গত রোববার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাছে গৃহকর খাতে বিপুল অর্থ বকেয়া থাকার বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন। চিঠিতে বলা হয়, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কাছে পাওনা গৃহকরের বিল পাঠানো হলেও তারা কর পরিশোধ করছে না। তারা বরাদ্দের অপ্রতুলতার কথা জানাচ্ছে। তাই মন্ত্রণালয়গুলোকে তাদের অধীনে থাকা সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাজেট বরাদ্দের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।
মন্ত্রণালয়ের সচিবদের চিঠি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা। তিনি বলেন, বকেয়া পরিশোধের জন্য সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছে পাঠানো করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, সিটি করপোরেশনের আয়ের মূল উৎস গৃহকর। নগরবাসীর সার্বিক সেবা প্রদানে নিয়োজিত করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ, নগরের আবর্জনা অপসারণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সড়ক আলোকায়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল খনন ও নালা-নর্দমা সংস্কারসহ বিভিন্ন উন্নয়নকাজের অধিকাংশ অর্থ ব্যয় হয় গৃহকর খাতের টাকা দিয়ে।
মন্ত্রণালয়গুলো সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজেট বরাদ্দ দিলে তারা গৃহকর পরিশোধ করবে বলে আশাবাদী মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে টাকা পাওয়া গেলে সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন ও সেবার গতি আরও বাড়বে। এ বিষয়ে তিনি নিজেও মন্ত্রীদের কাছে চিঠি দিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার চিঠিগুলো পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ৩২ মন্ত্রণালয়ের কাছে ২০১৬-১৭ পর্যন্ত গৃহকর খাতে বকেয়া ছিল ১২৮ কোটি ৫৮ লাখ ১৩ হাজার ৫৯১ টাকা। চলতি বছরে এ খাতে পাওনা হচ্ছে ১৩ কোটি ৯৬ লাখ ৩৫ হাজার ১৭২ টাকা। এর মধ্যে ১১টি মন্ত্রণালয়ের কাছে এক কোটি টাকার বেশি গৃহকর বকেয়া রয়েছে।
সিটি করপোরেশন সবচেয়ে বেশি গৃহকর পাবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কাছে, যার পরিমাণ ৮৬ কোটি ১ লাখ টাকা। ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছর থেকে গৃহকর দিতে গড়িমসি করছে রেলওয়ে। গৃহকর পরিশোধের জন্য গত ৩০ নভেম্বর রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হককে চিঠি দেন সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা গৃহকরের বিষয়ে হালনাগাদ তালিকা অনুযায়ী, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে গৃহকর খাতে করপোরেশনের পাওনা ১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা, শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে পাওনা ১২ কোটি ১১ লাখ টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে পাবে ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে ৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে ২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা পাবে সিটি করপোরেশন।
সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে (২০১৬-১৭) গৃহকর খাতে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩০ শতাংশ আদায় করতে পেরেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ৩৪৭ কোটি ৬২ লাখ ১২ হাজার টাকা আদায়ের লক্ষ্য থাকলেও আদায় করা গেছে মাত্র ১০৩ কোটি ৪৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে আদায় করা গেছে ৫০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।