সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস থ্রীতে পড়ুয়া আমার ছেলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। ইংরেজী ও বাংলা পরীক্ষা শেষ হয়েছে আজ ১২ ডিসেম্বর । পরীক্ষা দিয়ে আসার পর আমি ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম- পরীক্ষা কেমন হলো বাপ?
ছেলের স্পষ্ট জবাব- জানিনা আব্বু।
ছেলে আমার হাতে প্রশ্নপত্র তুলে দিলো, আমি প্রশ্নপত্রের বহর দেখেই থ হয়ে গেলাম। তিন পৃষ্ঠা বিস্তৃত প্রশ্নপত্র! পরীক্ষার সময় ২ না ৩ ঘন্টা, মান ১০০! আর ইংরেজী ও বাংলায় যেসব প্রশ্ন এসেছে সেগুলির সঠিক জবাব আমার ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েও যে জানেনা, এ আমি হলফ করেই বলতে পারি। এমনকি, যে স্কুলে আমার ছেলে পড়ছে সে স্কুলের কোনো শিক্ষকই এ সবগুলো প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেনা।
আমাদেরকে কি স্পষ্টত বলবেন- উদ্দেশ্য কি আপনাদের? বাচ্চাদের উপর এমন অনৈতিক চাপ কেনো দিচ্ছেন?
পড়াশোনা যদি হয় ভীতিকর তাহলে এই পড়ায়, এই শেখায় কি লাভ?
আমার থ্রীতে পড়ুয়া ছেলেকে ইংরেজি পড়াতে গেলে আমাকে ডিকশনারি সাথে নিয়ে বসতে হয়। এই ক্ষুদে ছেলেমেয়েদের পড়বার জন্যে বাজারে বইয়ের দোকানগুলোতে বইয়ের কী রমরমা ব্যবসা! প্রতিটা লাইব্রেরীতেই স্কুল, কলেজের শিক্ষকদের সে কী কদর, সে কী সম্মান, কী দারুণ আড্ডা! হরেক রকম সহায়ক বইয়ের বিশাল এক বোঝা ছোটছোট ছেলেমেয়েদের পীঠে। এইসকল সহায়ক বই- যেমন টেস্ট পেপার, গাইড ইত্যাদির সাহায্য নিয়েই নাকি ক্লাসেও ওদের পড়ানো হয়।
আমার খুব ভাবনা হয়- এইটুকুন ছোট বাচ্চা এতো বই কীভাবে পড়বে! এতো কিছু এই বয়সেই শিখে সে কি করবে, মনে রাখবে কীভাবে?
আমার মনে হচ্ছে, আমাদের সন্তানেরা কোনোএকটা ষড়যন্ত্রের শিকার। এ জাতি, এদেশ খুব সূক্ষ্ম কোনো ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়ে বসে আছে। খুব নীরবে অথচ সবার চোখের সামনেই এদেশকে মেধাশূণ্য করার এক জাল পেতেছে সরকার। দেশে যে হারে লেখাপড়া চলছে, স্কুল কলেজগুলোতে যে হারে প্রাইভেট বাণিজ্য চলছে এসব দেখে খুব সহজেই অনুমান করা যায়, এদেশে শিক্ষিত মানুষের, সচেতন মানুষের আকাল চলছে। প্রায় সকল শিক্ষকেরাই কোন না কোনোভাবে এই বাণিজ্যের সাথে জড়িত।
আমি দিব্যি দেখতে পাচ্ছি- আমাদের সন্তানেরা ঘরভর্তি সার্টিফিকেট থাকা স্বত্বেও তাদের নিজেদের সন্তানদের অ আ ক খও পড়াতে ব্যর্থ হচ্ছে! খুব তাড়াতাড়ি আমরা সার্টিফিকেটধারী অশিক্ষিত একটা জাতি পেতে যাচ্ছি।