সংবাদ সম্মেলন শেষ। একটু আগেও যে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম ছিল লোকে লোকারণ্য, সেটিই এখন খাঁ খাঁ করছে। ফাঁকা মাঠটা ধরে মাশরাফি বিন মুর্তজা ড্রেসিংরুমে যাবেন, সেখানে তাঁর অপেক্ষায় দল। দলের হোটেলে ফেরার তাড়া। কিন্তু স্বস্তিতে ড্রেসিংরুমে ফিরবেন, সেই উপায় নেই। সংবাদ সম্মেলন কক্ষ থেকে বেরোনো মাত্রই মাশরাফিকে ঘিরে ধরল এক দল সমর্থক।
একটার পর একটা ছবি-সেলফির আবদার মিটিয়ে আর কুলিয়ে উঠতে পারলেন না! নিরুপায় মাশরাফি সমর্থকদের ভিড় গলে দিলেন দৌড়! এক দৌড়ে ড্রেসিংরুম। বাংলাদেশের আর কোনো খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে এ দৃশ্যটা দেখা মিলবে না, সেটি হলফ করে বলা যায়। মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তায় মাশরাফির তুলনা মাশরাফিই।
কাল রংপুর রাইডার্সকে শিরোপা জিতিয়ে অধিনায়ক মাশরাফি নিজেকে চেনালেন নতুনভাবে। যে দলটার সংশয় ছিল শেষ চারে ওঠা, তারাই কিনা দোর্দণ্ড প্রতাপে জিতে নিল শিরোপা। এই সাফল্যের গল্পে আসবে ক্রিস গেইল, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, মোহাম্মদ মিঠুনসহ আরও অনেকের নাম। তবে সবাইকে ছাপিয়ে যাবেন অধিনায়ক মাশরাফি। বোলিংয়ে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কখনো দলকে জিতিয়েছেন ব্যাট হাতেও। এমনকি ফিল্ডিংয়েও তিনি দুর্দান্ত। কাল লং অন থেকে বাঁ দিকে দৌড়ে যেভাবে এভিন লুইসের ক্যাচটা নিয়েছেন, অবিশ্বাস্য! টুর্নামেন্টে তাঁর যে অলরাউন্ড পারফরম্যান্স—মাশরাফি যেন ফিরিয়ে আনলেন ক্যারিয়ারের ঊষালগ্নের ছবি।
এই সাফল্য একটা আফসোসও তৈরি করেছে ক্রিকেটানুরাগীদের মনে, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি কেন ছাড়লেন মাশরাফি! যদিও সংস্করণটা তাঁর মোটেও পছন্দ নয়। এ সংস্করণে তাঁর সাফল্য অবশ্য ঈর্ষণীয়। অধিনায়ক হিসেবে বিপিএলের পাঁচ আসরের চারটিতেই জিতেছেন। সাফল্যের বিচারে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ না বলে ‘মাশরাফি প্রিমিয়ার লিগ’ বললেও মন্দ হয় না! টি-টোয়েন্টি নিয়ে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ নয়, মাশরাফির কথা, তিনি যখন যেখানেই খেলেন, উজাড় করে দেন নিজেকে।
এবার বিপিএলে ব্যক্তিগত ও দলের উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের প্রশ্নটা চলে আসছে সামনে—বাংলাদেশ দলের হয়ে আবার খেলবেন ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে? মাশরাফির স্পষ্ট জবাব, ‘ফেরার চিন্তা করছি না। আমার আজেবাজে জিদ নেই। টি-টোয়েন্টি পছন্দ করি না কিংবা খেলতে পছন্দ করি না—এসব যদি চিন্তা করে খেলি, তাহলে দলের জন্য সেটা ভালো নয়। যারা তরুণ ক্রিকেটার আছে, তারাও ভুল বার্তা পাবে। সব সময়ই চেষ্টা করি যেটা খেলি, যেখানেই খেলি আমার শতভাগ দিতে। কী হবে, কত দূরে যাব—এসব ভাবি না।’
মাঠের খেলায় সফল হলেও মাশরাফি একটা জায়গায় বেশ পিছিয়ে। টস জেতেন কম। নিজেও অনেক সময় বলেন, ‘আমার টস–ভাগ্য খারাপ!’ কালও ফাইনালে টস হারলেন সাকিব আল হাসানের কাছে। তবে এটা নিয়ে যে তাঁর মোটেও আফসোস নেই, তাঁর কথাতেই বোঝা গেল, ‘চেয়েছি টস হারতে। টস হারাতে ভালো হয়েছে! টস হারলে ভেতরে একটা অনুভূতি আসে।’
কী অনুভূতি আসে, সেটি অবশ্য বলেননি। তবে আরেকটা অনুভূতির কথা জানা গেল। এবার বিপিএলের সৌজন্যে দেখা গেছে মাশরাফির ‘শূন্য’ নাম্বার জার্সি। সংখ্যাটার প্রতি বেশ মায়া তৈরি হয়েছে। সামনে বাংলাদেশের হয়ে তাঁর বিখ্যাত ‘২’ নাম্বার জার্সি পরে খেলবেন, নাকি ‘০’ অব্যাহত রাখবেন, একটু দ্বিধায় অধিনায়ক!