কয়েক মিনিট আগেই দুপুরের খাবার খাওয়া শেষ করেছেন মামুন (ছদ্মনাম)। খাওয়া শেষ করে অফিসের ডেস্কে এসেই দেখেন, এক সহকর্মী বাসায় রান্না করা খাবার নিয়ে খেতে যাচ্ছেন। ওই খাবারগুলোও তাঁর পছন্দের। একসঙ্গে খেতে যাওয়ার অনুরোধ করতেই রাজি হয়ে যান মামুন।
আরও কিছু সময় পর পাশের ডেস্কের অন্য এক সহকর্মীকে মিষ্টি খেতে দেখে মামুনেরও তা খেতে মন চাইছে। সারাক্ষণ খেতে চাওয়ার এ প্রবণতা মামুনের মতো অনেকের মধ্যে দেখা যায়।
অনেকের কেন সারাক্ষণ খেতে ইচ্ছা হয়? বারডেম জেনারেল হাসপাতালের খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগের প্রধান ও প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ বলেন, ‘এটা হরমোনের বিষয়। সেন্ট্রাল নার্ভস সিস্টেমের কারণে এটি হয়ে থাকে। ব্যবস্থাটি তাঁদের খাওয়ার চাহিদা বাড়িয়ে দেয়।’
কিন্তু সবার আবার হরমোনের কারণে এটা হয়, বলা ঠিক না। সমাজে একধরনের মানুষ রয়েছেন, যাঁরা সব সময় বেশি খেতে চান। তাঁরা ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য খান না। কোনো খাবার দেখলেই খেতে চান। এ ধরনের মানুষ খাবারের পুষ্টির কথা বিবেচনা করেন না। সারাক্ষণ এই খেতে চাওয়ার প্রবণতা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
শামসুন্নাহার নাহিদ বলেন, সারাক্ষণ যাঁদের খেতে মন চায়, তাঁদের বিষয়টি মানসিক। এটা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। মনকে বলা উচিত, আর খাব না। যদি তা না করতে পারেন, তাহলে সম্ভব হলে ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম দেশি ও সবুজ ফল খাওয়ার অভ্যাস করা যেতে পারে। সবার আগে জানতে হবে কোন খাবারে কেমন পুষ্টি আছে। যেমন একটা পাকা কলায় যে পরিমাণ পুষ্টি পাবেন, একটা পেয়ারায় আপনি ততটা পুষ্টি পাবেন না। দেশীয় ফল ছাড়াও সবুজ আপেল, সবুজ আঙুর খেলে সারাক্ষণ খেতে চাওয়ার ইচ্ছা কিছুটা কমবে। অনেক সময় কম ক্যালরির খাবার খেলে সারাক্ষণ ক্ষুধা লাগে। কারণ কম ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয় না। তাই খিদে পায় বেশি। ফাস্টফুডও খেতে চাওয়ার ইচ্ছেটা বাড়িয়ে দেয়। ফাস্টফুড কম খাওয়া উচিত। বিভিন্ন সবজির সালাদ, সবজির স্যুপ খেলে ভালো পুষ্টি পাওয়া যায়।
অনেকে পোলাও বেশ পছন্দ করে। পোলাওয়ে খুব বেশি পুষ্টি নেই। প্রতি বেলায় বা প্রতিদিন পোলাও খেলে কিছু সময় পরপর খাবার খাওয়ার ইচ্ছে বাড়িয়ে দেয়। কারও যদি ভাত খেতে ভালো লাগে, তাহলে সাদা ভাত খেতে পারেন। সাদা ভাতে পোলাওয়ের চেয়ে বেশি ক্যালরি। সারাক্ষণ খেতে থাকলে শারীরিক বেশ কিছু সমস্যা হতে থাকে। যেমন দাঁতের ক্ষতি, হজমের ক্ষমতা কমে যাওয়া, বমি ও পেটব্যথা।
পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ বলেন, প্রত্যেক বেলার খাবারকে আপনি তিনবার ভেঙে ভেঙে খেতে পারেন। তিন বেলার খাবারকে আপনি নয়বার খান। মানে প্রতি বেলার খাবারকে তিন বা তার বেশিবার ভাগ করে খেলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সারাক্ষণ খেতে চাওয়ার প্রবণতা কিছুটা হলেও কমতে পারে।