প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেছেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ হতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট প্রায় ৯ লাখ ৬৪ হাজার কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে ‘অভিবাসন কূটনীতি : সাফল্য, সীমাবদ্ধতা ও করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী এতথ্য জানান।
ডিবেট ফর ডেমক্রেসি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রতিপাদ্য উপস্থাপন করেন ডিবেট ফর ডেমক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির, বিএমইটির মহাপরিচালক সেলিম রেজা, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. কে এম মহসিন।
নুরুল ইসলাম বিএসসি আরও বলেছেন, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৭১ হাজার ৪৩৩ জন নারী কর্মী সৌদি আরব গমণ করেন। সরকারের সফল শ্রম কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে সৌদি আরব অধিক সংখ্যক নারী কর্মীর পাশাপাশি তাদের নিকট আত্মীয় পুরুষ কর্মী নিতে সম্মত হয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে গৃহকর্মী নিয়োগের লক্ষে চুক্তি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে জানিয়ে নুরুল ইসলাম বিএসসি অনুষ্ঠানে বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্ভাবনাময় শ্রম বাজার বাংলাদেশের কর্মীদের পুনরায় উন্মুক্ত করার জন্য আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে চলতি সপ্তাহের মধ্যে একটি ফলাফল বেরিয়ে আসতে পারে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নবম জিএফএমডি-এর চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশ ঢাকায় সম্মেলন আয়োজন করে। প্রায় ৭০০ বিদেশী ডেলিগেট ওই সম্মেলে অংশগ্রহণ করে।
অভিবাসন কূটনীতিতে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বিরাট সাফল্য উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, গ্লোবাল কমপ্যাক্ট অন মাইগ্রেশন প্রস্তুতির বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সাথে একযোগে কাজ করছে। এই কম্প্যাক্ট চুড়ান্ত হলে অভিবাসি কর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া আবুধাবী সংলাপ, কলোম্ব প্রসেস, বুদাপেস্ট প্রসেস ইত্যাদিতে এদেশের প্রবাসী কর্মীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদীতে আমাদের মন্ত্রণালয় অগ্রণি ভূমিকা পালন করছে।
তিনি বলেন, বিদেশে কর্মসংস্থানের ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য বিদ্যমান শ্রমবাজার ধরে রাখাসহ আমরা নতুন নতুন সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার অনুসন্ধান করছি। নতুন শ্রমবাজারের সন্ধানে ৫২টি দেশের শ্রম বাজার নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম সমাপ্তির পথে। সম্প্রতি লেবানন ও মরিশাসে শ্রম কল্যাণ উইং স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে ২৭টি দেশের মিশনগুলোতে ৩০টি শ্রম কল্যাণ উইং অভিবাসন সমর্থিত কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী আরও বলেন, সরকারের ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতার ফলে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে সম্পাদিত ও প্রক্রিয়াধীন বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রয়েছে। এর মধ্যে জাপানের সাথে টেকনিক্যাল ইন্টাণর্ নিয়োগের বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মালেশিয়ার সাথে চুক্তির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। কম্বোডিয়ার সাথে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চলতি বছরের মার্চে আইএম জাপানের সাথে সমঝোতা চুক্তি (এমওএইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে কাতার-বাংলাদেশের মধ্যে এমওএইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং রাশিয়ার সাথে চুক্তির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে মন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করেন।
পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় নিরাপদ শ্রম অভিবাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু উল্লেখ করে বক্তারা গোলটেবিলে বলেছেন, বিভিন্ন শ্রম বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়া, শ্রমিকদের ফিরিয়ে দেয়া, শর্ত ভেঙে কম বেতন দেয়া, দূর্ঘটনায় মৃত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ না দেয়া, নারী অভিবাসীদের সুরক্ষা নিশ্চিত না হওয়াসহ বিবিধ সমস্যা মোকাবেলার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। এসকল সমস্যা সমাধোনে অভিবাসন কূটনীতি জোরদারের বিকল্প নেই। অভিবাসন কূটনীতি জোরদার হলে জনশক্তি প্রেরণ যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি অভিবাসীদের সার্বিক সুরক্ষাও নিশ্চিত করা যাবে বলে মত প্রকাশ করেন বক্তারা।