেঞ্জ। সেটি কালকের (আজ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পঞ্চম ওয়ানডে) ম্যাচটি জেতা। কেননা এই ম্যাচে আমিই অবধারিতভাবে অধিনায়কত্ব করব।’ তাতে অধিনায়কত্বের নতুন অভিজ্ঞতাও হবে মাশরাফির। জাতীয় দলের নেতৃত্ব বরাবরই কাঁটার মুকুটই পরিয়েছে তাঁকে, চোট নিয়ে যে বারবার ছিটকে পড়েছেন ক্রিকেট থেকেই! এবার সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে জিতেছেন সিরিজ। বাকি শুধু ৫-০’র মহিমা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *