আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির অন্য কোনো সরকারের দুঃস্বপ্ন দেখে লাভ নেই।
তিনি এটাই তার দল আওয়ামী লীগের শেষ কথা বলেও উল্লেখ করেন।
ওবায়দুল কাদের আজ দপুরে রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন মাঠে প্রস্তাবিত বিবেকানন্দ ভবনের নির্মাণ কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। আর বিশ্বের অন্যান্য সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশের মত ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু সরকারের রুটিন ওয়ার্ক করবে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ যারা নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে জড়িত তারা নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে যাবে।
ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনের নির্বাহী কমিটির সভাপতি গৌরগোপাল সাহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ এমপি। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)’র চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান।
এতে অন্যান্যের মধ্যে বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, প্রকৌশলী সারোয়ার কায়নাত মো. নূর, রামকৃষ্ণ মঠের মহারাজ স্বামী অমেয়নন্দ মহারাজ ও স্বামী ধ্রবেশানন্দ মহারাজ বক্তৃতা করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিল তখন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়। তখন আপনার বিবেক কোথায় ছিল?
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালে যখন সংলাপের জন্য গণভবনে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ফোন করেছিলেন তখন আপনার অশালীন বক্তব্য দেশের মানুষ ভূলে যায় নি।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণ করলে আজ আওয়ামী লীগকে এধরনের কথা শুনতে হতো না।
তিনি বলেন, আপনি যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে গণভবনে আসতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্রের ইতিহাস ভিন্ন রকম হতো। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে আপনারাই এ পথে ঠেলে দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনে কোনো দল অংশ গ্রহণ করল বা করল না তার দায় আওয়ামী লীগের নয়। কোনো দলের নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়ার ওপর গণতন্ত্রের চলার পথ নির্ভর করবে না।
কাদের বলেন, বিএনপি গত জাতীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করলেও ইন্টার পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশন (সিপিএ) ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ)’র সম্মেলন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে কোন সমস্যা হয় নি।
বর্তমান সংসদে সরকার ও বিরোধীদলের মধ্যে চেয়ার ছুড়াছুড়ির ঘটনা যেমন ঘটেনি তেমনি অসংসদীয় ভাষার প্রয়োগ হয় নি বলেও উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ওবায়দুল কাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতা আপনারা উপলদ্ধি করুন। মাঝে মাঝে বিছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটে। এ সকল ঘটনার সঙ্গে ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর ও মন্দিরে হামলা হয়। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যদি কোনো হামলা হয় তবে তা হবে রাজনৈতিক।
কাদের বলেন, ভারতের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সম্পর্ক নতুন মাত্রায় রয়েছে। আর এজন্যই সাম্প্রদায়িক অপশক্তির একটি অপপ্রয়াস থাকবেই। তারা নিজেরাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর ও মন্দিরে হামলা চালিয়ে সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখানোর অপচেষ্টা করে ভারতের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ককে বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র করবে।
তিনি বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালানো একটি ফৌজদারী অপরাধ। সরকার এ অপরাধ দমনে সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এ অপরাধের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোন লোক জড়িত থাকলেও তাদেরও রেহাই পাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের হামলার বিচার যেমন শুরু হয়েছে তেমনি রংপুরের ঠাকুরপাড়ার হামলারও বিচার শুরু হবে। এ সকল হামলার সঙ্গে জড়িত কেউই রেহাই পাবে না। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা নিজেদের মাইনরিটি ভাববেন না। কারণ নিজেদের দুর্বল ভাবা একটি অপরাধ। আর এ অপরাধের নাম মৃত্যু।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করে যারা বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক নষ্ট করতে চায় তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। দু’দেশের অবিশ্বাস ও সন্দেহের দেওয়াল ভেঙ্গে গেছে। সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যে সন্দেহের দেওয়াল ভেঙ্গে গেছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা সাম্প্রদায়িক শক্তি ও জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে তারা কখনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বন্ধু হতে পারে না। কারণ যারা সাম্প্রদায়িক শক্তি ও জঙ্গীবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয় তারা কি সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গি নয়? যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে তারা কি বঙ্গবন্ধুর খুনি নয়?
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা দানকারীরা মুখোশ পরে আপনাদের আপন হতে চায়। তাদেরকে আপনাদের চিনতে হবে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন সারাদেশে বিএনপি জামায়াতের হামলার শিকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়ী বাড়ী গিয়েছেন তখন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কোথায় ছিলেন?
হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ভারতীয় সেনা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা একসঙ্গে যুদ্ধ করে জীবন দিয়েছিল। সে সময় মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সেনাদের রক্ত একাকার হয়ে গিয়েছিল। এ সম্পর্কের ভিত্তিতেই ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ সম্পর্ককে সোনালি পর্যায়ে নিয়ে গেছেন।
এর আগে ওবায়দুল কাদের প্রস্তাবিত বিবেকানন্দ ভবনের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। এ সময় হর্ষবর্ধন শ্রিংলাসহ অন্যান্য অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় রামকৃষ্ণ মিশনে ২০০ কেভিএ বৈদ্যুতিক উপ-কেন্দ্রের উদ্ধোধন করেন সারোয়ার কায়নাত মো. নূর এবং মিশন থেকে প্রকাশিত ‘প্রবোধন’ ত্রৈমাসিক পত্রিকার উদ্বোধন করেন কাজী ফিরোজ রশিদ এমপি।