এস. এম. মনিরুজ্জামান মিলন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ
আজ ১৪ই ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। পরাজয় সুনিশ্চিত জেনে ১৯৭১ সালের এই দিনে একে একে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল পাকিস্তানি কসাই বাহিনী। এরপর থেকেই শহীদদের স্মরণে দিনটি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
শহীদদের স্মরণে এইদিনে বুকে শোকের প্রতীক- কালো ব্যাজ ধারণ করে মিছিল-মিটিং, তাদের কবর, স্মৃতি বিজড়িত স্মম্ভসমূহে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকেন। বাঙালি জাতিসত্তার ইতিহাসে দিনটি অনেক গুরুত্ব বহন করায় শহীদদের স্মরণে মিছিল-মিটিং, শ্রদ্ধা নিবেদনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির স্বার্থে দিনটিকে সরকারি ছুটির আওতাভুক্ত করার জোর দাবি জানিয়ে আসছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ডসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো।
পূর্বেকার বছরগুলোতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের কর্মসূচিতে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছিল। কিন্তু এবার শহীদদের স্মরণে আয়োজিত কর্মসূচিতে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল একেবারেই শূন্যের কোঠায়।
তবে বাঙালি চেতনাকে স্বমূলে উৎপাটনের ঘৃণ্য চক্রান্ত চলছে না তো? বিষয়টি খানিকের জন্য বেশ ভাবালো। কপালে চিন্তার ভাজ পড়তেই ছুটে চললাম ঠাকুরগাঁও শহরের বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
জেলার অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, হাজীপাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজ ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অন্যদিকে হাজীপাড়া তিনতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়, লাইফ লাইন স্কলার্স স্কুল, কেমব্রীজ স্কুল এন্ড কলেজ সহ বেশকিছু নতুন কিন্টারগার্ডেন স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষার শেষ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোনায় সোহাগা, ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে আজ বোর্ড পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাঙালি জাতীয়তাবোধে আঘাত হানার এই শোকের দিনে পরীক্ষা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা জানান, পরীক্ষা ৩ দিন এগিয়ে ২৮ নভেম্বর শুরু হলেও পূর্বেকার তুলনায় এবছর পরীক্ষার বিষয় অনেকগুলো বেশি। ছুটির সংখ্যাও বেশি হওয়ায় আগেভাগে পরীক্ষা শুরু করেও তেমন সুফল আসেনি। আমরাও চাই শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে। এছাড়া ১৬ই ডিসেম্বরের পূর্বে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করারও একটি অঘোষিত বাধ্যবাধকতা রয়েই গেছে। এছাড়া মহান বিজয় দিবস প্যারেডের মহড়ার জন্য জেলা প্রশাসন একটি দিন চেয়েছেন। সঙ্গত কারণে সার্বিক দিক বিবেচনায় আজকের দিনে পরীক্ষা নেওয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।
দিনটি সরকারি ছুটি নয় তবে আমরা কি পারিনা শিক্ষার্থীদের মাঝে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে? বাংলাদেশের ইতিহাস শিক্ষার্থীদের জানাতে?
কারণ যাই হোক, মানুষ গড়ার কারিগররা যদি নতুন প্রজন্মের মাঝে দেশপ্রেম, দেশের ইতিহাস তুলে ধরতে না পারি তাহলে তারা কিভাবে বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানবে? প্রশ্নটি রইলো প্রতিটি বিবেকবান মানুষের কাছে।